ভোটারদের জন্য তৃণমূলের লুচি আর মিষ্টি

একটু মিষ্টিমুখ হয়ে যাক! হাসিমুখে পথ আটকে দাঁড়িয়ে স্থানীয় কয়েক জন তৃণমূল কর্মী। হাতে সবুজ প্যাকেট। ভোট দিয়ে বেরোনো বছর পঞ্চাশের এক মহিলার হাতে জোর করেই তারা ধরিয়ে দিল প্যাকেটটা। সঙ্গে অনুরোধ, ‘‘মিষ্টি আছে। খেয়ে নেবেন।’’

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০৪:২৮
Share:

এই প্যাকেটই বিলি করা হয়েছে ভোটারদের মধ্যে। — নিজস্ব চিত্র

একটু মিষ্টিমুখ হয়ে যাক!

Advertisement

হাসিমুখে পথ আটকে দাঁড়িয়ে স্থানীয় কয়েক জন তৃণমূল কর্মী। হাতে সবুজ প্যাকেট। ভোট দিয়ে বেরোনো বছর পঞ্চাশের এক মহিলার হাতে জোর করেই তারা ধরিয়ে দিল প্যাকেটটা। সঙ্গে অনুরোধ, ‘‘মিষ্টি আছে। খেয়ে নেবেন।’’

বাক্স খুলে দেখা গেল, শুধু লাড্ডু নয়, রয়েছে খান চারেক লুচি, আলুর দম আর একটা ডিম সেদ্ধও। সঙ্গে তমলুক বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী নির্বেদ রায়কে জয়ী করার আবেদন-সহ চিরকুট। তাতে আবার নির্বেদের ছবি। সঙ্গে করজোড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

Advertisement

বৃহস্পতিবারের ভোটে তমলুক বিধানসভার শান্তিপুর এলাকার অনেক ভোটারই ওই চিরকুট সমেত প্যাকেট পেলেন। আর যেখান থেকে তা বিলি হল, তৃণমূলের সেই শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস থেকে বুথের দূরত্ব মেরেকেটে একশো মিটার।

ভোটারদের খাতির-যত্নে শাসক দলের আয়োজন প্রথম দফার ভোট থেকেই দেখা যাচ্ছে। জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রামে ছবিটা ছিল মুড়ি বিলির। বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডলের তালুকে এসে সেটাই হয়েছিল গুড়-বাতাসা। কলকাতায় ভোটারদের বিরিয়ানি খাওয়াতেও দেখা গিয়েছে। আর শেষ দফায় নন্দীগ্রামের জেলায় সেই ভোটার আপ্যায়নেই শাসক শিবির বিলি করল লুচি-মিষ্টি।

এ দিন বেলা বারোটা নাগাদ শান্তিপুরের ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল রাস্তায় পড়ে রয়েছে সবুজ প্যাকেট। স্থানীয় মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ নম্বর বুথে ভোট দিতে গিয়েছিলেন বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি। হাতে প্যাকেট নিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আগেও তো অনেক ভোট দিয়েছি। কিন্তু কেউ এমন খাবার দেয়নি। ফেরার পথে পাড়ার তৃণমূলের ছেলেরা জোর করে হাতে প্যাকেটটা ধরিয়ে দিল। না বলতে পারলাম না।’’ সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় এক কর্মী। কার নির্দেশে ভোটারদের এ ভাবে খাবার দেওয়া হল? উত্তর মেলেনি। আর মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসার চন্দন মাইতির কথায়, ‘‘বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগও জানায়নি।’

ভোটারদের যে খাবারের প্যাকেট বিলি হয়েছে সে কথা একবাক্যে মেনে নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা সেলিম আলি। তবে তাঁর দাবি, ‘‘স্থানীয় একটি ক্লাবের কয়েক জন ভোটারদের টিফিন দিয়েছেন। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ কিন্তু ওটা তো ক্লাব নয়, তৃণমূলেরই শ্রমিক সংগঠনের কার্যালয়। সেখানে কারা খাবার বিলি করল, জানা গেল না কেন? এ বার সেলিমের উত্তর, ‘‘আমাদের দল ও প্রার্থীর বদনাম করতেই এটা করা হয়েছে। জানতে পেরে আমরা ঘটনাস্থলে যেতেই ওরা পালিয়ে যায়।’’ কিন্তু কারা এই চক্রান্ত করলেন, তা নিয়ে আর মুখ খুললেন না সেলিম। তবে তৃণমূল সূত্রেই জানা গেল, দেদার লুচি-মিষ্টির আয়োজন সামলেছিলেন এই সেলিমই।

এ নিয়ে কমিশনে অভিযোগও জানান তমলুকের জোট প্রার্থী সিপিআইয়ের অশোক দিন্দা। তবে তাতে আমল দেননি তৃণমূল প্রার্থী নির্বেদবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এমন ঘটনা জানা নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement