অতীত মনে রাখতে চান না ইলিয়াস

নারদ কাণ্ডে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। আর সেই খবর এক ঝটকায় কয়েক বছর আগের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে নন্দীগ্রামের প্রাক্তন সিপিআই বিধায়ক ইলিয়াস মহম্মদকে।

Advertisement

আরিফ ইকবাল খান

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০২:১৩
Share:

বাড়িতে ইলিয়াস। ফাইল চিত্র।

নারদ কাণ্ডে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। আর সেই খবর এক ঝটকায় কয়েক বছর আগের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে নন্দীগ্রামের প্রাক্তন সিপিআই বিধায়ক ইলিয়াস মহম্মদকে।

Advertisement

ইলিয়াস ঘুষ-কাণ্ডে অভিযুক্ত হন একটি চ্যানেলের স্টিং অপারেশনের জেরে, যার হোতা ছিলেন তদানীন্তন সাংবাদিক, অধুনা তৃণমূল নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। সেই সময় বিধানসভার অধিবেশনে সরব হয়েছিলেন এক তৃণমূল বিধায়ক। দাবি করেছিলেন, ইলিয়াস মহম্মদের এমন আচরণের ফলে বিধানসভা ও বিধায়কদের সম্মানহানি ঘটেছে। ইলিয়াসের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব সভায় উত্থাপন করেছিলেন তিনিই। সেই সৌগত রায় এখন দমদমের তৃণমূল সাংসদ। সম্প্রতি প্রকাশিত নারদের স্টিং ভিডিওতে যাঁকে পাঁচ লক্ষ টাকা নিতে দেখা গিয়েছে।

সব কিছু কি মনে পড়ে যাচ্ছে ইলিয়াসের?

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকালে চৌরঙ্গী বাজারে কাগজ পড়তে গিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের এই প্রাক্তন সিপিআই বিধায়ক। বাড়িতে সাংবাদিককে বসে থাকতে দেখে কিছুটা ইতঃস্তত করেন। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বলতে শুরু করেন ইলিয়াস। জানান, কলকাতার এমএলএ হস্টেলে সে দিন দেখা করতে এসেছিলেন শঙ্কুদেব পণ্ডা। জানিয়েছিলেন, তিনি নন্দীগ্রামের উন্নয়নের শরিক হতে চান। এমনকী একটি বিদেশি সমাজসেবী সংস্থার সাথে হাত মিলিয়ে নন্দীগ্রামের উন্নয়নের কাজও করতে চেয়েছিলেন। ইলিয়াসের কথায়, ‘‘আমি বলি, আসুন সবাই মিলে নন্দীগ্রাম গড়ি।’’ ইলিয়াসের দাবি, শঙ্কুদেব এই কাজের জন্য একটি সার্টিফিকেট চান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তা দিয়েও দেন। এরপরই শঙ্কুদেব তাঁকে টাকা দিতে চান। ইলিয়াসের কথায়, ‘‘জোর করেই আমার হাতে দশ হাজার টাকা দিয়েছিল। কিন্তু আমি টাকা নিতে চাইনি। টাকা না নেওয়ায় শঙ্কু বলেন, এটা আপনার পার্টি ফান্ডে রাখুন। আমি বলি, আমাদের দলে এভাবে টাকা নেওয়া যায় না।’’ ইলিয়াসের আক্ষেপ, ‘‘ভিডিওতে শুধু আমার হাতে টাকা দেখা গিয়েছে। পরে তো ওই টাকা ফেরতের ভিডিও
দেখানো হয়নি।’’

২০০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর। সে দিন বিধানসভার অধিবেশন বসতেই তৃণমূল বিধায়ক সৌগত রায় অভিযোগ এনেছিলেন, স্টিং অপারেশনে সিপিআই বিধায়ক শেখ ইলিয়াস মহম্মদকে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছে। দাবি করেছিলেন, এর ফলে বিধানসভা ও বিধায়কদের সম্মানহানি ঘটেছে। ইলিয়াসের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব সভায় উত্থাপন করেছিলেন তিনিই। নথি বলছে, বিধানসভার স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম অভিযোগের সিডি চেয়েছিলেন। সৌগতবাবু বলেছিলেন, তিনি সিডি সংগ্রহ করে দেবেন। কেন একটা স্টিং অপারেশনের জেরে স্পিকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে, সে প্রশ্ন সে দিন ওঠেনি। বরং সৌগতবাবুদের চাপেই স্পিকার সে দিন কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহনপালের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন। কমিটিতে ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সিপিএমের মুস্তাফা বিন কাশেম (অধুনা প্রয়াত) প্রমুখ। ইলিয়াস বলেন, ‘‘সেই সময় আমার পদত্যাগ করা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। দলকে বলেছিলাম, ইলিয়াসের দারিদ্র থাকতে পারে কিন্তু লোভ নেই। পরিবার ছাড়া আর কেউ বিশ্বাস করেনি আমার কথা।’’ একটু থেমে ইলিয়াস আবার বলেন, ‘‘পরে শুনেছিলাম আমাকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।’’

ইলিয়াস পুত্র সাদ্দাম বলেন, ‘‘বাবার হাতে টাকা দেখা গিয়েছিল তাতেই বাবা পদত্যাগ করেছিলেন। নারদ কাণ্ডে অনেকে সেই টাকা নিচ্ছেন রীতিমত কেতায়। দেখতে চাই তাঁদের বিবেক কী বলে!’’ নতুন করে কাগজে আবার উঠে আসায় উদ্বিগ্ন ইলিয়াস। এত জটিলতায় যেতে চান না আর । তাই বলেন, ‘‘সময় সব বলবে। আর নতুন করে কোনও সমস্যায় পড়তে চাই না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement