মুর্শিদাবাদে ভোটপর্ব অন্তত সাত দিনের অতীত। জড়তা তবু কাটছে না য়েন। জেলা সদর বহরমপুর থেকে আশপাশের মহকুমাগুলিতেও সরকারি দফতরগুলি এখনও যেন আড়মোড়া ভাঙার সময় পাননি কর্মীরা। অধিকাংশ দফতরে বেলা বারোটাতেও ঢুঁ মেরে দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ আসন কালি। ছুটির মেজাজে গল্প করছেন বাকিরা। দূরের গ্রাম থেকে বিভিন্ন কাজে আসা গ্রামবাসীদের ‘পরে আসুন’ কিংবা ‘বোটটা মিটুক’ গোছের পরামর্শ দিয়ে দায় এড়াচ্ছেন তাঁরা। জেলা প্রশাসনিক ভবনের এক কর্মী কোনও রাখঢাক না রেখেই বলছেন, ‘‘চেনা ছন্দে ফিরতে একটু সময় তো লাগবেই দাদা!’’ কেন? তাঁর সপাটে উত্তর— ‘‘আরে বাবা, আগে কে ক্ষমতায় আসে দেখি, তার পরে তো কাজে ফিরব!’’
তবে, গরহাজিরার অন্য একটা কারণ রয়েছে। অধিকাংশ দফতরে কর্মীদের সিংহভাগ এখনও ভোটের কাজে বাইরে। যাঁরা পিরেছেন, তীব্র গরমে গত দেড় মাস ধরে টানা কাজ করে তাঁরাও কিছুটা আলস্য নিয়েই অফিস করছেন। মঙ্গলবার যেমন দেখা গেল, কোথাও কর্মীরা জটলা করে বসে আলোচনায় মশগুল— বিষয়, ক্ষমতায় কে।
জেলা প্রশাসনিক ভবনের লম্বা করিডর ফাঁকা। এস্টাবলিশমেন্ট দফতরের কর্মী অনীশকুমার দাশ বলছেন, ‘‘ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর থেকেই ভোটের কাজ নিয়ে বিভিন্ন দফতরের কর্মীদের ব্যস্ততা। ভোট মিটলেওঅনেকেই তো কাজে ফেরেননি।’’
জেলার পদস্থ কর্তাদেরও অনেককেই দেখা যায়।নি এ দিনও। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শ্যামলকুমার মণ্ডল বলছেন, ‘‘ভোট মিটে যাওয়ায় মানসিক ভাবে একটু হালকা লাগছে ঠিকই তবে মনে রাখবেন, ভোটগণনা পর্যন্ত আমাদের চাপ কিন্তু কমছে না।’’
তবে এক প্রশ্ত ভোটের ‘ডিউটি’ করে চাপ নিয়েও যাঁরা অফিসে এসেছেন তাঁদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ‘শরীর বাল নেই, যে কোনও দিন ্সুস্থ হয়ে পড়ব!’ একে গরম, তায় ভোট-ডিউটি— এই সাঁড়াশি চাপে ইতিমধ্যেই কারও গা ম্যাজম্যাজ, কারও বা জ্বর জ্বর। খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম হওয়ায় পেটের সমস্যা নিয়েও ভুগছেন।
বিভিন্ন দফতরে গরহাজিরার এটাও একটা বড় কারণ বলে মনে করছেন জেলা কর্তারা।
তবে, হাজিরা যাই হোক, কর্মীদের মধ্যে যে ভোটের ফল নিয়ে চাপা ঔৎসুক্য চোখ এড়াচ্ছে না। অফিসে এসেই কোনওরকমে কাজ গুছিয়ে যে যার ক্ষমতা অনুযায়ী ফোনালাপে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন। প্রসঙ্গ— ফল কী হবে। প্রশাসনিক ভবনের এক কর্তা তো বলেই ফেলছেন— কাজে কী আর মন আছে ভাই, এখন তো জীবনের একটাই তারিখ, ১৯ মে!’’