শ্রমিক-ভোটে বাজিমাতের আশায় বাম

কেন্দ্রের অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে কল-কারখানা। সেখানকার শ্রমিক-কর্মীদের একটা বড় অংশের উপরে আইএনটিইউসি এবং সিটুর প্রভাব রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। বাম-কংগ্রেস জোটের আবহে সেই প্রভাবই এ বার আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রে তাদের ভরসা বলে মনে করছে সিপিএম।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৬ ০২:২৩
Share:

কেন্দ্রের অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে কল-কারখানা। সেখানকার শ্রমিক-কর্মীদের একটা বড় অংশের উপরে আইএনটিইউসি এবং সিটুর প্রভাব রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। বাম-কংগ্রেস জোটের আবহে সেই প্রভাবই এ বার আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রে তাদের ভরসা বলে মনে করছে সিপিএম। তার সঙ্গে রানিগঞ্জের পঞ্চায়েত এলাকার ভোটও তাদের বাক্সে পড়বে ধরে নিয়েই জেতার অঙ্ক কষছে তারা। তৃণমূল অবশ্য মনে করছে, পুর এলাকাতেই তারা বিরোধীদের থেকে বড়সড় ব্যবধানে এগিয়ে যাবে।

Advertisement

আগে এই কেন্দ্রের বেশির ভাগটা ছিল হিরাপুর বিধানসভা আসনের অধীনে। সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে হিরাপুর কেন্দ্র বিলুপ্ত হয়ে যায়। তৈরি হয় আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্র। রানিগঞ্জের ছ’টি পঞ্চায়েতের মধ্যে পাঁচটিই এই কেন্দ্রের অধীন। এ ছাড়া আসানসোল পুরনিগমের ২২টি ওয়ার্ড রয়েছে এর মধ্যে। পূর্বতন হিরাপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ১৩ বার ভোট হয়েছিল। ১৯৫৭ সালে প্রথম ভোটে জেতেন নির্দল প্রার্থী তাহির হুসেন। ১৯৬২ সালে কংগ্রেসের প্রার্থী গোপিকারঞ্জন মিত্র জয়ী হন। ১৯৬৯ সালে সিপিএমের হয়ে প্রথম বার এই কেন্দ্রে জয়ী হন বামাপদ মুখোপাধ্যায়। হিরাপুর কেন্দ্রে কংগ্রেস পাঁচ বার, বামেরা ছ’বার ও তৃণমূল এক বার জয়ী হয়েছিল।

২০১১ সালে সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে গঠিত আসানসোল দক্ষিণ আসনে জয়ী হয় তৃণমূল। দলের প্রার্থী তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএমের অশোক মুখোপাধ্যায়কে প্রায় আঠাশ হাজার ভোটে হারিয়ে দেন। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে এই বিধানসভা আসনের অন্তর্গত রানিগঞ্জের পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলেরই দাপট ছিল। জেমারি, তিরাট, এগারা ও বল্লভপুর পঞ্চায়েত দখল করে তারা। শুধু আমরাসোঁতা পঞ্চায়েতে জেতে বামেরা। তবে ২০১৪ লোকসভা ভোটে অবশ্য এই কেন্দ্রের চিত্রটা পুরোপুরি পাল্টে যায়। বিজেপি ঝড়ে উড়ে যায় তৃণমূল এবং বাম। এই বিধানসভা এলাকা থেকে বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ৭৬ হাজার ভোট। সেখানে তৃণমূল প্রায় ৫৫ হাজার ও সিপিএম প্রায় ৩৩ হাজার ভোট পায়। গত অক্টোবরে পুরভোটে অবশ্য আসানসোলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল। এই কেন্দ্রের মধ্যে শহরের যে ২২টি ওয়ার্ড রয়েছে তার ১৯টিতেই জিতেছে তারা। তিনটি গিয়েছে বামেদের দখলে।

Advertisement

তবে তার পরেও এ বার এই কেন্দ্রে জেতার ব্যাপারে আশাবাদী বামেরা। তাদের দাবি, রানিগঞ্জের যে পঞ্চায়েত এলাকা এই কেন্দ্রের মধ্যে পড়ছে সেখানে গত পাঁচ বছরে বিশেষ কোনও কাজ হয়নি। যা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তা কাজে লাগাতেই এই এলাকার বাসিন্দা হেমন্ত প্রভাকরকে এ বার এই আসনে প্রার্থী করেছে সিপিএম। শুধু তাই নয়, ক্ষোভ রয়েছে পুর এলাকার মানুষের মধ্যেও। এই এলাকার একটি বড় অংশ শিল্পাঞ্চল। ইস্কোর শ্রমিক-কর্মীরা বাস করেন সেখানে। সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী, আইএনটিইউসি নেতা হরজিৎ সিংহদের দাবি, ‘‘শ্রমিকদের ভোট যাবে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীর ঝুলিতেই।’’ দু’দলের শ্রমিক নেতারা এক সঙ্গে প্রচারও করছেন। সিপিএম প্রার্থী হেমন্তবাবু বলেন, ‘‘কোন্দল থেকে দুর্নীতি, এ সবে ভোটারেরা বিরক্ত। তাঁরা ইভিএমে জবাব দেবেন।’’

তৃণমূলকে আবার এই কেন্দ্রে ভাবাচ্ছে দলের অন্দরের দ্বন্দ্ব। লোকসভা ভোটে এই কোন্দলই কাঁটা হয়েছিল বলে দলীয় নেতৃত্ব মনে করেছিলেন। এ বার বিদায়ী বিধায়ককেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল। গত পুরভোটে তিনি ৮৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে কাউন্সিলর হয়েছেন। তবে সে বারও ওই ওয়ার্ডে দলের এক বিক্ষুব্ধ নেতা নির্দল হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। পরে অবশ্য তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝিয়ে-সুজিয়ে তা প্রত্যাহার করান। তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন যদিও এ সব আমল দিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘শিল্পাঞ্চলের অন্য আসনের মতো আসানসোল দক্ষিণেও আমাদের জয় নিশ্চিত।’’

লোকসভা ভোটে পুরভোটের সাফল্য ধাক্কা খেলেও হাল ছাড়ছে না বিজেপি। এই কেন্দ্রে এ বার তাদের প্রার্থী কার্গিল যুদ্ধের সৈনিক দীপ্তাংশু চৌধুরী। বহিরাগত এবং রাজনীতিতে নতুন হলেও তাঁর পরিচিতিই দীপ্তাংশুবাবুকে এগিয়ে রাখছে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা। দলের জেলা সভাপতি তাপস রায় দাবি করেন, ‘‘আপাতদৃষ্টিতে পুরসভায় আমাদের ফল খারাপ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সে বার তো সন্ত্রাসের কারণে মানুষ ভোটই দিতে পারেননি। এ বার তা হবে না।’’ দীপ্তাংশুবাবু বলেন, ‘‘নতুন-পুরনো বড় বিষয় নয়। মানুষকে বোঝাতে হবে, জনগণের কাজ কারা করবে। আমি যে সেই কাজ ভালই পারব, তা ভোটারেরা বুঝতে পারছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement