শপথের প্রস্তুতি। সোমবার, রেড রোডে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বনাথ বণিক।
দু’টিই নজিরবিহীন।
একটি ঘোষণা আগেই করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার, অন্য ঘোষণাটি করল কলকাতা পুলিশ। ভোটের ফল ঘোষণার দিনই মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন, শুক্রবার (২৭ মে) দুপুর ১২টায় নতুন সরকার শপথ নেবে রেড রোডের খোলা রাস্তায়। এর আগে এমন কখনও হয়নি। সোমবার কলকাতা পুলিশ জানিয়ে দিল, ওই অনুষ্ঠান উপলক্ষে টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে রেড রোড। এবং সোমবার রাত থেকেই তা চালুও হয়ে গিয়েছে। রবিবার (২৯ মে) সকালে ওই রাস্তা পরিষ্কার হওয়ার পরে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হবে। কোনও অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শহরের প্রধান একটি রাস্তা এত দিন বন্ধ রাখার নজিরও আগে ছিল না বলে অনেকের মত।
বিবাদী বাগের অফিসপাড়া, ধর্মতলা পার্ক স্ট্রিট ইত্যাদির সঙ্গে সংযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে রেড রোড গুরুত্বপূর্ণ। রেড রোডে প্রতি বছরই প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ এবং ইদের নমাজ হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১৫ অগস্টও সেখানে কুচকাওয়াজ চালু হয়েছে। ওই দুই অনুষ্ঠানের মহড়ার ও মূল কর্মসূচীর জন্য বড়জোর কয়েক ঘণ্টা রাস্তাটি বন্ধ রাখা হয়।
অনুষ্ঠানস্থলের নকশা
এঁকেছেন নির্মল মল্লিক।
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘শপথ অনুষ্ঠান দেখতে আসা অতিথি ও সাধারণ মানুষের বসার ব্যবস্থা এ বার যে হেতু রেড রোডেই হচ্ছে, সে কারণেই পাঁচ দিন ধরে বন্ধ রাখতে হচ্ছে পুরো রাস্তা।’’
ওই রাস্তা বন্ধ থাকায় যানজটের সমস্যা হবে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। যদিও কলকাতা পুলিশের আশ্বাস, যে ভাবে গাড়ি বিভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে যানজটের কোনও সুযোগই থাকবে না।
লালবাজার সূত্রে খবর, বিবাদী বাগ থেকে আসা গাড়িগুলিকে মেয়ো রোড এবং আকাশবাণীর সামনে দিয়ে স্ট্র্যান্ড রোডে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। অন্য দিকে, খিদিরপুরের দিক থেকে আসা গাড়িগুলিকে মুখ ঘুরিয়ে পাঠানো হবে ডাফরিন রোড, আউট্রাম রোড ও কিংসওয়ের দিকে।
শপথগ্রহণের অনুষ্ঠান কী ভাবে হবে, তা নিয়ে এ দিন নবান্নে রাজ্যের উচ্চপদস্থ কর্তাদের একটি বৈঠক হয়। তাতে ছিলেন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে, রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডি, কলকাতা পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমার-সহ তথ্য ও সংস্কৃতি, স্বরাষ্ট্র এবং পূর্ত দফতরের শীর্ষ কর্তারা।
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের বহু অতিথি উপস্থিত থাকবেন। থাকবেন কেন্দ্রের একাধিক শীর্ষ মন্ত্রী-সহ রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতা-নেত্রীরা। মমতা ব্যক্তিগত ভাবে অন্য রাজ্যের বেশ কয়েক জন মুখ্যমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছে, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকুন শাহরুখ খান, অমিতাভ বচ্চনের মতো বলিউডের প্রথম সারির তারকারাও। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান দেখতে আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যাবে। সঙ্গে এ রাজ্যের বিশেষ আমন্ত্রিতরা তো আছেনই। যে কারণে প্রায় ২০ হাজার আসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ ওই কর্তা জানান, ফোর্ট উইলিয়ামের গেটের সামনে আকাশবাণীর দিকে মুখ করে তিনটি মঞ্চ তৈরি হবে। মাঝখানের মঞ্চে হবে মূল শপথ অনুষ্ঠান। তার দু’পাশে বসবেন হবু মন্ত্রী এবং বিশেষ অতিথিরা। থাকছে ৮টি জায়ান্ট স্ক্রিন। অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার হবে ড্রোন থেকেও।
নবান্ন সূত্রে খবর, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের মঞ্চগুলি এমন ভাবে তৈরি করা হবে যাতে সময় নষ্ট না হয়। ২০১১ সালে রাজভবনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের ভিডিও দেখে রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সে বার রাজভবনের সামনের লবিতে যে অনুষ্ঠান হয়েছিল, সেখানে হবু মন্ত্রীদের শপথ-মঞ্চে পৌঁছতে কমপক্ষে এক-দেড় মিনিট সময় লেগে গিয়েছিল। ফলে, পুরো অনুষ্ঠান মিটতে এক ঘণ্টার কাছাকাছি লেগে যায়। এ বার এমন ভাবে মঞ্চ তৈরি করা হবে, যাতে কোনও সময় নষ্ট না হয়। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই মঞ্চগুলি পাশাপাশি তৈরি করা হচ্ছে।