২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অন্য এক লড়াই। প্রতিপক্ষে সিপিএম, কংগ্রেস বা বিজেপি নয়, বরং লড়াই করতে হচ্ছে অন্য এক মেঘনাদের সঙ্গে। এই মেঘনাদ অদৃশ্য অথচ নিশ্চিত। সবচেয়ে বড় কথা, এ মেঘনাদ নিজেরই আত্মীয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের সঙ্গে, নিজের ছবির সঙ্গে। নইলে ঠিক ৫ বছরের মাথায় স্লোগানটা উঠতে পারত না। এসেছিলেন স্যান্ডালে চেপে, যাবেন স্ক্যান্ডালে চেপে। মমতা জানেন, এক দীপা দাশমুন্সি এই স্লোগান আওড়াচ্ছেন তা নয়, প্রশ্নটা ঘুরছে সমাজের অনেক মহলেই। সারদা থেকে ‘নারদা’ প্রশ্নটা অবধারিত ভাবে উঠছেই যে, এত সব কিছু হয়ে যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অগোচরেই। এবিপি আনন্দ-এ সি নিয়েলসেনের যৌথ সমীক্ষা তৃণমূল সুপ্রিমোর কপালে ভাঁজ ফেলবে। কারণ, সেখানে অধিকাংশ মানুষ স্টিং কাণ্ডে মমতার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত দেখছেন।
রাজনৈতিক ভাবে, সংশয়াতীত ভাবে বুদ্ধিমান মমতা, দূরদর্শী মমতা কি দেওয়াল লিখনটা পড়লেন? সেই জন্যেই কি স্টিং কাণ্ডে এ যাবৎ আক্রমণাত্বক মেজাজ নিয়ে থাকা মমতা সুর বদলে নিলেন আচমকাই? ‘‘আমাদের যদি কেউ ভুল করে থাকে শুধরে নেব, কিন্তু মুখ ফিরিয়ে রাখবেন না’’— জনসভায় মমতার এই সুরটা কিছুটা অচেনা ঠেকল না কি? এই ভুল সংশোধনের রাস্তা তৈরি করা ছাড়া তৃণমূল নেত্রীর সামনে অন্য কোনও পথ খোলা ছিল না। তাঁর দল এবং সরকারের ভাবমূর্তি সারদা-নারদায় ক্ষতিগ্রস্ত যে হয়েছে সম্যক উপলব্ধি করেছেন তিনি। উপলব্ধি করছেন একথাও, তাঁর মৌন অথবা প্রতিরোধের প্রয়াস তাঁরই ক্ষতি করে দিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। দুর্যোগে আর নীরন্ধ্রনায় টের পাচ্ছেন তিনি। নলের শরীরে কলির অনুপ্রবেশও জানান দিচ্ছে ভাল রকমই। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিরোধীদের জোটবদ্ধ আওয়াজ পাচ্ছেন মাঝে মধ্যেই।
জনী জনের দেখিয়ে যাওয়া ভুল শুধরানোর পথেই হাঁটছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুদ্ধিকরণের অভিযানে সিপিএমের শুদ্ধি কতটা হয়েছিল তা বলবে ইতিহাস। কিন্তু এ নিয়ে সংশয় নেই, মানুষ বিশ্বাস করেছিল সেই প্রচেষ্টায়। চরমতম শত্রু সিপিএমের কাছ থেকে আরও একবার আরও এক শিক্ষা নিয়ে শুদ্ধিকরণের পথে হাঁটলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হৃত বিশ্বাস ফিরবে তো মানুষের?