নিরপেক্ষতা এবং দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় নির্বাচন কমিশন ভোটের মুখে সরিয়ে দিয়েছে চার আইপিএস অফিসারকে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে থেকে দু’জন অফিসারকে তাঁদের কাজের এলাকাতেই বহাল রাখলেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের পদ থেকে সরিয়ে ভারতী ঘোষকে যেমন তিনি জঙ্গলমহলেই রেখে দিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রেও মালদহের অপসারিত পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে শিলিগুড়িতে এবং দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে সরিয়ে দেওয়া অর্ণব ঘোষকে মালদহে বসিয়ে দিয়েছেন। গত সোমবারই এ সংক্রান্ত আদেশনামা বের হয়েছে।
ভারতীকে মেদিনীপুর থেকে সরানোর পর বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুরে এক দফতরে বসানো হয়েছিল। কমিশনে বিরোধী দলগুলি অভিযোগ জানানোর পর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে তাঁকে ফের ভবানী ভবনে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য। প্রসূন এবং অর্ণবের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে চলেছে কি না, তা নিয়ে সবার চোখ এখন দিল্লির নির্বাচন সদনের দিকে।
সরকারি সূত্রে খবর, নির্বাচন কমিশন অপসারণ করলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই অফিসারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভোটের পরই তাঁদের আগের জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তাই তাঁরা যেন জিনিসপত্র নিয়ে চলে না আসেন। সেই মতো বর্ধমান, মালদহ, নদিয়া এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপারেরা কেউই তাঁদের বাংলো থেকে জিনিসপত্র সরিয়ে আনেননি। জানা গিয়েছে, নবান্নের নির্দেশেই তাঁরা এসপি বাংলোর একটি অংশ এখনও নিজেদের দখলে রেখেছেন। অন্য অংশে কমিশনের নির্দেশে আসা অফিসারেরা থাকছেন।
শুধুমাত্র অপসারিত জেলাশাসক বা পুলিশ সুপারেরাই নয়, যে ২৪ জন ওসি বা আইসি’কে কমিশন সরিয়ে দিয়েছে তাঁরাও এলাকা ছেড়ে যাননি। পাশাপাশি, ওই থানাগুলিতে গত চার দিন ধরে কোনও পুলিশ অফিসারকে বসানো হয়নি। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কমিশন ওই থানাগুলিতে নতুন অফিসার দিতে বলেছিল। কিন্তু সেখানে এখনও পর্যন্ত কোনও অফিসারকে পাঠানো হয়নি।
নবান্নের এক কর্তা জানাচ্ছেন, অপসারিত অফিসারদের ফের পুরনো জায়গায় পাঠানো হবে, এই বার্তা দেওয়া হয়েছে। বরং তাঁরা এলাকায় থেকেই ভোটের কাজে ‘বেসরকারি’ ভাবে যাতে সহায়তা করেন, সেই নির্দেশও নাকি দেওয়া হয়েছে।
তবে মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপারকে যথাক্রমে শিলিগুড়ি এবং মালদহে সিআইডি’র স্পেশ্যাল সুপারের দায়িত্ব দেওয়ার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই বলে দাবি করেছেন নবান্নের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের মতে, ভারতী ঘোষকে নতুন পদ তৈরি করে বসানো হয়েছিল। কিন্তু অর্ণব ঘোষকে মালদহে সিআইডি’র যে পদে বসানো হয়েছে, সেটি মাসখানেক আগেই তৈরি হয়েছিল। মূলত নকল নোটের রমরমার কথা মাথায় রেখেই সিআইডি’র স্পেশ্যাল সুপারের পদ তৈরি করা হয়। সেখানে কাউকে বদল করা হলে কমিশনের কিছু বলার থাকতে পারে না বলেই জানাচ্ছেন সরকারি কর্তারা। একই ভাবে শিলিগুড়িতে সিআইডি-র পদে প্রসূনবাবুকে পাঠানোর মধ্যেও বিতর্কের কিছু থাকতে পারে না বলে মনে করছেন ওই কর্তারা।
যদিও কমিশনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ওই অফিসারদের সরিয়ে দেওয়ার অর্থ, তাঁরা যেন ভোটপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে না পারেন। কিন্তু যদি দেখা যায় সেই সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে, তা হলে কমিশন ভারতী ঘোষের মতো ওই দুই অফিসারকেও আবার সরিয়ে দিতে পিছপা হবে না।