মৃণালের হাত ধরে নিত্য বললেন, প্রচারেও বেরোব

আজ শেষমেশ তিনি মনোনয়ন তুলে নেন কি না, নিলেও কখন, তা হয়তো নিশ্চিত নয়। কিন্তু তৃণমূলের মার খেয়ে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি থাকা সিপিএম প্রার্থী মৃণাল বিশ্বাসকে দেখে এলেন কৃষ্ণগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী নিত্যগোপাল মণ্ডল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০০
Share:

আজ শেষমেশ তিনি মনোনয়ন তুলে নেন কি না, নিলেও কখন, তা হয়তো নিশ্চিত নয়। কিন্তু তৃণমূলের মার খেয়ে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি থাকা সিপিএম প্রার্থী মৃণাল বিশ্বাসকে দেখে এলেন কৃষ্ণগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী নিত্যগোপাল মণ্ডল।

Advertisement

শুধু দেখা করাই নয়, কথা দিয়ে এলেন, দল বললে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়ে মৃণালের হয়ে প্রচারেও বেরোবেন। এর ফলে এই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী নিয়ে দুই জোট-শরিকের মধ্যে জটিলতা কাটার সম্ভাবনা অনেকটাই তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে দু’পক্ষই।

কৃষ্ণগঞ্জে প্রার্থী বিতর্কে এত দি‌ন নিত্যগোপালের পাশে ছিলেন জেলা কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু মঙ্গলবার তৃণমূলের হাতে সিপিএম প্রার্থী মার খাওয়ার পর তাঁদেরও একটা বড় অংশ আগের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করেছেন। কংগ্রেস সূত্রের দাবি, ওই রাতেই দলের ঘোষিত প্রার্থী নিত্যগোপালকে ফোন করে জেলা সভাপতি অসীম সাহা বলেন, কর্মীদের একটা বড় অংশ যেহেতু তাঁকে চাইছেন না, তাই প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করবেন না লড়বেন, সেটা সম্পুর্ণ তাঁর ব্যাপার।

Advertisement

বুধবারও অসীম বলেন, ‘‘কৃষ্ণগঞ্জ নিয়ে আমার সঙ্গে প্রদেশ সভাপতির কথা হয়েছে। আমি তাঁকে জানিয়ে দিয়েছি, দলের কর্মীরা নিত্যগোপাল মণ্ডলকে মেনে নিতে পারছেন ‌না। এখন প্রার্থীকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তিনি কি করবেন।’’

কৃষ্ণগঞ্জে কংগ্রেস দু’বার প্রার্থী বদলা করার পরেও গোষ্ঠী-কোন্দল থামাতে পারেনি। নিত্যকে মানতে চাইছেন না হাঁসখালির নেতাকর্মীরা। শেষে দলেরই একাংশের আর্জিতে সাড়া দিয়ে সিপিএম মৃণালের নাম ঘোষণা করে। ডিওয়াইএফের জেলা সভাপতি মৃণাল প্রার্থী হওয়ায় বাম ছাত্র-যুবরা যেমন চেগে উঠেছেন, তাঁকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারে যেতে শুরু করেছেন কংগ্রেস কর্মীরাও। তবে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক সভাপতি শঙ্কর সরকার ও তাঁর অনুগামীরা এত দিন নিত্যর পাশেই ছিলেন।

এরই মধ্যে মৃণাল তৃণমূলের হাতে মার খেয়ে যাওয়ায় সব হিসেব পাল্টে যায়। এর আগে ‘বিদ্রোহী’ কর্মীদের সাসপেন্ড করার হুমকি দিয়েছিলেন যে জেলা সভাপতি, তিনিই নিত্যর কোর্টে বল ঠেলে ঝাড়া হাত-পা হয়ে যান। এমনকী কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক সভাপতি শঙ্কর সরকারও এ দিন বলেন, ‘‘মানুষ যে তৃণমূলকে হারাতে চাইছে, এটাও মাথায় রাখতে হবে। এমন কিছু করা যাবে না যাতে তৃণমূলের সুবিধা হয়ে যায়। দেখি, জেলা নেতৃত্ব কী বলেন।’’ অর্থাৎ, নিত্যকে কাঁধে বয়ে তিনিও যে আর ভরাডুবির দায় নিতে চাইছেন না, সেটাই ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেন শঙ্কর।

কেন রাতিরাতি ডিগবাজি খেলেন কংগ্রেস নেতারা?

দলের একাংশের দাবি, মৃণাল মার খাওয়ার পরে যাবতীয় সহানুভূতি তাঁর দিকেই চলে গিয়েছে। এখন তাঁর পথে কাঁটা হলে জেলায় সার্বিক ভাবে তার প্রভাব পড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে জোট। মানুষের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে। কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্ব সেই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।

হাওয়া যে অন্য খাতে বইছে, তা বুঝে গিয়েছেন নিত্যগোপাল নিজেও। এবং তা বুঝেই এ দিন হাসপাতালে এসেছেন তিনি। মঙ্গলবার বিজেপি প্রার্থী সুজিত বিশ্বাস হাসপাতালে এসে মৃণালের সঙ্গে দেখা করেছেন। চলে এসেছেন অসীম সাহা। কিন্তু নিত্য আসেননি। হামলার প্রতিবাদে সিপিএম ও কংগ্রেস কর্মীরা হাঁসখালি থানার সামনে রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখালেও ধারকাছ মাড়ান নি নিত্য। পরে জেলা নেতৃত্বের থেকে ‘বার্তা’ পেয়ে সকালেই তিনি ফল হাতে চলে আসেন হাসপাতালে। মৃণালের হাতে ডাব তুলে দেন নিত্য। উল্টে মৃণালও তাঁকে আঙুর খেতে দেন। কিছুটা হাসিঠাট্টাও হয়।

তাহলে কি জটিলতা কাটতে চলেছে? নিত্য বলেন, ‘‘আমি দলের অনুগত সৈনিক। দল আমাকে দাঁড়াতে বলেছিল বলেই মনোনয়ন জমা দিয়েছি। দল যদি প্রত্যাহার করতে বলে, তা হলে তা-ই করব। যদি মৃণালদার হয়ে প্রচার করতে বলে, তা-ও করতে কোনও আপত্তি নেই।’’ মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারেন? নিত্য বলেন, ‘‘এখনও দলের তরফে তেমন নির্দেশ পাইনি। তবে এখনও রাতটা তো আছে। দেখি কি হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement