নাচতে নাচতেই সভার পথে মিছিল (বাঁ দিকে)। ভরসার হাত (ডান দিকে)। নারায়ণগড়ে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র নারায়ণগড়ে প্রচারে আসছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। সোমবার সকাল সাড়ে ন’টায় সভা শুরুর আগেই কাশীপুরের মেট্যালে সভাস্থলে পৌঁছলেন সূর্যবাবু। কিন্তু লোক কই!
সূর্যবাবু মঞ্চে বসে রইলেন। তারপর একে একে ধামসা-তাসা বাজিয়ে মিছিল এল। মিছিলে সামিল বেশিরভাগই মহিলা। তাঁরা নাচছেন। সামনে ছোট ছোট মেয়েগুলোও কাঠিনাচ করছে। সূর্যবাবুর ঠোঁটে হাসি। সভা তখন ভিড়ে ভরা। সূর্যবাবুও বললেন, ‘‘আপনারা মিছিল করে নেচে নেচে এলেন, এটা বক্তৃতার চেয়ে ঢের ভাল। কারণ, এটাই তো জীবন।’’
এ দিন নারায়ণগড়ে দ্বিতীয় দফা প্রচারে এসেছিলেন সূর্যবাবু। সারা দিনে মোট পাঁচটি সভা করেন। সকালে মেট্যাল দিয়ে প্রচার শুরু হয়। পরে তিনি যান বেলদার ব্যাংদায়। বিকেলে বাখরাবাদের খালিনা, খাকুড়দা ও শেষে কসবায় যান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। সকালের দু’টি সভাতেই গোড়ায় ভিড় ছিল না। তবে সূর্যবাবু পৌঁছনোর পরে জমায়েত বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর মতো বড় সমাবেশ সূর্যবাবু করেননি। সবই ছোট মাঠে সভা। মেরেকেটে হাজার দেড়েক লোক ধরে। সূর্যবাবু আসার পরে সেই মাঠেই হাজারের বেশি ভিড় হয়েছে। যাঁরা এসেছেন তাঁদের বেশিরভাগই শ্রমজীবী মানুষ। সূর্যবাবু তাই বলছেন, “এ লড়াই বাঁচার লড়াই। যেখানে মানুষ কথা বলতে পারে, প্রতিবাদ করতে পারে, গাইতে পারে, মিছিল করতে পারে, ভোট দিতে পারে।’’ এ দিন সূর্যবাবুর। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ঊষা মিশ্র। সূর্যবাবু কি উদ্বেগে আছেন? ঊষাদেবীর জবাব, “লড়াই নিয়ে তিনি চিন্তা করছেন না। তবে যে ভাবে কর্মীদের উপর আক্রমণ হয় তাতে উদ্বেগে থাকেন।’’ জয় নিয়ে প্রত্যয়ী সূর্যবাবু বলেছেন, “আর এক দিন নাচ হবে। সেটা ১৯ মে। যখন বাম গণতান্ত্রিক, ধর্ম নিরপেক্ষ শক্তি সরকার গড়বে।’’
সূর্যবাবু এ দিন তুলে ধরেছেন সারদা থেকে নারদ। হেলিকপ্টারে চড়ে ঘুরে বেরানো নিয়েও দুর্নীতির প্রশ্নে বিজেপি ও তৃণমূলকে একযোগে বিঁধেছেন। তাঁর কথায়, “প্রধানমন্ত্রী দু’বছর আগে বলেছিলেন বিদেশ থেকে হলেও টাকা উদ্ধার করবেন। আরে বিদেশ তো ছেড়ে দিন আপনি ওঁর(তৃণমূল) যে নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ জেলে আছেন তাঁদের থেকে আপনি লুঠের টাকা উদ্ধার করে ফেরত দিতে পারছেন না। এই দিদি ও মোদী একজন আর একজনকে বাঁচাচ্ছেন। একই মুদ্রার এ-পিঠ আর ও-পিঠ।’’ পরে তাঁর সংযোজন, “সব গণতান্ত্রিক, ধর্ম নিরপেক্ষ শক্তি একজোট হয়ে দাঁড়িয়েছে এই অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে। তাই আওয়াজ উঠছে, তৃণমূল হটাও বাংলা বাঁচাও। বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও।’’
সিপিএমের দাবি, শাসকের সন্ত্রাস উপেক্ষা করেই এ দিন সভায় এসেছেন কর্মী-সমর্থকেরা। মিছিল-সভার মুখগুলোও বলে দিচ্ছে তাঁদের নতুন করে হারানোর কিছু নেই। এ দিন ব্যাংদার সভায় আসা সিপিএমের প্রভাতী বুথের নেতা চন্দন দে-ও মানলেন, “তৃণমূল হুমকি দিচ্ছে। তা-ও যাঁরা এসেছে তাঁদের ভয় সয়ে গিয়েছে।’’ ওই গ্রামেরই রুমা রানা বলছিলেন, “এখন পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে সকলের ভয় এখনও কাটেনি।”
এ দিন ব্যাংদার সভায় সূর্যবাবুকেও বলতে শোনা যায়, ‘‘উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ভয় দেখাচ্ছেন কারণ উনি ভয় পেয়েছেন। মানুষই ভয় জয় করবে।’’ আর কর্মী-সমর্থদের প্রতি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের বার্তা, “যেমন মিছিল করে এসেছেন সে ভাবেই ভোট দিতে যাবেন। যদি বাধা পান তবে তা ভেঙে চুরমার করে অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। জয় আপনাদের হবেই।’’