পূর্বস্থলীর সভায় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।
সুরটা চড়েছিল আসানসোলেই। এ বার পূর্বস্থলীর সুমদ্রগড়। মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণের মূল নিশানায় ফের বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকার।
সমুদ্রগড় ও লাগোয়া এলাকাতে বিজেপির পুরনো ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে বলে গত বেশ কয়েকটি ভোটের ফলে দেখা গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, জায়গা বুঝেই আক্রমণের মূল লক্ষ্য বদলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবারের সভা থেকে সাম্প্রদায়িকতা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিজেপিকে বিঁধেছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী, সুষমা স্বরাজ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রাজনাথ সিংহ-সহ বিজেপির একঝাঁক শীর্ষ নেতৃত্ব প্রচার চালিয়েছেন জেলায়। নাম না করে বিজেপির নেতৃত্বকে লক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘এঁরা সব প্রচারক। এঁদের উদ্দেশ্য অশান্তি ছড়ানো।’’
কিন্তু জোট বাদ দিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ কেন? রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, সমুদ্রগড়, নসরতপুর পঞ্চায়েত এলাকায় বরাবরই ভাল ভোট পেয়েছে বিজেপি। গত লোকসভা ভোটে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রে প্রায় ২০ শতাংশ, বাকি কেন্দ্রগুলিতে কম বেশি দশ থেকে পনেরো শতাংশের আশেপাশে ভোট পায় বিজেপি। ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটের পর নসরতপুর পঞ্চায়েতের দখলও নেয় বিজেপি। যদিও পরে বিজেপি সদস্যরা তৃণমূলে যোগ দেন। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের অন্তর্গত কালেখাঁতলা ১ ও নিমদহ পঞ্চায়েতেও ক্ষমতায় আসে বিজেপি। ফলে ভোটের ঢাকে কাঠি পড়তেই এই কটি বিধানসভা এলাকায় বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক কে থাবা বসাবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
তৃমমূল সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই সভাস্থলও বিজেপির তালুক নিমতলা মাঠে হবে বলে ঠিক করা হয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, ১১ এপ্রিল এই মাঠেই সভা হবে বলে জেলার এক বিদায়ী বিধায়ককে বার্তা পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন শ্রীরামপুর, সমুদ্রগড়, কালনা শহর, নাদনঘাট এলাকা থেকে সভাস্থলে আসেন তৃণমূল কর্মী, সমর্থকেরা। ছিলেন কালনা, মন্তেশ্বর, পূর্বস্থলী উত্তর, পূর্বস্থলী দক্ষিণ, কাটোয়া, নবদ্বীপের প্রার্থীরাও।
ভোট প্রচারে বেরিয়ে বিরোধীদের পাশাপাশি গরমের সঙ্গেও যে লড়তে হবে সেটাও আগাম আঁচ করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই মতো ছিল দেদার সরবত ও ঠান্ডা জলের ব্যবস্থা। সভা মঞ্চে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী জানান, দলের নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সভাস্থলে যেন ছাউনির ব্যবস্থা থাকে। এ দিন ছাউনির বাইরে বেশ কিছু কর্মী, সমর্থককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুখ্যমন্ত্রী বলে ওঠেন, ‘‘মাথায় ছাতা দিন। গামছা বাঁধুন। ছাউনির ভিতর চলে আসুন।’’ সভাস্থলে দেখা যায় আইসক্রিম বিক্রেতাদেরও। সন্তোষ সাধু নামে এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘২ হাজার টাকার আইসক্রিম এনেছিলাম। সব শেষ।’’ রোদ থেকে বাঁচতে কয়েক জন দলীয় সমর্থককে কাট আউট মাথায় বসে থাকতে দেখা যায়।
সভার শুরু থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, তিনি ‘ইউ টিউব’ থেকে জেনেছেন, নাগপুর, বেনারস, গোয়া প্রভৃতি জায়গা থেকে বিভিন্ন নেতাদের এনে এলাকার বিভিন্ন হোটেল, গেস্ট হাউসে জড়ো করছে বিজেপি। নির্বাচনের নির্ঘণ্ট নিয়েও সুর চড়াতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁর দাবি, ‘‘কেরল, তামিলনাড়ুতে এক দফায় ভোট হচ্ছে। অসমেও ভোট পর্ব মিটে গিয়েছে দু’দফায়। আর এখানে নালিশের জেরে সাত দফায় নির্বাচন হচ্ছে।’’ জোটকে কটাক্ষ করে কংগ্রেসকে সিপিএমের ‘এ’ টিম বলে অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণকে মোটেই পাত্তা দিতে নারাজ বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তথা পূর্বস্থলী দক্ষিণের প্রার্থী রাজীব ভৌমিকের দাবি, ‘‘আমাদের দলকে তৃণমূল ভয় পেয়েছে। তাই এমন উল্টোপাল্টা কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ সিপিএম পূর্বস্থলীর জোনাল সম্পাদক সুব্রত ভাওয়াল, ‘‘উনি মানুষকে যাই বোঝানোর চেষ্টা করুন, মানুষ তাতে কান দেন না।’’