নারদ কাণ্ড নিয়ে তৃণমূলের অবস্থান এখনও ‘গেছো দাদার’ মতো। এই বলছে, ভিডিও ভেজাল তো পর দিন জানাচ্ছে, ‘‘ঘুষ নয় ওটা অনুদান ছিল।’’ আবার রাত ফুরোতেই বলা হচ্ছে এ ব্যাপারে অভ্যন্তরীণ দলীয় তদন্ত হবে।
কিন্তু লোকসভার নীতি কমিটির সদস্য অর্জুন মেঘওয়াল শুক্রবার কলকাতায় এসে জানিয়ে দিলেন, ‘‘ব্যাপারটা সোজাসাপ্টা। স্টিং-কাণ্ডের তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে, অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে। সেই কারণেই নারদ কাণ্ডে জড়িত তৃণমূলের পাঁচ সাংসদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘তদন্তে শেষ পর্যন্ত দোষী প্রমাণিত হলে লোকসভা থেকে তাঁদের সাসপেন্ড বা বহিষ্কার করা হতে পারে।’’
নারদ কাণ্ড ফাঁস হয়েছিল ১৪ মার্চ। তার দু’দিন পর বিরোধীদের দাবি মেনে এ ব্যাপারে তদন্তের ভার লোকসভার নীতি কমিটির হাতে তুলে দিয়েছিলেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। স্পিকারের সুপারিশ সত্ত্বেও বিজেপি-র অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে তদন্ত শুরু হতে দেরি হয়েছিল। কিন্তু এখন তা গতি পেয়েছে। ওই কেলেঙ্কারিতে জড়িত লোকসভার পাঁচ জন তৃণমূল সাংসদের কাছে কমিটি দশ দিন আগেই নোটিস পাঠিয়ে দিয়েছে। তা জানাজানি হয়েছে গত কাল। তার পরই এ দিন কলকাতায় এসে মুখ খোলেন লোকসভায় বিজেপি-র মুখ্য সচেতক তথা নীতি কমিটির অন্যতম সদস্য অর্জুন।
কমিটির অন্য সদস্যরাও ঘরোয়া আলোচনায় জানাচ্ছেন, নারদের স্টিং অপারেশনের ফুটেজ প্রথমেই ফরেন্সিক তদন্তের জন্য পাঠানো যেত। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে সেটা দেখে মনে হয়েছে, ফুটেজ জাল নয়। তা ছাড়া তৃণমূলের তরফেও আদালতে বলা হয়েছে ঘুষ নয়, অনুদান নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ টাকা নেওয়ার বিষয়টি তাঁরা মেনে নিচ্ছেন। সেই কারণেই অভিযুক্ত সাংসদদের নোটিস পাঠানো হয়েছে। তাঁরা যদি জবাবে ওই ফুটেজকে মিথ্যা বলে দাবি করেন, সঙ্গে সঙ্গে সেটা ফরেন্সিক তদন্তের জন্য পাঠানো হবে। তা হলেই ‘দুধ কা দুধ, পানি কা পানি’ হয়ে যাবে। আর অভিযুক্ত সাংসদরা ফুটেজের সত্যতা স্বীকার করে নিলে এখনই তা ফরেন্সিক তদন্তে পাঠানোর দরকার হবে না। কমিটির সদস্যদের মতে, অনুদান নেওয়ার যুক্তি দিয়ে তৃণমূল সাংসদেরা পুরোপুরি দায় এড়াতে পারেন না। ফুটেজ দেখা যাচ্ছে যে, কাজ পাইয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া অনুদান নেওয়ার একটা আইনি পদ্ধতি আছে। আইন মোতাবেক ২০ হাজার টাকার বেশি অনুদান রাজনৈতিক দলগুলি নগদে নিতে পারে না। নিলে তার রসিদ দিতে হবে। ওই টাকা দলের কাছে জমা পড়েছে কি না, পড়ে থাকলে কবে জমা পড়েছে এবং কী ভাবে তা খরচ হয়েছে, সব হিসাব কর দফতরে এবং নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে সেই সব হিসাব জমা পড়েছে কি না, প্রয়োজনে অভিযুক্ত সাংসদদের কাছে তা জানতে চাইবে নীতি কমিটি।
নারদ কাণ্ড নিয়ে গোড়ায় নীতি কমিটির তদন্তে তৃণমূল আপত্তি করলেও পরে স্বাগত জানিয়েছিল। লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছিলেন,‘‘সংসদীয় গণতন্ত্রে আমাদের আস্থা রয়েছে। তাই নীতি কমিটির তদন্ত নিয়ে আপত্তির প্রশ্ন নেই।’’ সুদীপবাবুকে এ দিন অর্জুনের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘লোকসভার নীতি কমিটির সদস্য হয়ে মেঘওয়াল যে ভাবে বাইরে মুখ খুলছেন, তা ঠিক নয়। এটা সংসদীয় রীতি বিরুদ্ধ কাজ। সংসদের স্বাধিকার রক্ষা কমিটিতে বিষয়টি আনা যায় কি না দেখছি।’’