জোটবার্তা আরও জোরদার করতে জোর কদমে আসরে নেমে পড়লেন উত্তরবঙ্গের নানা জেলার কংগ্রেস ও সিপিএমের নেতারা। এ ব্যাপারে দক্ষিণবঙ্গকে যেন টেক্কা দিল উত্তরবঙ্গ। দক্ষিণবঙ্গে এখনও জোটের পক্ষে উত্তরের মতো জোরালো হাওয়া চোখে পড়েনি।
বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার থেকে রায়গঞ্জ, এমনই নানা ছবি ওই দু-দলের জেলা স্তরের নেতারা তুলে ধরেছেন। যেমন বেলা ১২টায় শিলিগুড়িতে ‘শিলিগুড়ি মডেল’-এর ‘জনক’ অশোক ভট্টাচার্য কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকারকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কোচবিহারে জেলা নেতাদের উদ্যোগে কংগ্রেস-সিপিএমের কর্মীদের যৌথ কর্মিসভা হয়েছে। জলপাইগুড়িতে কংগ্রেস-সিপিএমের যৌথ মিছিলের দিন ক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে। আলিপুরদুয়ারেও কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বরঞ্জন সরকারের পক্ষে সিপিএমের মিছিল-মিটিং কবে হবে, তার প্রস্তুতি চলেছে।
শুধু তাই নয়, শীঘ্রই যৌথ ভাবে আমজনতার প্রতি কংগ্রেস-সিপিএম জোটকে সমর্থনের আর্জি জানিয়ে আবেদনপত্র বিলির কথাও শিলিগুড়ি থেকে ঘোষণা করেছেন অশোকবাবু, শঙ্করবাবুরা। শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা দু’জনে একই সুরে বলেছেন, ‘‘এখন থেকে আমরা যৌথ কর্মসূচিতেও বেশি জোর দেব। মনোনয়ন পত্র জমা থেকে প্রচারের শেষ দিনের মিছিল, সব কিছুই এক সঙ্গে করা হবে। আমাদের আশা, অতীতে যেমন শিলিগুড়ি মডেল-এ সাফল্য মিলেছে, তেমন এ বারও উত্তরবঙ্গই গোটা রাজ্যকে পথ দেখাবে। সে জন্য আমাদের এক সঙ্গে অনেক পথ হাঁটতে হবে। আমজনতা সেটাই চাইছেন।’’ কংগ্রেস-সিপিএমের যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিআইয়ের নেতারাও।
কংগ্রেস ও সিপিএম উভয় দলের জেলা স্তরের নেতাদের একাংশ জানান, উত্তরবঙ্গের সব ক’টি জেলায় অশোকবাবু কী ভাবে ভোটে হারের পরে পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে ঘুরে দাঁড়িয়ে তৃণমূলকে পরাস্ত করেছেন, সেই বিবরণ লোকের মুখে ফিরছে। সে জন্য অশোকবাবুকে সামনে রেখে জোটের বার্তা আরও বেশি জোরাল করার পক্ষে মত দিচ্ছেন দুই দলের প্রায় সকলেই। ইতিমধ্যেই উত্তর দিনাজপুর জেলায় একাধিকবার গিয়ে অশোকবাবু সেখানে কংগ্রেস নেতা মোহিত সেনগুপ্তের সঙ্গে একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। মোহিতবাবুও পালে বাতাস জোরদার করতে উত্তর দিনাজপুর জেলার সিপিএম সম্পাদক অপূর্ব পালকে নিয়ে ঘুরছেন। মোহিতবাবু বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষ যে ভাবে জোটবদ্ধ হয়েছেন তা আঁটোসাটো করতে আমরা একযোগে সব কাজ করছি ও করব।’’ সূত্রের খবর, শিলিগুড়িতে তৃণমূলকে পুরবোর্ড থেকে দূরে রাখতে কংগ্রেসের ১৫ জন কাউন্সিলরকে বামেদের ১৭ জন সমর্থন করে বোর্ড গড়ার সুযোগ করে দেওয়ার সময়ে রায়গঞ্জ থেকে মোহিতবাবুও আড়াল থেকে ভূমিকা নিয়েছিলেন।
ঘটনা হল, ভোটের দিন যত কাছে আসছে, ততই কংগ্রেস-সিপিএমের নেতারা আড়াল সরিয়ে সামনে হাত ধরাধরি করে জোটের বার্তা জোরাল করতে আসরে নামছেন বলে দু-দলের নীচুতলার সমর্থকরাই মানছেন। তাঁরা এটাও জানিয়ে দিচ্ছেন, দূর থেকে এক সঙ্গে থাকার বার্তা দিলে আসন্ন বিধানসভা ভোটে যে কাজের কাজ হবে না, সেটা জেলা স্তরের সব নেতাকেই বুঝতে হবে। দলের নিচুতলার চাপ প্রবল হওয়ার জেরেই এ দিন উত্তরবঙ্গের পাহাড় ছাড়া অন্য সব ক’টি সমতল এলাকায় কংগ্রেস-সিপিএমের জেলা স্তরের অনেক নেতাই একযোগে আসরে নামতে বাধ্য হয়ছেন বলে দল সূত্রের দাবি। আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস নেতা বিশ্বরঞ্জন সরকার, জলপাইগুড়ির নির্মল ঘোষ দস্তিদারের মতো প্রবীণ নেতারাও চলতি সপ্তাহের মধ্যে অন্তত একটা বড় মাপের ‘জোট মিছিল’ করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
কংগ্রেস-তৃণমূলের জেলা স্তরের নেতাদের একযোগে কর্মসূচি নেওয়া, সাংবাদিক বৈঠক করা সহ প্রতিটি পদক্ষেপের উপরে সতর্ক নজর রাখছেন তৃণমূলের নেতারাও। তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের প্রথম সারির নেতা গৌতম দেব, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ কিংবা অমল আচার্যরা ‘নীতিহীন জোট’ আমজনতার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, বলে বারেবারে দাবি করছেন। কিন্তু নানা সময়ে দু-দলের প্রাপ্ত ভোটের যোগফল যে তৃণমূল প্রার্থীদের বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে, সেটা একান্তে তাঁদের অনুগামীদের অনেকেই মানছেন।
যে খবর অশোকবাবু, শঙ্করবাবুদের কাছেও পৌঁছেছে। অশোকবাবু বলেছেন, ‘‘শিলিগুড়িতে তৃণমূলকে পুরসভা, মহকুমা পরিষদ দখল করতে দেননি সাধারণ মানুষ। সেটায় আড়াল থেকে অনেকে আমাদের সাহায্য করেছিলেন। এ বার খোলাখুলি তৃণমূল বিরোধী জোট হয়েছে। জোটের পক্ষে জনমত যে ক্রমশ প্রবল হচ্ছে তা সকলেই বুঝছেন।’’