যুদ্ধে চাই ক্লাব সেনাদের, ঘনঘন বৈঠকে তৃণমূল প্রার্থী

যুদ্ধটা এ বার কঠিন। তাই নন্দীগ্রামের জেলাতেও তৃণমূলের ভরসা ক্লাব-বাহিনী। আগামী ৫ মে পূর্ব মেদিনীপুরে ভোট। তার আগে শনিবার পূর্ব চণ্ডীপুর বিধানসভা এলাকার প্রায় সাড়ে পাঁচশো ক্লাবের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করলেন তৃণমূল প্রার্থী অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য। ভোটে ‘পাশে থাকা’র আর্জি জানালেন।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৮
Share:

যুদ্ধটা এ বার কঠিন। তাই নন্দীগ্রামের জেলাতেও তৃণমূলের ভরসা ক্লাব-বাহিনী।

Advertisement

আগামী ৫ মে পূর্ব মেদিনীপুরে ভোট। তার আগে শনিবার পূর্ব চণ্ডীপুর বিধানসভা এলাকার প্রায় সাড়ে পাঁচশো ক্লাবের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করলেন তৃণমূল প্রার্থী অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য। ভোটে ‘পাশে থাকা’র আর্জি জানালেন। কী ভাবে পাশে থাকতে হবে, তার কিছু নমুনাও দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। যেমন, ১ মে চণ্ডীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় ক্লাবের ব্যানার নিয়ে সদস্যদের হাজির থাকতে বলা হয়েছে। যে সব ক্লাবের ব্যান্ড পার্টি রয়েছে, তাদের আবার বাজনার সরঞ্জাম নিয়েই সভায় যেতে বলা হয়েছে।

তৃণমূল সূত্রে খবর, চণ্ডীপুর বাজার সংলগ্ন বেসরকারি অতিথিশালার সভাঘরে এ দিন মূলত চণ্ডীপুর ও ভগবানপুর ১ ব্লকের বিভিন্ন ক্লাবের হাজারের বেশি প্রতিনিধিকে ডাকা হয়েছিল। বৈঠকের আয়োজক ছিল ‘চণ্ডীপুর ও ভগবানপুর-১ ব্লক অল ক্লাব ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’। প্রায় সাড়ে পাঁচশো ক্লাবের মধ্যে তৃণমূল আমলে অনুদান পেয়েছে, এমন ক্লাবই বেশি। অনুদান জোটেনি এমন কিছু ক্লাবের প্রতিনিধিরাও এসেছিলেন। তাঁদের কয়েকজন আবার অনুদান না পাওয়া নিয়ে অনুযোগ করেন। তখন তৃণমূল নেতাদের আশ্বাস দিতে শোনা যায়, ‘‘এই সরকার যদি ফের ক্ষমতায় আসে তাহলে আগামী দিনে আরও বেশি সাহায্য পাওয়া যাবে।’’ তৃণমূলেরই একটি সূত্রে খবর, এ দিন প্রথম নয়, দু’সপ্তাহ আগেও একই জায়গায় ক্লাব কর্তাদের নিয়ে এক দফা বৈঠক করেছেন অমিয়বাবুরা। সে দিন নাকি ক্লাবগুলিকে উপহার হিসেবে দেওয়াল ঘড়িও দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

অনুদান পাওয়া ক্লাবগুলির থেকে প্রতিদান চাওয়ার ছবি এ বার ভোটে বারবারই দেখা গিয়েছে। মেদিনীপুরে তৃণমূল প্রার্থী মৃগেন মাইতি অনুদানপ্রাপ্ত ৫০টি ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে ‘পাশে থাকা’র আর্জি জানিয়েছিলেন। হুগলির হরিপালে আবার অনুদানপ্রাপ্ত বেশ কিছু ক্লাবকে তাঁর সমর্থনে ফ্লেক্স বানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী বেচারাম মান্না। অনুদানপ্রাপ্ত ক্লাবগুলিকে নিয়ে সম্মেলন ডেকে ভোটের আগে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন মানিকচকের তৃণমূল প্রার্থী সাবিত্রী মিত্র। খাস কলকাতাতেও কর্মিসভায় তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্লাবগুলির উদ্দেশে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ক্লাবগুলিকে রাজ্য সরকার অনুদান দিয়েছে উন্নয়নের জন্য। আমরা তাদের বলছি না যে তৃণমূলের পতাকা ধরো। কিন্তু নির্বাচনে আপনাদের দেখিয়ে দিতে হবে, বাংলায় তৃণমূল কত জনসমর্থন পেতে পারে!’’

