ছাপ্পা ভোটে অভিযুক্ত শাসক দল

বাম কংগ্রেস জোট প্রথম থেকেই হুঙ্কার দিচ্ছিল, জেলায় এ বার তৃণমূল কোনও আসনই পাবে না। রবিবার ভোট মিটতে সে কথাই আবার বললেন তাঁরা। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, ফল আগের বারের চেয়ে ভাল হবে।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৫
Share:

মালদহে ছিল ৭-৫।

Advertisement

২০১১ সালের নির্বাচনে জেলার ১২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল মাত্র একটি আসন। মানিকচক বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন সাবিত্রী মিত্র। আর কংগ্রেস পেয়েছিল আটটি এবং বামফ্রন্ট তিনটি। ২০১৩ সালে কংগ্রেস ছেড়ে বিধানসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলের প্রতীকে লড়ে ইংরেজবাজার থেকে জয়ী হয়েছিলেন কৃষ্ণেন্দুনারায়ণবাবু। পরে দলবদলের জেরে জেলাতে তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় পাঁচটিতে। আর বাম-কংগ্রেস জোট সাতটি।

কংগ্রেস এবং বাম নেতাদের দাবি, গত লোকসভা নির্বাচনের বাম কংগ্রেসের ফলাফল যোগ করলে তৃণমূল শূন্য। জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রেই বাম-কংগ্রেসের থেকে জোটের অঙ্কের হিসেবে তৃণমূল ২৫ থেকে ৩০ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছে। লড়াইয়ের ময়দানে বিজেপিও তেমন দেখা যায়নি।

Advertisement

অবস্থা সামাল দিতে ইংরেজবাজারের তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীকে এ দিন দিনভর ছোটাছুটি করতে দেখা গিয়েছে। এই কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস জোট সমর্থিত নির্দল নীহাররঞ্জন ঘোষও সমান তালে প্রচার করেছেন। কৃষ্ণেন্দুবাবুর মতোই জোটের অঙ্কের হিসেবে চাপে রয়েছেন মানিকচকের প্রার্থী তথা টানা পাঁচ বারের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রও। এ দিন অবশ্য তাঁকে খুব বেশি দেখা যায়নি। সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রে শাসক দল দাঁত ফোটানোর মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছে। ওই কেন্দ্রের মোজমপুর, সুজাপুরে বেশ কিছু বুথে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আবু নাসের খান চৌধুরী। তবে তাঁর পক্ষে জেতা কঠিন বলে মানছেন দলেরই একাংশ নেতৃত্বরা। তাঁদের কথায়, ওই কেন্দ্রে ১৯৬২ সাল থেকে কংগ্রেস জয়ী হয়ে আসছে। ইতিহাস ও জোটের অঙ্কের হিসেব করলেও এখানেও তেমন লাভ হবে না তৃণমূলের।

রবিবার জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম বলেন, ‘‘মালদহে প্রথম শক্তি কংগ্রেস। দ্বিতীয় শক্তি বামফ্রন্ট। তাই দুই শক্তি এক হয়ে যাওয়ায় এখানে তৃণমূল কোন ফ্যাক্টরই হবে না।’’ তাঁদের যুক্তি, জেলাতে একে তৃণমূলের কোনও শক্তি নেই, তার উপরে রয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। যা তৃণমূলের হারের অন্যতম কারণ।

এই বিষয়টি মানছেন তৃণমূলের একাংশ নেতাও। তাঁদের কথায়, জেলাতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব না থাকলে কমপক্ষে তিনটি আসনে জেতা সম্ভবনা ছিল। যদিও এই বিষয় উড়িয়ে দিয়ে ভালো ফল হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। মৌসম নুর বলেন, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই বলছিলাম জেলা থেকে তৃণমূল শেষ হয়ে যাবে। এ দিনের ভোটের পরে তা আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। আমরা ১২টিই আসন পেয়ে জয়ী হব। তবে শাসক দল বেশ কিছু জায়গায় দাঁত ফোটানোর চেষ্টা করেছে। তাতেও তাঁদের কোন লাভ হবে না।’’ মৌসমের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘এ বার জেলা থেকে তৃণমূল নামক দলটি রাজনৈতিক ভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। জেলাতে যা ভোট হয়েছে আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গিয়েছে।’’

বিরোধীদের বক্তব্যের পাল্টা সমালোচনা করলেও দল ক’টা আসন পাবে, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি তৃণমূল নেতৃত্বরা। কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘বাম কংগ্রেস জোট দিবা স্বপ্ন দেখছে। ১৯-মের পর স্বপ্নভগ্ন হবে। আর কংগ্রেস বাম নেতৃত্বরা গণৎকার। তাই ভোটের ফল আগাম বলে দিতে পারেন তাঁরা। আমরা গণৎকার নই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement