ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে চলছে স্পেশাল হোমগার্ডের প্রশিক্ষণ। নিজস্ব চিত্র।
তিনি প্রাক্তন মাওবাদী। আবার বর্তমানে তৃণমূলের ব্লক সভাপতিও। জঙ্গলমহলে শাসক দলের সেই নেতাই মাওবাদী-পুনর্বাসন প্যাকেজে পুলিশের স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি পেয়েছেন।
ওই প্যাকেজেই চাকরি পেয়েছিলেন মাওবাদী হানায় স্বামীহারা এক তৃণমূল নেত্রী। তিনি অবশ্য তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নরেন মাহাতো এবং ঝাড়গ্রাম জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী অনুশ্রী করের এই চাকরি পাওয়া নিয়ে ভোটের মুখে সরগরম জঙ্গলমহলের রাজনীতি। বিজেপির জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনে দলতন্ত্রের অভিযোগ আমরা বহুদিন ধরেই করছি। তৃণমূল নেতার পুলিশে চাকরি পাওয়া তারই প্রমাণ।’’ সঙ্গে তাঁরা জুড়ছেন, এতেই প্রমাণ হয় মাওবাদী-তৃণমূল আঁতাঁত কতটা পোক্ত। এই আঁতাত নিয়ে অনেক আগে থেকে সরব বামেরাও।
দলের অন্দরেও এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে তৃণমূলের ব্যাখ্যা, প্রাক্তন মাওবাদী কেউ যদি জীবনের মূলস্রোতে ফিরে আসে তাতে তো অন্যায়ের কিছু নেই। পুলিশেরও বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জঙ্গলমহলে প্রাক্তন মাওবাদী ও মাওবাদী হানায় স্বজনহারাদের স্পেশাল হোমগার্ড পদে নিয়োগ করা হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে জেল খাটা প্রাক্তন মাওবাদী নরেনও সেই সূত্রে চাকরি পেয়েছেন।
জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, চলতি বছরের গোড়ায় ঝাড়গ্রামে স্পেশাল হোমগার্ড পদে নিয়োগের জন্য প্রায় তিনশো জনের নামের তালিকা তৈরি হয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে ১৮২ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রাক্তন মাওবাদী, মাওবাদী হানায় নিহতের পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি ওই তালিকায় হাতির হানায় মৃতের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। নরেনও এখানেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
জনসাধারণের কমিটির আন্দোলনে ছত্রধর মাহাতোর সঙ্গী ছিলেন ঝাড়গ্রামের লবকুশ গ্রামের নরেন। গত সেপ্টেম্বরে ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ ব্লক তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। তৃণমূলের পদে থেকে তাঁর হোমগার্ডের চাকরি পাওয়া নিয়ে দলেরই একাংশ ক্ষুব্ধ। জানা যাচ্ছে, আগেও জেলার এক ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি পেয়েছেন। আর এক ব্লক যুব সভাপতি প্রাক্তন মাওবাদী হিসেবে কয়েক বছর আগে স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি পেয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘‘দলীয় পদে থেকে প্যাকেজে চাকরি পেলে ক্ষোভ হওয়াটা স্বাভাবিক।
এতে সাধারণ মানুষের কাছে অন্য বার্তা যাবে।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি দুলাল মুর্মু অবশ্য বলেন, ‘‘নরেন পদ্ধতি মাফিক চাকরি পেয়েছেন। এতে দলের অস্বস্তির কিছু নেই।’’ দলীয় পদ থেকে নরেনকে সরানোর ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি। আর নরেন শুধু বলছেন, ‘‘প্রতিদিন ট্রেনিংয়ে যাচ্ছি।’’
২০০৯ সালে অক্টোবরে বেলপাহাড়িতে মাওবাদী হানায় খুন হন তৃণমূল নেতা জলদবরণ কর ও তাঁর ভাই আশিসবরণ কর। জলদবরণের স্ত্রী অনুশ্রী জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী। মাস দু’য়েক আগে থানা থেকে জানানো হয়, চাকরির তালিকায় অনুশ্রী ও তাঁর জা প্রতিমার (আশিসবরণের স্ত্রী) নাম রয়েছে। অনুশ্রী চাকরি নিতে রাজি হননি। আর প্রতিমার পরিবর্তে তাঁর ছেলে মিত্রময় কর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
চাকরি পেয়েও নিলেন না কেন?
অনুশ্রীর জবাব, ‘‘এখন জেলা সভানেত্রীর সুবাদে যে সম্মান পাচ্ছি, স্পেশাল হোমগার্ডে নিয়োগের পর তা থাকবে না। উল্টে পুলিশ অফিসারদেরকে স্যালুট ঠুকতে হবে। ওই চাকরি আমি করতে পারব না।’’