হাসপাতালে আহত প্রার্থী মৃণাল বিশ্বাস। রয়েছেন কৃষ্ণনগর উত্তরের প্রার্থী অসীম সাহা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
প্রচার করে ফেরার পথে আক্রান্ত হলেন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী মৃণাল বিশ্বাস। ধান খেত দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে তিনি প্রাণ বাঁচান। পরে তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
অভিযোগের তির তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র বক্তব্য, ‘‘মৃণাল প্রার্থী হওয়ায় ছাত্র-যুবরা যে ভাবে মাঠে নেমেছে, তাতেই আতঙ্কিত হয়ে এই আক্রমণ নামিয়ে আনল তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী।’’ রাতেই মৃণালের মা অণিমা বিশ্বাস হাঁসখালি থানায় তৃণমূলের দু’জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সিপিএম সূত্রের খবর, মঙ্গলবার হাঁসখালি থানার বেতনায় প্রচার সেরে জনা দশেক কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটে ফিরছিলেন মৃণাল। লোকনাথপুরে ভোরের ঘাটের কাছে হামলা হয়। হাসপাতালে শুয়ে মৃণাল অভিযোগ করেন, ‘‘পথচলতি মানুষজনের সঙ্গে কথা বলতে-বলতে আসছিলাম। ফাঁকা জায়গায় আসতেই তৃণমূলের জনা পাঁচেকের একটি দুষ্কৃতী দল আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমার মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকায় এক জন।’’ তাঁর সঙ্গীদের এক জন আগ্নেয়াস্ত্র ধরা দুষ্কৃতীর হাত চেপে ধরেন। বাকিরাও বাধা দিতে থাকেন। দুষ্কৃতীরা তাঁদের উপরেও চড়াও হয়। জোনাল কমিটির ওই প্রবীণ নেতাকে কিল-চড় মারতে থাকে তারা। গ্রামের কিছু লোক ছুটে এলেও আগ্নেয়াস্ত্র দেখে তাঁরা আর এগোতে পারেননি।
এই হট্টগোলের মধ্যে মৃণাল ধানখেতের আল ধরে ছোটেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওই এলাকার পথঘাট ভাল জানা নেই। ধানখেত থেকে বেরিয়ে লোকজনকে জিগ্যেস করতে-করতেই প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে হাঁসখালিতে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে পৌঁছই।’’ খবর পেয়ে তত ক্ষণে দলের অনেক নেতাকর্মীই সেখানে চলে এসেছেন। মৃণালের বুকে যন্ত্রণা হতে থাকায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তৃণমূল অবশ্য এই হামলার দায় নিতে রাজি নয়। তারা বরং কংগ্রেসের উপরে দোষ চাপাচ্ছে। কেননা, নদিয়া জেলায় এক মাত্র কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রেই সিপিএম এবং কংগ্রেস দু’পক্ষ প্রার্থী দিয়েছে। প্রথমে কংগ্রেস প্রার্থী দিলেও দলীয় কোন্দলের জেরে দু’বার প্রার্থী বদল করে। তাতেও কোন্দল মেটেনি। শেষমেশ কংগ্রেসেরই একটি অংশের আর্জিতে সাড়া দিয়ে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে বগুলা লোকাল সম্পাদক তথা ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক মৃণাল বিশ্বাসের নাম ঘোষণা করে।
কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী সত্যজিৎ বিশ্বাসের দাবি, ‘‘প্রার্থী নিয়ে সিপিএমের সঙ্গে গণ্ডগোলের জেরেই কংগ্রেসের লোকজন এটা করেছে।’’ যা উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসীম সাহা। খবর পেয়েই তিনি হাসপাতালে চলে এসেছিলেন। তাঁর দাবি, ‘‘হাস্যকর কথাবার্তা বলছেন
সত্যজিৎ বিশ্বাস। বরং উনি যে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়ে সমাজবিরোধী দিয়ে মৃণালকে খুন করতে চেয়েছিলেন সেটা মানুষের কাছে জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।’’ বিজেপি প্রার্থী সুজিত বিশ্বাসও হাসপাতালে গিয়ে মৃণালের সঙ্গে দেখা করেন।
ভোটের পাটিগণিত যা-ই বলুক, তৃণমূল যে ‘সিপিএমের ভূত’ দেখতে শুরু করেছে, তাতে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে হাঁসখালিতে ধারাবাহিক ভাবে সিপিএম নেতাকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি হাঁসখালির কৈখালি গ্রামে প্রচার করতে এসে এক দলীয় সমর্থকের বাড়িতে জল খেয়ে ছিলেন রানাঘাট (উত্তর-পূর্ব) কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বাবুসোনা সরকার। সেই ‘অপরাধে’ রাতেই তাঁর বাড়িতে ঢুকে মারধর, করা হয়। শনিবার রাতে প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী সমীর পোদ্দারের নেতৃত্বে এলাকার এক সিপিএম পঞ্চায়েত প্রধানকে বেধড়ক পেটানো হয় বলে অভিযোগ। কৃষ্ণগঞ্জে কংগ্রেস প্রার্থী থাকলেও কার্যত মৃণালকেই ‘জোটপ্রার্থী’ বলে মনে করছেন একটা বড় অংশের মানুষ। হাঁসখালি ব্লক কংগ্রেস সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মনোনয়ন জমা করেছেন। কিছু দিন আগেও এসএফআইয়ের রাজ্য যুগ্ম সভাপতি মৃণাল প্রার্থী হওয়ায় গা-ঝাড়া দিয়ে নেমেছে সিপিএমের তরুণ ব্রিগেডও। সেখানে তৃণমূল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার। সুমিতবাবুর কটাক্ষ, ‘‘যারা ব্যালটকে ভয় পায়, তারাই তো বুলেট দেখায়, তাই না?’’