আলিমুদ্দিনে বিমান বসু ও সীতারাম ইয়েচুরি। রবিবার। ছবি: সুদীপ আচার্য
অতীতের নজির ভেঙে জনমত নিয়েই এ বার চূড়ান্ত হল বামেদের নির্বাচনী ইস্তাহার। এবং সেই ইস্তাহারেই থাকল অতীতের ভুলের নজির শুধরে নেওয়ার আশ্বাস!
ইস্তাহারে বামেরা ডাক দিয়েছে, বিধানসভা ভোটে জিতে রাজ্যে ফের ক্ষমতায় এলে ‘রাজ্য প্রশাসন দায়বদ্ধ ও সংবেদনশীল করা হবে। অবাঞ্ছিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে’। ছোট ও মাঝারি শিল্পে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি বৃহৎ শিল্প গ়ড়তেও ফের উদ্যোগী হবে বামেরা। শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক পদক্ষেপের কথাও বলা হয়েছে প্রকাশিত ইস্তাহারে।
বস্তুত, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বাইরে সুস্থ প্রশাসন গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল বামেদের খসড়া ইস্তাহারেই। সিপিএমের রাজ্য কমিটির ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই খসড়া আপলোড করে জনতার মতামত চাওয়া হয়েছিল। জনতার দরবার থেকে আসা সে সব প্রস্তাব মিলিয়ে নিয়ে চূড়ান্ত যে ইস্তাহার তৈরি হয়েছে, সেখানে আরও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে দূরে রাখার প্রতিশ্রুতি। বাম সূত্রেই মেনে নেওয়া হচ্ছে, প্রশাসনের কাজে ‘অবাঞ্ছিত’ দলীয় হস্তক্ষেপের দায়ে অতীতে অভিযুক্ত ছিল বামেরা। তখন বলা হতো, মহাকরণ চলে আলিমুদ্দিনের আঙুলের ইশারায়। আর এখন নবান্ন চলছে কালীঘাটের ইচ্ছায়! তবে আগে যে সব হস্তক্ষেপ ছিল সূক্ষ্ম এবং গোপন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় সে সবই অনেক বেশি প্রকট। এক বাম নেতার কথায়, ‘‘মানুষ চেয়েছেন, অতীতের সেই ভুল আর যেন আমাদের না হয়। সেই জন্যই এমন ভাবে ইস্তাহারে আশ্বাস রাখা হয়েছে, যাতে প্রশাসন পরিচালনা থেকে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ— সব ক্ষেত্রেই আমাদের সংশোধনের চেষ্টা বোঝা যায়।’’
বামফ্রন্টের বৈঠকের পরে রবিবার আলিমুদ্দিনে আনুষ্ঠানিক ভাবে ইস্তাহার প্রকাশ করেছেন বিমান বসু। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ইস্তাহার নিয়ে অনেক বক্তব্য ও পরামর্শ এসেছে। তার মধ্যে অনেক কিছুই গ্রহণ করা হয়েছে। যে গুলো আমাদের ইস্তাহারের মূল কাঠামোর সঙ্গে একেবারেই মেলে না, সেগুলো নেওয়া যায়নি।’’ বিমানবাবুর যুক্তি, খসড়া ইস্তাহার ছিল ১২ পাতার। জনগণের মতামত অন্তর্ভুক্ত করার পরে তা ১৬ পাতায় দাঁড়িয়েছে। যদিও এ দিন আলিমুদ্দিনে সিপিএমের এক রাজ্য নেতাকে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ইস্তাহারটা যেন ছোট হয়ে গেল বলে মনে হচ্ছে! কলেবর আরও বাড়বে বলে তিনি আশা করেছিলেন!
প্রচ্ছদে চিরাচরিত কায়দায় ‘বামফ্রন্টের ইস্তাহার’ বলেই লেখা হয়েছে এ বার। কিন্তু ভিতরে ‘বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বিকল্প’ বলে শেষ অধ্যায় সংযোজন করা হয়েছে। যেখানে এক নজরে বলা হয়েছে, বিকল্প শক্তি ক্ষমতায় এলে কী কী কাজে অগ্রাধিকার থাকবে। এক বাম নেতার বক্তব্য, ‘‘সরাসরি কংগ্রেসকে নিয়ে নতুন সরকার গড়ার আহ্বান তাত্ত্বিক ভাবে আমাদের ইস্তাহারে নথিভুক্ত করা সম্ভব ছিল না। বাম ঐক্যকে অটুট রেখেই তাই এখানে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বিকল্পের কথা বলা হয়েছে।’’ কমিটি গড়ে পৃথক ইস্তাহার তৈরির কাজ চালাচ্ছে প্রদেশ কংগ্রেসও।