প্রতিবেশী রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে মাওবাদী বা দুষ্কৃতীরা পশ্চিমবঙ্গে ঢুকছে কি না, তার চেয়েও এ বার ঝাড়খণ্ড পুলিশের বেশি মাথাব্যথা, সীমা পেরিয়ে মদ ও নগদ অর্থ পশ্চিমবঙ্গে ঢুকছে কি না তা নিয়েই। পরিস্থিতি সামলাতে ঝাড়খণ্ড পুলিশ সীমান্তবর্তী চেকপোস্টগুলিতে ভিডিও ক্যামেরার নজরদারি বসিয়েছে। ঝাড়খণ্ডের পুলিশ কর্তারা এখন ব্যস্ত, মদের ভাটি ভাঙার কাজে।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট ঘিরে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাজ্য-সীমা জুড়ে সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের এডিজি (অপারেশন) এস এন প্রধান বলেন, “সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের পদস্থ পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের বৈঠক হয়েছে।’’ এডিজি জানান, ভিডিও কনফারেন্সে কমিশন ঝাড়খণ্ড পুলিশকে কিছু নির্দেশ দিয়েছে। বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুধু মাওবাদী বা দুষ্কৃতীরা অস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে সীমানা পেরিয়ে ঢুকছে কি না তা দেখলেই হবে না। নজর রাখতে হবে, ভোটের সময় দেশি মদ বা নগদ অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা। কারণ ঝাড়খণ্ডের সীমানাবর্তী জেলাগুলিতে বিশেষ করে পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায় আদিবাসীদের দেশি মদ বা টাকা ভেট দিয়ে ভোট কেনার প্রচুর অভিযোগ এসেছে।
রাজনৈতিক সভাগুলিতে গেলেই মিলবে দুপুরের ভূরিভোজ। বিশেষ আকর্ষণ পাঁঠার মাংস ও দেশি মদ। ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসওয়ার এসপি ইন্দ্রজিৎ মাহাতো জানান, তাঁদের জেলার লাগোয়া পুরুলিয়া। সেখানে কিছু গ্রাম আছে, যার দু’দিকেই ঝাড়খণ্ড। দলমা লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের এই সব গ্রামে দোলের সময় প্রচুর দেশি মদ যাচ্ছিল। পুলিশ সুপারের বক্তব্য, ‘‘ও সব যাচ্ছিল আমাদের জেলা থেকে। খবর পেয়েই ভাটি ভাঙার কাজ শুরু করেছি।”
প্রধান জানান, প্রতি বারই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে ঝাড়খণ্ড সীমায় নজরদারি বাড়ানো হয়। এ বার কমিশনের নির্দেশে নজিরবিহীন নজরদারি করতে হচ্ছে ঝাড়খণ্ড পুলিশকে। সীমানাবর্তী এলাকাগুলিতে এ বার ৫০টির মতো নতুন চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ১৫ থেকে ২০ কোম্পানি নিরাপত্তা বাহিনী নিয়মিত টহল দিচ্ছে। প্রথম দফার ভোটের আগে আরও তিন কোম্পানি সীমা-এলাকায় যাচ্ছে। প্রধান বলেন, “সাহেবগঞ্জ, রাজমহল হয়ে প্রচুর জাল নোট পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে। অনেক ক্ষেত্রে ভোটের পরে গ্রামের লোক বুঝতে পারেন ভেটের নোট জাল। সেই কারণে নগদ অর্থ ও জাল নোট পাচার নিয়েও আমরা সতর্ক।”
ঘাটশিলা লাগোয়া জঙ্গল থেকে বেশ কিছু বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র কয়েক দিন আগে উদ্ধার হয়। জামশেদপুরের এসএসপি অনুপ টি ম্যাথু জানান, ‘‘কমিশনের নির্দেশ, পশ্চিমবঙ্গের পুরো ভোট পর্বেই আমাদের নজরদারি চালাতে হবে।’’