ভোট মিটতেই পুরসভায় মেয়র। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
তিনি প্রার্থী, তিনি মেয়র, তিনি-ই আবার দলে জোটের অন্যতম ‘মুখ’ও। মাসখানেক বিরতির পরে কয়েক ঘণ্টার জন্য মেয়রের চেয়ারে বসে, দক্ষিণবঙ্গের ভোটের ময়দানে চলেছেন অশোক ভট্টাচার্য।
আজ, মঙ্গলবার সকালে বিমানে কলকাতা রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে অশোকবাবুর। উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীদের হয়ে সভা করবেন তিনি। তার আগে এ দিন সোমবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ পুরসভায় আসেন মেয়র অশোকবাবু। গত ২৬ মার্চ শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে জোটের প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে আর পুরসভায় আসেননি তিনি। প্রচারের মাঝেই আর্থিক বর্ষ শেষ হয়েছে। কোন খাতে কত রাজস্ব জমা পড়েছে, কোন খাতে আয় কমেছে— কিছুই বিস্তারিত জানতে পারেননি। তাই দেরি না করে এ দিনই দফায় দফায় আধিকারিক এবং মেয়র পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অশোকবাবু। গভীর রাত পর্যন্ত ভোটের কাজে ব্যস্ত থাকলেও, আধিকারিকেরা দুপুরের পরে অবশ্যই যেন পুরসভায় আসেন, সে জন্য অনুরোধ করেছিলেন তিনি। বৈঠকের জন্য তাঁর হাতে ছিল মাত্র এ দিনটাই।
এ দিন অশোকবাবু বলেন, ‘‘নিজের কেন্দ্রের প্রচার ছাড়াও শিলিগুড়ি, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ির বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রচারে যেতে হয়েছে। এ বার দক্ষিণবঙ্গে যেতে হবে। এ দিকে পুরসভার অনেক কাজ বাকি, সেগুলোও সামলাতে হবে। তাই আপাতত বিশ্রাম নেওয়ার সময় নেই।’’ দক্ষিণবঙ্গে কবে কোথায় প্রচারে যাবেন, সেই সূচি কলকাতা থেকেই ঠিক করা হচ্ছে বলে অশোকবাবু জানালেন। গত বছর শিলিগুড়ি পুরসভা ভোটে বুথস্তরে তৃণমূল-বিরোধী জোটের ডাক দিয়েছিলেন অশোকবাবু। পুরভোটে তৃণমূলকে হারিয়ে বামেরা বোর্ড গঠন করে। মেয়র হন তিনি। ‘শিলিগুড়ি মডেলে’র প্রবক্তা অশোকবাবুকে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য করে সিপিএম। এর পর শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোটেও তৃণমূলকে একই ভাবে পরাস্ত করে মহকুমা পরিষদে দখল করে বামেরা। এ বার বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেস উভয়ই প্রকাশ্যে জোট করে শিলিগুড়ি মডেলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও শিলিগুড়িতে এসে জানিয়েছিলেন, শিলিগুড়িই রাজ্যকে পথ দেখাচ্ছে। উত্তররের ছয় জেলার ভোট শেষের পরে এ বারে জোট প্রচারে দক্ষিণবঙ্গেও একটানা থাকার ডাক পড়েছে অশোকবাবুর।
এ দিন সোমবার তাই পুরসভার আধিকারিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। ফের প্রচারে চলে যাওয়ার আগে পুরসভার কাজকর্ম কোথায় কী করতে হবে মেয়র পারিষদ এবং আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করে এ দিন বুঝিয়ে দেন। এক ঘণ্টা বৈঠকে পুরসভার আয়ব্যয়ের সংক্ষিপ্ত হিসাব নিয়েও খোঁজখবর করেন। অশোকবাবু জানিয়েছেন, নির্বাচনী বিধিনিষেধের জেরে দেড় মাস ধরে রাস্তা, নর্দমা তৈরি, সেতু তৈরির মতো বিভিন্ন কাজের ওয়ার্ক অর্ডার, টেন্ডার প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবার কাজে নতুন নিয়োগের বিষয়ও রয়েছে। সেই কাজগুলি শুরু করার অনুমতি চেয়ে জেলাশাসককে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্মতি পেলে সেই মতো দ্রুত ওই সমস্ত কাজ শুরু করা হবে। মাস দুয়েক পরেই বর্ষা। সে কারণে নিকাশি নালাগুলিকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সাফ করতে বিশেষ নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের মেয়র পারিষদ মুকুল সেনগুপ্তকে। সমস্ত বিভাগের মেয়র পরিষদরা যেন দুই এক দিনের মধ্যেই বৈঠক করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজকর্ম জোর দেন এ দিন বারবার তা জানিয়েছেন। পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, পানীয় জলের সংযোগ, বিদুৎ পরিষেবার অনেক কাজও ভোটের বিধিনিষেধের জেরে করা যায়নি।