সভায় আসার পরে বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে আলোচনায় নরেন্দ্র মোদী। ছবি: শৈলেন সরকার।
চড়া রোদের মধ্যেই অপেক্ষা শুরু হয়েছিল দুপুর থেকে। যখন তা শেষ হল, ঘড়িতে তখন বিকেল ৪টে ১০।
মঞ্চে উঠে তিনি হাত নাড়তেই যেন ক্লান্তি ভুলে গিয়েছিল জনতা। আর মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে যেই তিনি অনভ্যস্ত বাংলায় বললেন, ‘‘আসানসোলে আবার আসতে আমার খুব ভাল লাগছে’’, হাততালিতে ফেটে পড়ল সভাস্থল।
বৃহস্পতিবার আসানসোলের পোলো মাঠে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভায় তার পরে এমন হাততালির ঝড় বইল বারবার। লোকসভা ভোটের আগের দলের প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়ের সমর্থনে এই মাঠেই সভা করতে এসেছিলেন মোদী। সে দিন বলেছিলেন, ‘‘মুঝে পার্লামেন্ট মে বাবুল চাহিয়ে।’’ সেই সভায় যেখানে শেষ করেছিলেন, এ দিন যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন তিনি। বললেন, ‘‘আপনাদের এমপি-কে আমি মন্ত্রী করে রেখেছি। কথা দিলাম, আসানসোলকে সুন্দর করে গড়ে তুলব।’’
এ দিন গোড়া থেকেই সভায় জনসমাগমের প্রশংসা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমি সকাল থেকে ঘুরছি। জুনের গরম এপ্রিলেই এসে গিয়েছে। এর পরে আবার এ রাজ্যে তো ভোটের গরম চলছে। দিল্লিতে বসে কেউ ভাবতে পারবে না এত গরম উপেক্ষা করেও এখানে কী উদ্দীপনা! অনেক জায়গায় গিয়েছি। এমন দৃশ্য কোথাও দেখিনি। এই ভিড় দেখে ওরা (তৃণমূল এবং বাম-কংগ্রেস) ভয় পেয়ে যাবে।’’
আসানসোলে পোলো মাঠে মোদী পৌঁছনোর আগে অপেক্ষায় জনতা।
এর পরেই জনতার একাংশ মঞ্চের আরও কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে হুড়মুড় করে মাটিতে আছাড়ে পড়ে। যা দেখে মোদী বক্তব্য থামিয়ে দেন। মঞ্চ থেকেই জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন তিনি। আগে আসার চেষ্টা করতে বারণ করেন। বলেন, ‘‘আপনারা শান্ত হন, তা না হলে আমি কথা বলব না।’’ পুলিশকে সামাল দেওয়ার নির্দেশ দেন। অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। যা দেখে সভায় হাজির এক প্রৌঢ়ের মন্তব্য, ‘‘এর আগে মুখ্যমন্ত্রীকে এ ভাবে মঞ্চ থেকে জনতা-নিয়ন্ত্রণ করতে দেখেছি। প্রধানমন্ত্রীও অনায়াসে সেটা করেন দেখছি!’’
ফের বক্তব্য শুরু করে মোদী বলেন, ‘‘২০১৪ সালে এই মাঠেই এসেছিলাম। সে বার আমি প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু আজ যা ভিড় হয়েছে তা এর অর্ধেকও ছিল না। এই ভিড়ই বুঝিয়ে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ কী হবে।’’ এর পরেই তৃণমূল এবং বাম-কংগ্রেস জোটের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দাগতে শুরু করেন মোদী। কখনও সারদা-কাণ্ড নিয়ে, কখনও কলকাতায় উড়ালপুল ভেঙে পড়ার প্রসঙ্গ তুলে রাজ্য সরকারকে বিঁধলেন। আবার ‘কেরলে কুস্তি, বাংলায় দোস্তি’ বলে খোঁচা দিলেন বাম-কংগ্রসকে।
ভাষণের মাঝে জনতার সঙ্গে প্রশ্নোত্তরেও মেতেছেন মোদী। রাজ্যে এক-একটি দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলেছেন আর প্রশ্ন করেছেন, ‘‘এই সরকারকে কি আর জেতানো যায়?’’ গর্জে উঠেছে জনতা। সম্প্রতি দেশের ৭৩টি শহরের মধ্যে পরিচ্ছন্নতার প্রশ্নে আসানসোলের শেষ দিক থেকে দু’নম্বরে ঠাঁই পাওয়ার প্রসঙ্গও তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এমন একটা সরকারকে বসিয়েছেন যে আসানসোল আবর্জনার শহর হয়ে গিয়েছে।’’
প্রধানমন্ত্রী এ দিনের ভিড় লোকসভার আগের সভার থেকে বেশি হয়েছে বলে দাবি করলেও শহরের বিজেপি নেতারা মেনে নিচ্ছেন, সেই জনসমাবেশ এ দিন করে ওঠা যায়নি। সে বার ভিড় মাঠ ছাপিয়ে আশপাশের এলাকা ভরিয়ে তুলেছিল। এ দিন ভিড় মাঠের বাইরে যায়নি। আসানসোল ও দুর্গাপুরের মোট ন’টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থীরা সভায় হাজির ছিলেন। বিজেপি সূত্রের খবর, প্রতিটি কেন্দ্র থেকে হাজার দশেক করে লোক জমায়েত করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। দলের এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘অনেক কেন্দ্রই তা পূরণ করতে পারেনি। গরম এর অন্যতম একটি কারণ বলে আমরা মনে করছি।’’ বিজেপি-র জেলা সভাপতি তাপস রায়ের আবার অভিযোগ, ‘‘অন্তত তিনটি জায়গায় বিরোধীরা আমাদের সমর্থক বোঝাই শতাধিক বাস আটকে দিয়েছে। তাঁরা সময় মতো এসে উপস্থিত হতে পারলে ভিড় আরও উপচে পড়ত।’’
এ দিন শিল্পাঞ্চলে দু’টি সভা ছিল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তবে সেগুলি ছিল মোদীর সভার আগেই। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, লোকসভা ভোটে আসানসোল আসনে জেতার পরে দু’বছরে এলাকার উন্নয়নে কিছুই করতে পারেনি বিজেপি। মোদীর সভার পরে আসানসোলের তৃণমূল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘শুনলাম, সভার মাঠ ভরেনি। তাই বাস আটকানোর মিথ্যে অভিযোগ তুলছে ওরা।’’