মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠানো শো-কজের জবাব দেওয়ার পিছনে তাঁর কোনও অভিসন্ধি ছিল না বলে নির্বাচন কমিশনকে জানালেন রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে রাজীব কুমারকে সরানো প্রসঙ্গে কমিশনের ভৎর্সনা চিঠির কোনও জবাব তিনি দেননি।
ভোটের প্রচার-সভায় আসানসোলকে আলাদা জেলা করার প্রতিশ্রতি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আচরণবিধি ভেঙেছেন — এই যুক্তিতে তাঁকে শো-কজ করেছিল কমিশন। কিন্তু মমতার নির্দেশে সেই চিঠির জবাব দেন মুখ্যসচিব। তাতে তিনি জানান, ডিসেম্বরে মন্ত্রিসভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী আচরণবিধি ভাঙেননি। বাসুদেববাবু ওই চিঠিতে আরও লেখেন, কমিশনের উচিত শো-কজ করার আগে ভাল করে সব দিক খতিয়ে দেখা। আবার রাজীব কুমারের অপসারণের পরে কমিশনকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনি। এই ধরনের পদক্ষেপে বাহিনীর মনোবল ভেঙে যেতে পারে বলে ওই চিঠিতে জানান মুখ্যসচিব। এর পরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে রাজ্যের দায় থাকবে না বলেও জানান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে মুখ্যসচিবের জবাব দেওয়া নিয়ে সরব হয় বিরোধী দলগুলি। কমিশনের কাছে বাসুদেববাবুকে শাস্তি দেওয়ার দাবিও জানানো হয়। এর পরেই কমিশন মমতার বাড়িতে ফের শোকজের চিঠি পাঠিয়ে তাঁকেই জবাব দিতে বলে। জানিয়ে দেয় মুখ্যমন্ত্রী নয়, চিঠি পাঠানো হয়েছে তৃণমূলের চেয়ারপার্সনকে। একই সঙ্গে মুখ্যসচিবকে দু’টি চিঠি পাঠায় কমিশন। একটিতে বলা হয়, মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো ওই চিঠির জবাব মুখ্যসচিব দিতে পারেন না। কমিশন সম্পর্কে কড়া শব্দ ব্যবহার করাটাও যে নির্বাচন সদন ভাল চোখে দেখছে না তাও বুঝিয়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় চিঠিতে রাজীব কুমারের অপসারণ নিয়ে তাঁর মন্তব্যের জন্য বাসুদেববাবুকে ভৎর্সনা করে কমিশন। নির্বাচন সদনের পক্ষে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সব সময়েই রাজ্যের দায়।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বুধবার রাতে কমিশনের চিঠির জবাব পাঠিয়েছেন। বৃহস্পতিবার চিঠি লিখলেন মুখ্যসচিব। বাসুদেববাবু জানান, অভিসন্ধি নিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠির জবাব দেননি। মুখ্যমন্ত্রীর নামে লেখা চিঠিটি এসেছিল নবান্নে। সেখানে সরকারেরই দু’টি দফতরের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি উত্তর দিয়েছেন। সেই চিঠির বয়ানও মুখ্যমন্ত্রীকে দেখিয়েই দিল্লিতে পাঠানো হয়েছিল।
রাজীব কুমারের অপসারণ প্রসঙ্গে চিঠির জবাব বাসুদেববাবু দেননি। নবান্ন সূত্রে খবর, ওই চিঠিতে জবাব দিতে বলা হয়নি। কেবল ভৎর্সনা করা হয়েছে। তাই জবাব পাঠানোর প্রশ্ন নেই। তবে দিল্লিতে উপনির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা বলেন, ‘‘দ্বিতীয় চিঠির ক্ষেত্রে জবাব দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া নেই। কিন্তু জবাব দিতেই হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের দু’টি চিঠি কমিশন এ দিনই পেয়েছে বলে জানান সাক্সেনা। তাঁর কথায়, ‘‘চিঠি দু’টি খতিয়ে দেখে কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ করবে।’’ নবান্ন সূত্রে খবর, কমিশন দ্বিতীয় চিঠির জবাব চাইলে মুখ্যসচিব চিঠি লিখতে তৈরি।