লোকসভা ভোটের মতোই মোর্চার বিরুদ্ধে পাহাড়ে জোরদার ‘লড়াই’-এর কথা বলে তৃণমূল প্রার্থীদের বিধানসভা ভোটে সমর্থনের ঘোষণা করল জিএনএলএফ। সেই সঙ্গে কালিম্পঙের তৃণমূল সমর্থিত জন আন্দোলন পার্টির (জাপ) প্রার্থী হরকাবাহাদুর ছেত্রীকেও সমর্থন করল জিএনএলএফ। রবিবার দার্জিলিঙের জাকির হোসেন রোডে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের ওই ঘোষণা করেছেন দলের সভাপতি মন ঘিসিঙ্গ। বৈঠকের পর প্রেস বিবৃতিতে তো বটেই, দফতরের বাইরে এসে মাইকে দলীয় কর্মী, সমর্থকদের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। গত লোকসভা ভোটেও দার্জিলিং আসনে তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়াকে সমর্থন করেছিল জিএনএলএফ।
দলের সভাপতি মন ঘিসিঙ্গ বলেছেন, ‘‘পাহাড়ের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে আমরা তৃণমূলকে দুটি আসনে সমথর্নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তেমনই, জাপের সঙ্গে আমরা কিছু বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করছি। বিশেষ করে, গোর্খাল্যান্ড না পাওয়া অবধি পাহাড়ের জন্য সংবিধান স্বীকৃত স্বাশাসিত পর্যদের দাবি তার মধ্যে অন্যতম।’’ মন ঘিসিঙ্গ জানান, পাহাড়ে একটি অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় রয়েছে। যাঁরা গোর্খা শব্দকে সামনে রেখে নানা অনৈতিক কাজকর্ম করছে। একনায়কতন্ত্র থেকে দুর্নীতি পাহাড়ে ছেয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, পাহাড়ে অস্ত্র আমদানি, রাজনৈতিক খুন করে পরিবেশকে বিষিয়ে তোলা হয়েছে। এর থেকে পাহাড়কে মুক্ত করার জন্য তাঁরা একজোট হয়ে লড়াই করতে চাইছেন বলে মন জানান।
মোর্চার তরফে দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেছেন, ‘‘এটাই হওয়ার ছিল। ওঁরা তো একজোট হয়েই ছিলেন। আবার তা প্রকাশ্যে আসল। ভোটের এর কোনও প্রভাব পড়বে না। আমরাই জিতব।’’
দলের তরফে যে প্রেস বিবৃতি জারি করা হয়েছে, তাতে এবারের ভোটকে অগ্নিপরীক্ষার সামিল এবং পাহাড়কে বাঁচানোর লড়াই বলেও জানানো হয়েছে। সেখানে পাহাড়ে শান্তি, ঐক্য বজায় রাখতে সংবিধান স্বীকৃতি যুক্ত পর্ষদ প্রয়োজন। দলীয় সূত্রের খবর, ২০০৭ সালে মোর্চার উত্থানের পর থেকে পাহাড়ে জিএনএলএফের ভাঙন শুরু হয়। এক সময় সুবাস ঘিসিঙ্গকে পাহাড় ছাড়া হতে হয়। ২০১১ সালে প্রার্থী দিলে পাহাড়ে গিয়ে তিনি প্রচার করতে পারেননি। তাঁকে নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি অভিযোগ করেছিলেন। সেই ভোটে অবশ্য মোর্চার সঙ্গে তিনটি আসনেই দলের মূল লড়াই হয়েছিল। সুবাস ঘিসিঙ্গের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে মন ঘিসিঙ্গ দলের দায়িত্ব নেন। ধীরে ধীরে গত এক বছরে তিনি পাহাড়ে সংগঠন পোক্ত করার কাজ শুরু করেন। পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় পদযাত্রাও করেন। কিন্তু প্রার্থী দিয়ে নিজেরাই লড়াই করা নিয়ে দলের অন্দরে নানা আলোচনা চলতে থাকে।
দলের একাংশ জানান, মোর্চার বিরুদ্ধে পাহাড়ে সরাসরি ভোটের ময়য়দানে এই সময় নামলে নতুন করে তৈরি সংগঠন ফের সমস্যায় পড়তে পারে। কারণ, এর আগেও সরাসরি মোর্চার কাছে সংঘাতে যেতেই নানা ভাবে দলীয় কর্মীদের উপরে হামলা, বাড়ি ভাঙচুর, মারধরের ঘটনা ঘটেছে। তা ফের শুরু হলে গত কয়েক মাসে নতুন করে যে সংগঠন তৈরি হয়েছে, তা আবার দুর্বল হয়ে যেতে পারে। সেই জায়গা থেকে রাজ্যের শাসক দলের পাশে থেকে সংগঠনকে টিকিয়ে রেখে আগামী দিনে আরও কিছু শক্তিশালী সংগঠন হলে তখনই ভোটে লড়াই করাটা ভাল বলে অধিকাংশ নেতাদের মনে হয়েছে।
জিএনএলফের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তৃণমূল এবং জাপ।