দিদির কথায় ভাইয়েদের গোঁসা হয়েছিল। দিদিকে ফোন করে সে কথা জানিয়েওছিলেন কেউ কেউ। কয়েক জনের মান ভাঙাতে দিদি নিজেই ফোন করেছিলেন। কিন্তু, এ বার প্রকাশ্যে মাইক নিয়েই এক ভাই নাম না করে দিদির বিরুদ্ধে সরব হলেন। সেই ভাই বুঝিয়ে দিলেন, আসলে যতটা না জানার ভান দিদি করছেন, বিষয়টি ঠিক তেমন নয়। যে সময় নারদ নিউজ তার স্টিং অপারেশন করেছিল, তখন এই ভাই ছিলেন দিদির দলের দু’নম্বর ব্যক্তি। তিনি মুকুল রায়।
মঙ্গলবার কালনার অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামের সভায় তিনি বলেন, ‘‘ঠিক নির্বাচনের আগে একটা নতুন জিনিসের আমদানি হল। কী না, স্টিং কাণ্ড! স্টিং কাণ্ডের মধ্যে এ টাকা নিচ্ছে, ও টাকা নিচ্ছে। আমারও ছবি দেখা গিয়েছে। তবে আমাকে টাকা নিতে দেখা যায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন দলীয় পর্যায়ে তদন্ত হবে। আমি এটা অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে বলে যেতে চাই, তাঁরা কেউ ব্যক্তিগত কাজে, নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বা নিজের সুবিধের জন্য এক পয়সা গ্রহণ করেননি। তদন্ত হোক, তদন্তে প্রমাণিত হবে।’’
অথচ এই মুকুল রায়ই নারদ-নিউজের ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর পরই সাংবাদিক সম্মেলনে তাকে বিকৃত বলে দাবি করেছিলেন। গত ১৪ মার্চ বিকালের সেই বৈঠকে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ২০১৪ সাল থেকে যে স্টিং অপারেশন চলছে বলে দাবি করা হচ্ছে সেটা ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগেই কেন প্রকাশ করা হল! তার পরেই তিনি সংযোজন করেছিলেন, ‘‘এটাই প্রমাণ করছে গোটাটা একটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। দলের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এমনকী, বিরোধীদের করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফার দাবিও সে দিন উড়িয়ে দিয়েছিলেন মুকুল।
কিন্তু এর পরেই ভাগীরথী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। যে দিদি প্রথমে নারদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শুরুতে বলেছিলেন, ‘‘কুৎসা করছে, গোল্লা পাবে’’, বলেছিলেন ‘‘ভিডিওটা ভেজাল’’, সেই নারদ কাণ্ড নিয়ে দলের অন্দরে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। শুধু তাই নয়, আরও এক ধাপ এগিয়ে গত রবিবার সন্ধ্যায় বৌবাজারের খোলা মঞ্চ থেকে দিদি জানিয়ে দেন, আগে জানতে পারলে ভিডিওতে যাঁদের দেখা গিয়েছে তাঁদের টিকিটই দিতেন না! তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ করে একটা বেআইনি কোম্পানিকে এনে কেন এ সব করছ? ভোট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। আগে জানলে নিশ্চয়ই ভাবতাম। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণার পর তো আর বদলাতে পারি না।’’
মমতার এই ভাষণ শোনার পরেই ক্ষেপে ওঠেন নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত তাঁর সতীর্থেরা। ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে মমতা তখন তাঁদের জানান, মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছে কথাটা। কিন্তু, ভাইয়েরা সে কথায় যে সন্তুষ্ট হননি, তার প্রমাণ এ দিনের মুকুল-উবাচ। রাজনৈতিক মহলের একটা অংশের ব্যাখ্যা, কেউ যে ব্যক্তিগত কাজে বা নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে টাকা নেননি, এ কথা বলে মুকুল আসলে বোঝাতে চেয়েছেন, দলীয় কাজে সকলে টাকা নিয়েছে এবং দলনেত্রী সবটাই জানতেন। জনতার নাড়ির গতি টের পেয়েই দিদি ভাইয়েদের কাঁধে বন্দুক রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, মুকুল এ দিন সেই বন্দুকের নল ঠিক উল্টো দিকেই ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছেন।