ফুটিসাঁকো সমস্যা মোকাবিলায় নির্দেশ নির্বাচনী আধিকারিকের

জোগাড় করতে হবে দুষ্কৃতীদের খুঁটিনাটি

কলকাতায় কমিশনের ফুল বেঞ্চের বৈঠকে ফুটিসাঁকোয় কড়া নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্য নিবার্চন কমিশনার নসীম জৈদী। তিন জেলার ওই সংযোগস্থলে দুষ্কৃতীদের অবাধ যাতায়াত, দুষ্কর্ম বাড়ছে বলেও সমালোচনা করেছিলেন। জেলায় নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক দল আসার পরেও ফুটিসাঁকো নিয়ে চিন্তা ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৬ ০১:৫১
Share:

ফুটিসাঁকো মোড়ে চলছে কর্তাদের আলোচনা। —অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

কলকাতায় কমিশনের ফুল বেঞ্চের বৈঠকে ফুটিসাঁকোয় কড়া নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্য নিবার্চন কমিশনার নসীম জৈদী। তিন জেলার ওই সংযোগস্থলে দুষ্কৃতীদের অবাধ যাতায়াত, দুষ্কর্ম বাড়ছে বলেও সমালোচনা করেছিলেন। জেলায় নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক দল আসার পরেও ফুটিসাঁকো নিয়ে চিন্তা ছিল। এ বার আবারও প্রশ্নের মুখে পড়ার আগে ফুটিসাঁকোর সমস্যা মেটাতে বৈঠকে বসলেন তিন জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারেরা। ছিলেন নির্বাচন কমিশনের তরফে বর্ধমান, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দায়িত্বপ্রাপ্তঅতিরিক্ত সিইও শৈবাল বর্মন।

Advertisement

বর্ধমানের কেতুগ্রামের এই ফুটিসাঁকো মোড় আসলে বর্ধমান, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ— এই তিন জেলার সংযোগস্থল। যার উত্তর-দক্ষিণে চলে গিয়েছে বাদশাহী রোড, পশ্চিমে কীর্নাহার রোড ও পূর্বে কাটোয়া রোড। এই মোড়কে কেন্দ্র করে একটি বৃত্ত আঁকলে ৬ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে পাওয়া যাবে তিন জেলার চারটি থানা এলাকা। এমন ভৌগলিক অবস্থান হওয়ার সুবাদে এক জেলায় দুষ্কর্ম করে আর এক জেলায় দুষ্কৃতীরা সহজেই পালিয়ে যেতে পারে বলে বারেবারে প্রশাসনের আলোচনায় উঠে এসেছে। নির্দিষ্ট সীমানা না থাকায় অপরাধীদের ধরা মুশকিল হয়ে পড়ে, অনুপ্রবেশ সহজে হয়— এমন আলোচনাও হয়েছে। এ বার ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ফুটিসাঁকোয় তাই বিশেষ নজর কর্তাদের। মঙ্গলবার আড়াইটে নাগাদ কেতুগ্রামের ১ ব্লকের কান্দরায় পৌঁছে যান বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা। বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ একসঙ্গে ফুটিসাঁকো এলাকায় পৌঁছন তাঁরা। কিছুক্ষণ এলাকা ঘুরে দেখার পরে ফিরে কান্দরা পঞ্চায়ের অফিসের কাছে আসেন। সেখান থেকে কান্দরা হাইস্কুল হয়ে মোড়াম রাস্তা ধরে বাজার ঘোরেন। গ্রামের ভেতরে ঢুকেও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেন। চায়ের দোকানদার, পথচলতি মানুষের কাছে থেকে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রয়েছে কি না, ভোটের আগে কেউ ভয় দেখাচ্ছে কিনা, সে সবও জানতে চান

ওই কর্তারা। তবে কোনও রকম উত্তেজনা রয়েছে বলেই অভিযোগ জানাননি কেউ। এরপরে কান্দরা ব্লক অফিসে ফিরে আসেন তাঁরা। সওয়া চারটে নাগাদ মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রত্নাকর রাও এবং পুলিশ সুপার সি সুধাকর এলাকায় পৌঁছন। তার কিছুক্ষণ পরে আসেন বীরভূমের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী এবং পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। ছিলেন নানুর, লাভপুর, ভরতপুর, বড়ঞা, কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোট থানার ওসি আইসিরা। এসিডিপিও, সিআইরাও ছিলেন। বৈঠকে দেখা যায় নির্বাচনে কাটোয়া মহকুমার দায়িত্বে থাকা বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক অশোক রায়কেও। ঘণ্টাখানেকের বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়ছিল ফুটিসাঁকো ও তৎসংলগ্ন এলাকা।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আলোচনায় বারবার উঠে আসে মুখ্য নির্বাচন কমিশনের কড়া নজরে রয়েছে ফুটিসাঁকো। চিন্তার কারণ হিসেবে সাম্প্রতিক কালে নানুর ও লাভপুরের একাধিক সংঘর্ষ ও দুষ্কৃতীদের কাজকর্মের কথা বলা হয়। প্রতি ভোটে এই এলাকা উত্তপ্ত হওয়া বা তিন জেলার অস্ত্র পাচারের অন্যতম পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই এলাকা, সেই আলোচনাও হয়। পুলিশ কর্তারা জানান, যে কোনও নির্বাচনের আগেই সন্ত্রস্ত থাকেন এই এলাকার ভোটারেরা। এ বারও যাতে সেই পরিস্থিতি না হয় সে জন্য প্রত্যন্ত এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুটমার্চ করানোর কথা বলা হয়। যাতে ভোটারেরা আস্থা ফিরে পান। জেলাশাসকেরা ও নির্বাচন কমিশনের ওই আধিকারিক মহকুমাশাসকদের প্রত্যেক দিন ১০টি করে স্পর্শকাতর বুথ ঘুরে দেখার পরামর্শ দেন। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি বুঝে সেই মতো উপর মহলে জানানো ও ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়। জোর দেওয়া হয় অস্ত্র উদ্ধারেও। অভিযুক্ত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের কথাও বলা হয়। এ ছাড়া জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা বাড়ানোর কথা বলেন পুলিশ কর্তারা। মুর্শিদাবাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও বেশি করে উঠে আসে। ডোমকল , জলঙ্গির উপর নজরদারির কথাও বলা হয়।

এ ছাড়া জেলায় জেলায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক জমা দেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল তা পূরণ হয়নি বলে জানান জেলাশাসকেরা। তা দ্রুত শেষ করার কথা বলা হয়।

এর সঙ্গেই ২০১৫ সালের পয়লা ডিসেম্বরের পরে যাঁদের নাম পুলিশের খাতায় রয়েছে তাদের খুঁটিনাটি পরিচয় জেলা প্রশাসনকে জোগাড় করার নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই নির্বাচন কমিশনের আধিকারিক দুষ্কৃতীদের ফোন নম্বর, কোন এলাকায় কেমন গতিবিধি তার বিস্তারিত বিবরণ তৈরি রাখতে বলেন। এমনকী, দুষ্কতীদের পরিচিতদের ফোন নম্বর জোগাড় করে রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়। যাতে সহজেই খুঁজে বের করা যায় তাদের। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে এমন কয়েকজনের ফোন নম্বর জোগাড় কররা কথাও বলা হয়।বৈঠক শেষে পৌঁনে ছ’টা নাগাদ কান্দরা ব্লক অফিস থেকে বেরিয়ে ফুটিসাঁকো মোড়ে পৌঁছন কর্তারা। কোন রাস্তা কোন দিকে গিয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে আসে মোড়ে সিসিটিভি লাগানো হলে একটা অংশের গতিবিধি দেখা যাবে। কিন্তু ফাঁক গলে অপরাধীদের বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তাতে থেকে যাবে, সে কথাও উঠে আসে। ফলে আশপাশের পুরো এলাকা জুড়েই নজরদারি, তল্লাশি বাড়ানোর আলোচনা হয়। তিন জেলার নিজেদের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর পরামর্শও দেন ওই কর্তা। পরে বর্ধমান জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের কাছে এরপরেও ফুটিসাঁকোর প্রসঙ্গে উঠবে। সেখানে যাতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয় তার জন্য কার্যত ক্লাস নিয়ে গেলেন ওই আধিকারিক।’’ আর নির্বাচন কমিশনের ওই আধিকারিক শৈবাল বর্মন বলেন, ‘‘প্রাক নির্বাচনী পর্যালোচনা করা হল। শান্তিপূর্ণ ভোট দিতে কী করা উচিত তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জেলাশাসক ও পুলিশ আধিকারিকদের নির্ভয়ে ভোট করাতে যা ব্যবস্থা দরকার তা নিয়ে বলা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement