ভূত দেখলেই ওঝা ডাকুন

ভূতের বাসা কোথায়? নদীর পাড়ে চিতাপোড়া শ্মশানে, না কি মল্লিকদের সাত পুরুষের ভাঙাচোরা শরিকি বাড়িটায়? বাঁশবনে ভূত আছে, কে না জানে? কিন্তু কোন বাঁশের আগায় ঠ্যাং ঝুলিয়ে বসে গেছোভূত? কেউ জানে কি?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০২:২৪
Share:

ভূতের বাসা কোথায়?

Advertisement

নদীর পাড়ে চিতাপোড়া শ্মশানে, না কি মল্লিকদের সাত পুরুষের ভাঙাচোরা শরিকি বাড়িটায়?

বাঁশবনে ভূত আছে, কে না জানে? কিন্তু কোন বাঁশের আগায় ঠ্যাং ঝুলিয়ে বসে গেছোভূত? কেউ জানে কি?

Advertisement

নীল-সাদা রাজনীতির কারবারিরা বলছেন ধুস্, ভূত বলে কিস্যু নেই! কিন্তু আম পাবলিক চর্মচক্ষে তেনাদের দেখতে পাচ্ছেন। বৈশাখের ভরদুপুর ও দুপুররাত তেনাদের কাছে দুই-ই সমান। দিব্যি দলবেঁধে ঘুরছে। মওকা বুঝে ভয় দেখাচ্ছে। মুড খারাপ থাকলে চাট্টি পেটোও ছুড়ে দিচ্ছে।

ওঝা নেই? ডাকছেন না কেন? ভূতের ভয়ে থরহরি পাবলিক বলছে, ওঝা ডাকার আগেই তো ওঁরা ধাঁ। সোমবার রাতে হরিণঘাটায় বিজেপি প্রার্থীর বাড়ির সামনে বোমা ছুড়েছে তারা। পরের দিন সকালে ওঝা এসে স্‌প্লিন্টার সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু তেনাদের টিকি ছুঁতে পারেনি কেউই। হরিণঘাটা, চাকদহ, কল্যাণী, গয়েশপুরের মতো এলাকায় ভূতেরা আবার মোটরবাইকেও ঘুরছে। ভোটের আগে শাসিয়েও বেড়াচ্ছে তেনারা। বলছে, ‘আসল কেত্তন তো হবে ভোটবাক্সে। বুথে যাওয়ার আগেই বাঁশবাগানে ঘাড় মটকে দেবে ভূতে!’

কিন্তু জোটের আবহে পাবলিকও কম যায় না। টলি-বলির এক বিখ্যাত অভিনেতা তথা নেতার সেই বহুল প্রচলিত ডায়ালগ টুকে তাঁরাও বলছেন, ‘পাবলিকের মার, ক্যাওড়াতলা পার। এ সব দু’দিনের ভূতের অতীত-ভবিষ্যৎ ঘেঁটে ঘ করে দিতে আমরাও পিছপা হব না।’’ তবে বিরোধীরা বলছেন, ওঝারা ভোটের দিন কতটা সক্রিয় থাকবেন তার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করবে।

বিরোধীদের অভিযোগ, ভূত নিয়ন্ত্রক তৃণমূলও থেমে নেই। কারণ জোটের জেগে ওঠাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে তারা। আর তাই চাপ অব্যাহত রয়েছে। কখনও দলীয় দুষ্কৃতীদের দিয়ে। কখনও ভূত দিয়ে। সোমবার রাতে তৃণমূল আশ্রিত ভূতেদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন শান্তিপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অরিন্দম ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার রাতে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা বঙ্কিম ঘোষের বাড়িতে শাসিয়ে গিয়েছে তারা। মদনপুরের আলাইপুরে সিপিএম নেতার বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায় তৃণমূল। থানায় অভিযোগ হয়েছে। কিন্তু কেউ ধরা পড়েনি।

গত কয়েকদিন ধরেই গয়েশপুরে শাসক দলের শাসানি চলছিল। একের পর এক অভিযোগের পরে মঙ্গলবার রাত থেকে অবশ্য এলাকায় আধাসেনার দেখা মিলেছে। কিন্তু ভূতেরা কি অত সহজে দমার পাত্র! সিপিএমের প্রার্থী অলকেশ দাসের অভিযোগ, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের দুষ্কৃতীদের গয়েশপুর এলাকায় এনে রেখে দিয়েছে তৃণমূল। সেই বহিরাগতদেরই ব্যবহার করা হচ্ছে। ভোটের দিন তাদের দাপট আরও বাড়বে। তবে এমন অভিযোগ মানতে চাননি কল্যাণী কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘এ সবই সিপিএমের কারসাজি।’’

তবে ভোটের আগে হুমকি যে চলছে তা স্পষ্ট হয়ে যায় প্রশাসনের পরিসংখ্যানেই। শুধু মঙ্গলবার রাতেই নদিয়া জেলার নির্বাচন কমিশনের টোল ফ্রি নম্বরে প্রায় একশোটি অভিযোগ এসেছে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে। সমাধানেও ১২টির মতো অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রশাসন সে ভাবে কড়া পদক্ষেপ করলে ভোটের আগে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা অনেকটাই এড়ানো যেত। পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশের মদতে শাসক শিবির দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, অনুব্রত মণ্ডলের বীরভূমে যা হয়নি, ভোটের দিন নদিয়াতে তেমনটা হতে পারে। তাদের আশঙ্কা, হরিণঘাটা, চাকদহ, কল্যাণী, গয়েশপুর ছাড়াও রানাঘাট, তাহেরপুর, কৃষ্ণগঞ্জ, কৃষ্ণনগর, চাপড়া ও শান্তিপুর-সহ বেশ কিছু এলাকায় ভূতের তাণ্ডব চলবে। সিপিএমের জেলা কমিটির সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘‘তৃণমূল মরিয়া হয়ে উঠেছে। আজ, তারা ভোট লুঠের চেষ্টা করবে। তবে মানুষ সেটা রুখে দেবে। আমরাও প্রস্তুত।’’ সুমিতবাবু সংযোজন, ‘‘কমিশনের ভূমিকাও দেখার আছে।’’

জেলা কংগ্রেসের সভাপতি অসীম সাহা বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে বহিরাগতেরা ঢুকে পড়েছে খোদ কৃষ্ণনগরে। গোটা শহর জানে আর প্রশাসন জানে না? পুলিশের একাংশ এখনও শাসক দলের হয়ে কাজ করেছে। ভোটের দিন ভূতেরা তাণ্ডব করবে। তবে আমরাও তৈরি আছি।’’ আর জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলছেন, ‘‘একশো শতাংশ শান্তিপূর্ণ ভোট হবে। ৩৪ বছর ধরে যারা সন্ত্রাস করেছে, তারাই এখন নানা গল্প ফাঁদছে।’’

বিরোধীদের এমন অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি জেলাশাসক বিজয় ভারতী। তিনি বলেন, ‘‘জেলায় যাতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয় তার জন্য আমরা সব রকম ভাবে প্রস্তুত।’’ এসপি শীষরাম ঝাঝারিয়াকে এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে বেড়িয়ে যান।

কিন্তু ভূতেরা তো পালানোর পাত্র নয়। বিরোধীদের ঘোল খাইয়ে আজ সেই তেনারা বুথে বুথে তাণ্ডব চালাবে, নাকি জোটের ভয়ে ভীত হয়ে পিঠটান দেবে খোদ ভূত, সেটাই আজ দেখার!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement