অঙ্কন: সুমন চৌধুরী।
কতটা পথ পেরোলে পরে অচিন্ত্যকে পাওয়া যাবে, ভাবছেন অনিল দত্ত।
ভাবছেন। ঘামছেন। মুছছেন। ফের ঘামছেন।
কিন্তু, খুঁজে পাচ্ছেন না অচিন্ত্য ঘোষকে। পাচ্ছেন না দলের প্রতীক দেওয়া ‘বি’ ফর্মটাও।
সেই লক্ষ্মীবার থেকে গরু খোঁজার মতো প্রতীকের ফর্ম খুঁজছেন কাটোয়ার বিজেপি প্রার্থী অনিল দত্ত। খালি বলছেন, ‘‘কোন গ্রহের ফেরে যে ওর হাতে ফর্ম দিলাম!’’ প্রার্থী যাঁকে দুষছেন তিনি দলেরই কাটোয়া শহর সভাপতি অচিন্ত্যবাবু। অনিলবাবুর অভিযোগ, তাঁকে প্রার্থী হতে না দেওয়ার জন্যই ফর্মটা নিয়েই কেটে পড়েছেন অচিন্ত্যবাবু।
বর্ধমান গ্রামীণ এলাকায় মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল সোমবার। নিয়ম মতো, দলের রাজ্য স্তরের কোনও নেতা দলের প্রার্থীদের প্রতীক চিহ্ন দেন। তার জন্য নির্দিষ্ট ‘এ’ ফর্ম মনোনয়ন পেশের দিনই নির্বাচন আধিকারিকের কাছে দিতে হয় প্রার্থীকে। ওই রাজ্য নেতার সই সংবলিত ‘বি ফর্ম’ জমা পড়ে নির্বাচন কমিশনে। অনিলবাবু সেই ফর্ম জমা করতে গিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার দুপুরে কাটোয়া আদালতে। বিজেপির জেলা (বর্ধমান পূর্ব) পর্যবেক্ষক অলোক কুণ্ডু প্রার্থীর নাম লেখা প্রতীকের ফর্ম নিয়ে পৌঁছন। ছিলেন আরও নেতা-কর্মী। অভিযোগ, কথার ফাঁকেই ফর্মটি দেখতে চান অচিন্ত্যবাবু। হাতে পেতেই ‘ফর্ম ফোটোকপি করে আনছি’ বলে ধাঁ হয়ে যান।
দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষার পরেও অচিন্ত্যবাবুর দেখা না পেয়ে বাড়ি ফেরার কথা পাড়েন দলের পর্যবেক্ষক। বিজেপি কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, অলোকবাবুকে কার্যত হাতেপায়ে ধরে কাটোয়া থানায় নিয়ে যান দলীয় প্রার্থী। সেখানে অচিন্ত্যবাবু-সহ পাঁচ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন অনিলবাবু।
দলের অন্দরের খবর, অনিল-অচিন্ত্য সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়। গত বছর কাটোয়া পুরভোটের আগে দলের তহবিল তছরুপের অভিযোগ উঠেছিল অনিলবাবুর বিরুদ্ধে। কাছাড়ি রোডের দফতরের ভিতর তাঁকে মারধর ও আটকে রাখার ঘটনাও ঘটে। কয়েক মাস পরেই অচিন্ত্যবাবু শহর সভাপতি হন। এ বার ভোটে অনিল দত্ত যাতে প্রার্থী না হন, তার জন্য তিনি উঠেপড়ে লেগেছিলেন বলে অনিল-অনুগামীদের দাবি। শুক্রবার অনিলবাবু বলেন, “হাতে মাত্র শনি ও সোমবার —দু’দিন। এর মধ্যে রাজ্য থেকে নতুন করে দলীয় প্রতীক নিয়ে আসা কঠিন। কার কাছে ওই প্রতীক আছে, তা জানতেই ঘাম ছুটে যাচ্ছে। দলের মধ্যে জনে জনে বলছি, প্রতীক ফেরত দিলেই অভিযোগ তুলে নেওয়া হবে।’’ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও মেনেছেন, কাটোয়ায় প্রার্থী নিয়ে দলের একাংশে অসন্তোষ ছিল। তবে, এই ঘটনার কথা তাঁর জানা নেই। একে সংগঠন বেহাল। তার উপরে দলের প্রার্থীর প্রতীকই হাওয়া! অবস্থা বুঝে দলের বর্ধমান পূর্বের সভাপতি সুপ্রকাশ মণ্ডল ‘বিষয়টি মিটে গিয়েছে’ বলে লিখিত ভাবে থানায় জানিয়ে এসেছেন।
অচিন্ত্যবাবুর আবার দাবি, “আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। দলকে বলেছিলাম, প্রার্থী আমাদের পছন্দ নয়। এর পরেও দল ওঁকেই প্রার্থী করলে সে সিদ্ধান্ত আমরা মানতে বাধ্য।”
কিন্তু প্রতীকটা কোথায় গেল?
হাসছেন তিনি— ‘‘অভিযোগটা তুলে নিক। সব ঠিক হয়ে যাবে!’’
(সহ প্রতিবেদন: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়)