এ ছবিই দেখা গেল কেশিয়াড়িতে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
চার দিক সুনসান। চৈত্রের দুপুরে তখন ভোট চলার কথা।
কিন্তু, কোথায় কী! বুথের বাইরে কোনও ভোটারের আনাগোনা নেই! নেই ভোটারদের চিরচেনা লাইনও। বুথের ভেতরে মাত্র দু’জন ভোটকর্মী। এক জন প্রিসাইডিং অফিসার, অন্য জন, থার্ড পোলিং। আর বাকি ঘরটা ভোটপ্রক্রিয়ার নানা জিনিসপত্র নিয়ে এবং ইভিএম-ওয়ালা চার দিক ঢাকা খুপচি মতো জায়গাটি-সহ ভোটারের অপেক্ষায়। অথচ, ভোটগ্রহণ বন্ধ!
স্কুলের যে ঘরকে বুথ বানানো হয়েছে, তার ঠিক লাগোয়া বারান্দায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সশস্ত্র তিন জন জওয়ান। পাশেই ঘুরঘুর করছেন দুই যুবক। হাতে ভোটার কার্ড। ভোট দেওয়া হয়েছে কি হয়নি বোঝার উপায় নেই। এক জনের পরনে লুঙ্গি-গেঞ্জি, অন্য জনের প্যান্ট-শার্ট। আর কেউ কোথাও নেই। না! একটু ভুল হল। একটা ছোট জটলা আছে। বুথ থেকে মিটার পঞ্চাশেক দূরে। হাতে গোনা কয়েক জনের যে জটলায় কিছু ক্ষণ পরে এই দু’জনও মিলিয়ে যাবেন। বিরোধীদের অভিযোগ, ওই জটলাই খেপে খেপে এসে ভোট দিয়ে গিয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টা। চৈত্রের দুপুরের মাথায় গনগনে রোদ্দুর ঝুলছে। ভোটার নেই, ভোটকর্মীদেরও বেশির ভাগ নেই, ভোটগ্রহণ বন্ধ, অথচ ভোট পড়ে গিয়েছে তত ক্ষণে ৭৫ শতাংশ! কী ভাবে? বিরোধীদের অভিযোগ, কেশিয়াড়ি বিধানসভার দাঁতনের মুকুন্দপুরের ১৩৮ নম্বর ওই বুথে প্রচুর ছাপ্পা ভোট দিয়েছে তৃণমূল। যেটা নিয়ন্ত্রণ করছিল ওই জটলা। দাঁতনের সিপিআই নেতা শরত্ দাসের অভিযোগ, তৃণমূলের বুথ সভাপতি পল্টু দাসের অঙ্গুলিহেলনেই সবটা হয়েছে। তাঁর আরও অভিযোগ, বুথের ভেতরে বিরোধী দল কোনও এজেন্ট বসাতে পারেনি। তৃণমূল যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কিন্তু, ভোট কেন বন্ধ রাখা হয়েছিল?
ওই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার সুশান্তকুমার সাহু বললেন, ‘‘খাওয়াদাওয়া চলছে। তাই ভোটগ্রহণ আপাতত বন্ধ।’’ এমন নিয়ম আছে নাকি? কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, এ ভাবে ভোট বন্ধ রেখে খাওয়াদাওয়া করা যায় না। তবে খিদে পেলে অবশ্যই তাঁরা খাবেন। কিন্তু, সে ক্ষেত্রে এক এক জন করে খেতে হবে। তা হলে, সে নিয়ম এখানে মানা হচ্ছে না কেন? এ প্রশ্নের জবাবে আমতা আমতা করতে দেখা যায় সুশান্তবাবুকে।