ক্লাবে-ক্লাবে ঢালাও অনুদান-বিলির পর্ব মমতা সরকার শুরু করেছিল ২০১২-র জানুয়ারিতে। নবান্ন-সূত্রের খবর, প্রথম বার ৭৮১টি ক্লাবের পিছনে সাড়ে পনেরো কোটি টাকা ঢালা হয়েছিল। ২০১৩ সালে দাতব্যের বহর দাঁড়ায় চল্লিশ কোটিতে। বরাদ্দের অঙ্ক প্রথম বছর ক্লাবপিছু দু’লাখ, পরের চার বছর এক লাখ। ২০১৩ সালে দু’হাজার ক্লাব অনুদান পায়। কোষাগার থেকে বেরিয়ে যায় অন্তত ৬৪ কোটি টাকা। এ বছর পরিমাণটা দেড়শো কোটি ছাপিয়ে গিয়েছে। বিরোধীদের মতে, জনগণের করের টাকা এ ভাবে বিলিয়ে ‘আনুগত্য’ ও ‘সমর্থন’ কেনার চেষ্টা করেছে শাসকদল। তাই ভোটের মুখে তারা পাল্টা কিছু চাইবে, এটাই স্বাভাবিক।

চণ্ডীপুরের ক্লাব-বৈঠক নিয়েও সরব হয়েছে বিরোধীরা। এই কেন্দ্রের জোট প্রার্থী সিপিএমের মঙ্গলেন্দু প্রধানের অভিযোগ, ‘‘ক্লাবগুলিকে নানা সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের কাজে ব্যবহার করতে চাইছে তৃণমূল।’’ বৈঠকে হাজির বৃন্দাবনপুরের এক ক্লাব কর্তাও বলেন, ‘’এক বছর আগে আমরা ২ লক্ষ টাকা পেয়েছি। এ দিন বৈঠকে বলা হয়েছে, তৃণমূল সরকার ফের ক্ষমতায় এলে আগামীতে আরও অনেক সাহায্য পাওয়া যাবে।’’

অমিয়বাবু অবশ্য এ সব মানছেন না। তাঁর দাবি, ক্লাবগুলিকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে ঠিকই। তবে সেখানে ভোট-সংক্রান্ত কথাবার্তা হয়নি। তা হলে ভোটের ১২ দিন আগে এতগুলি ক্লাবের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকের প্রয়োজনটা কী পড়ল? এ বার অমিয়বাবুর জবাব, ‘‘মূলত সামাজিক উন্নয়নের কাজে সাহায্য করার জন্য ক্লাবগুলিকে নিয়ে একটা সোসাইটি করা হয়েছে। আমি সোসাইটির সম্পাদক। এ দিন বৈঠকেও আগামী দিনে উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’’

পূর্ব মেদিনীপুর এখন তৃণমূলের গড়। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের হাত ধরে এই জেলায় পরিবর্তনের শুরুটা হয়েছিল ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে। তারপর থেকে প্রতিটি ভোটে দেখা গিয়েছে ঘাসফুলের জয়জয়কার। ২০১১-তে জেলার ১৬টি আসনেই জিতেছে তৃণমূল। ২০১৪-র লোকসভা ভোটের অঙ্কেও জেলায় নিরঙ্কুশ তৃণমূল। তারপরেও কেন ভোট বৈতরণী পেরোতে ক্লাবগুলিকে পাশে লাগছে? জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, এ বার বাম-কংগ্রেস জোট হওয়ায় এমনিতেই বিরোধীদের শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে। তার উপর চণ্ডীপুর ব্লকে

বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত রয়েছে বামেদের দখলে। শাসক দলের মাথাব্যথা আরও বাড়িয়েছে অমিয়বাবুর সঙ্গে তৃণমূলের চণ্ডীপুর ব্লক সভাপতি অশ্বিনী দাসের কোন্দল। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধজয়ে ক্লাবগুলিই তৃণমূলের ভরসা হয়ে উঠছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement