রাজ্যে তাঁরা কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলেছেন। ভোটে জিতলে সেই কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গড়তে কোনও অসুবিধা হবে না বলে এ বার জানিয়ে দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর আশ্বাস, ভোটের আগে বাম ও কংগ্রেস আলাদা আলাদা ইস্তাহার তৈরি করেছে ঠিকই, কিন্তু ভোটে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলে দু’পক্ষের পৃথক ইস্তাহার অভিন্ন সরকার গড়ার পথে কোনও বাধা হবে না।
তৃণমূলকে হারানোর লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির ঐক্য গড়ে তোলা হলেও কংগ্রেসের সঙ্গে যাওয়া উচিত কি না, সেই প্রশ্নে বামেদের একাংশের মধ্যে সংশয় আছে। কিন্তু, কলকাতা প্রেস ক্লাবে ভোটের আগে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, যৌথ সরকার গড়ার বিষয়টি তাঁরা খোলা মনেই ভেবে রেখেছেন। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এ দিন সূর্যবাবু বলেন, ‘‘অন্যান্য বার আমরা ভোটের সময় বামফ্রন্ট সরকার গড়ার ডাক দিতাম। এ বার কিন্তু আমরা বামফ্রন্ট সরকার গড়ার কথা বলিনি। আমরা বলেছি, বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সরকার। ভোটের পরে তেমন পরিস্থিতি এলে কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলি আলোচনায় বসেই সরকার গঠন করবে।’’ বাম ও গণতান্ত্রিক সরকার কোন ১২টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বামেদের ইস্তাহারেই তা স্পষ্ট করে দেওয়া আছে। সূর্যবাবু এ দিন আরও সংযোজন করেছেন, ‘‘ইস্তাহারে আমরা আমাদের কথা বলেছি। কংগ্রেসও ইস্তাহার তৈরি করেছে। কিন্তু, পরবর্তী আলোচনায় আলাদা ইস্তাহার কোনও বাধা হবে না।’’
বস্তুত তৃণমূল ও বিজেপিকে হারাতে বৃহত্তর ঐক্যের রাস্তায় কোনও কাঁটাই রাখতে চাইছেন না সূর্যবাবু। ইতিমধ্যে প্রথম দফার প্রচারে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে সরাসরি কংগ্রেস প্রার্থীদের নাম করে তাঁদের জেতানোর ডাক দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। প্রেস ক্লাবেও এ দিন তিনি সে আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করেছেন। পাশাপাশি জানিয়েছেন, যেখানে যেমন প্রয়োজন, সেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ প্রচারে যেতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সিপিএমের জেলা নেতৃত্বকে তা দেখতে বলা হয়েছে। রাজ্যে দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে প্রচারে আসার কথা কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর। সেই সভায় সিপিএমও অংশ নেবে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে সূর্যবাবু অবশ্য বলেছেন, এ ব্যাপারে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি। কারণ রাহুল গাঁধীর সফরসূচি সবেমাত্র এ দিনই জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন
উত্তাল ষাটের দশকেও আমরা হাত মিলিয়েছি: সূর্যকান্ত মিশ্র
কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া মসৃণ করার চেষ্টার পাশাপাশি সূর্যবাবু এ দিন ফের সরব হয়েছেন তৃণমূল বিজেপি-র আঁতাঁতের অভিযোগে। সেই সঙ্গেই তাঁদের বিকল্প সরকারের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, গত পাঁচ বছরে এ রাজ্যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির যা হাল হয়েছে, তা থেকে তারা শিক্ষা নিয়েছেন। ক্ষমতায় এলে সেই মতো পদক্ষেপ করতে চান। সূর্যবাবুর কথায়, ‘‘যেমন মানবাধিকার কমিশন। আমরা চাই এমন একটা আইনগত ব্যবস্থা করতে, যাতে মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ করা রাজ্য সরকারের কাছে বাধ্যতামূলক হয়। তবে সেটা কত দূর করা যাবে, এখনও জানি না। আমরা আইনজ্ঞ এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে এগোতে চাইছি।’’ ক্ষমতায় ফিরে শিক্ষায় দলতন্ত্র বা পুলিশ প্রসাশনের স্থানীয় রাজনৈতিক হস্থক্ষেপের প্রবণতারও পুনরাবৃত্তি হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন সূর্যবাবু।