ভোট মিটতে না মিটতেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমশ তাত ছড়াচ্ছে। অশান্তি শুরু হয়েছে জেলার বেশ কয়েকটি এলাকায়। কোথাও অভিযোগ উঠছে শাসকদলের বিরুদ্ধে, তো কোথাও অভিযুক্ত বিরোধী জোট। পাড়ুই থেকে মহম্মদবাজার, মাড়গ্রাম, মুরারই, নানুর— ছবিটা সর্বত্র একইরকম ছিল সোমবার।
এ দিন আঁচ এসে পড়ে মহম্মদবাজারের গণপুর অঞ্চলে। তৃণমূলের দাবি, রবিবার ভোট মিটতেই রাত্রি আটটা নাগাদ গণপুরের কাটাপাহাড়ি গ্রামে তৃণমূল সমর্থকদের উপর চড়াও হয় সিপিএম সমর্থকরা। মারধর ও বাড়িঘর ভাঙচুর করে তিনটি পরিবারকে গ্রাম ছাড়া হয়েছে। ওই ঘটনার পর রাত্রি দশটা নাগাদ, সিপিএমের গণপুর লোকাল কমিটির বাড়িতে তৃণমূল হামলা করেছে বলে সিপিএমের পক্ষেও অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, এখনও কোনও পক্ষ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, স্থানীয় তৃণমূল সমর্থকদের দাবি, রবিবার রাত্রি আটটা নাগাদ সিপিএমের লোকজন তিন তৃণমূল সমর্থকদের বাড়িতে হামলা করে। তৃণমূল সমর্থক জয়ন্ত হেমব্রম, জিতেন হেমব্রম ও সুনীল হেমব্রমরা বলেন, ‘‘রাত্রি ৮টা নাগাদ, সিপিএম নেতা সুশীল ঢেঙরের নেতৃত্বে তাঁদের সমর্থকরা আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়। মারধোর করে বাড়ি ভাঙচুর করে। আমরা গণপুর দলীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নিই।’’ সুনীলবাবু বলেন, ‘‘আমাদের উপর হামলার কথা দলের নেতা গৌতম মণ্ডলকে জানাই। রাত্রে পুলিশ আসে। সোমবার সকালে মহম্মদবাজার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (প্যাটেলনগরে অবস্থিত) চিকিৎসা করাই।’’
এ দিকে সিপিএমের গণপুরের এলসিএস সুশীল ঢেঙরের পাল্টা দাবি, ‘‘ওই গ্রামের ঘটনার সঙ্গে আমি বা আমাদের দলের কেউ যুক্ত নয়। সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ।’’ গৌতমবাবুর দাবি, ‘‘সুশীলবাবুর নেতৃত্বে সিপিএম সমর্থকরা তিনটি তৃণমূল সমর্থকের পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করেছে।
অন্য দিকে রবিবার ভোট চলাকালীন এবং ভোট পর্ব চুকে যাওয়ার পর কংগ্রেস সমর্থকদের মারধর ও বাড়ি দোকানঘর ভাঙার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মুরারই বিধানসভা এলাকার ঘটনা। ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার রাতেই ঘণ্টা খানেক মুরারই থানায় অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ও স্মারকলিপি জমা দেন। দোষী ব্যক্তিদের গ্রেফতারের দাবিতে কংগ্রেস প্রার্থী আলি মর্তুজা খানের নেতৃত্বে মুরারই থানায় বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস ও সিপিএম কর্মীরা। জোট সমর্থকদের অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্য কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে চলে গিয়েছে। তাই তৃণমূল কর্মীরা প্রভাব খাটিয়ে বুথ দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছিল। বাধা দিতে গেলে বুথের বাইরে ওরা একজন কর্মীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরে একজন কংগ্রেস কর্মীকে নর্দমায় ফেলে মারধর করে। এবং বাড়িতে ঢুকে দরজায় লাথি মারে। বাড়ির বাইরে টাঙানো কংগ্রেস প্রার্থীর ফ্লেক্স ভেঙে দেয়।’’ তৃণমূল অবশ্য এই ঘটনা তাদের ‘জানা নেই’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশ ঘটনা খতিয়ে দেখছে।
তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির বাড়ির একটি অংশে অগ্নিসংযোগের অভিযোগের উঠল জোট সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মাড়গ্রাম থানার বুধিগ্রামের ঘটনা। তৃণমূলের রামপুরহাট ২ ব্লক সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পথে ঘটনার কথা জানতে পারি। ভোট চলাকালীন ছাপ্পা ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে জোট সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূল সমর্থকদের বচসার জেরে এই ঘটনা। থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।’’
তৃণমূলের বুধিগ্রাম অঞ্চল সভাপতি আবু সেলিমের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
শান্তিনিকেতন
জোটকে ভোট দেওয়ার খেসারত হিসেবে, এলাকার তিনটি নলকূপ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার জেরে অনুব্রত মণ্ডলের খাস তালুক বোলপুরের ফুলডাঙা এলাকাতে গোপাল হাঁসদা নামে এক তৃণমূল কর্মীকে মারধোর করল স্থানীয়রা। গোপালকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তৃণমূলের দাবি, নলকূপ ভাঙার সঙ্গে তৃণমূল যুক্ত নয়।