যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল, ঘটল ঠিক উল্টোটাই।
শনি-রবিবার উত্তর, মধ্য দক্ষিণ হাওড়ার বেশির ভাগ এলাকাতেই অভিযোগ উঠছিল, শাসক দল অবাধে শাসানি-হুমকি-মারধর চালাচ্ছে। পুলিশ, কমিশন দর্শক। ফলে ভোটে ব্যাপক সন্ত্রাসের আশঙ্কায় ছিল বিরোধী সব দলই। সোমবার ভোটের দিন অবশ্য সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলল শাসক দলই। অভিযোগের তীর কেন্দ্রীয় বাহিনীর দিকে।
মধ্য হাওড়ার তৃণমূল প্রার্থী অরূপ রায় বলেন, সন্ত্রাস চালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। দক্ষিণ হাওড়ার তৃণমূল প্রার্থী ব্রজমোহন মজুমদারের মতে, অতি সক্রিয়তা দেখাতে গিয়ে অযথা জটিলতা তৈরি করেছে তারা। আর ওই কেন্দ্রেরই জোট প্রার্থী অরিন্দম বসুর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়মকানুন জানে না। তাঁকেই বুথ থেকে বার করে দিয়েছে।
হাওড়ায় এ দিন কার্যত দাপিয়ে বেড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। বুথের ধারকাছেও ঘেঁষতে দেয়নি শাসক-বিরোধী কাউকেই। এমনটা যে হতে পারে, রাজনীতির লোকেরা টের পেয়েছিলেন আগেই। কারণ, গত ক’দিন টহল দেওয়া ছাড়াও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মনোবল বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন জওয়ানেরা। এ দিনও যেমন তাঁরা বয়স্ক ভোটারদের হাত ধরে পৌঁছে দিয়েছেন বুথে, আবার বেচাল দেখলেই হটিয়ে দিয়েছে জটলা। এমনকী, বিরোধী এজেন্ট-হীন বুথের বাইরে শাসক দলের প্ররোচনাকে থামিয়ে দিয়েছে স্রেফ আঙুল উঁচিয়ে।
বিকেল ৩টে। দক্ষিণ হাওড়ার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত লিচুবাগান বস্তিতে থিকথিক করছিল সিআরপি এবং ইএফআর। তৃণমূলের অভিযোগ, বিরোধী প্রার্থীর কথা শুনে ‘তাণ্ডব’ চালিয়েছে সিআরপি। লাঠির ঘায়ে রক্তাক্ত হয়েছেন এক বয়স্ক ভোটার। গুলাম মহম্মদ নামে ওই প্রৌঢ় বলেন, ‘‘ভোট দিয়ে বেরোচ্ছিলাম। কিছু বোঝার আগেই সিআরপি লাঠি চালায়।’’ পুলিশের অবশ্য দাবি, লাঠির ঘায়ে নয়, পালাতে গিয়ে পড়ে জখম হন গুলাম। স্থানীয় তৃণমূল নেতা মাসুদ আলম খান ওরফে গুড্ডুর অভিযোগ, ‘‘সিপিএম এখানে একটা বুথেও এজেন্ট দিতে পারেনি। প্রার্থী নিজেই সকাল থেকে ভোটারদের প্রভাবিত করছিলেন। মানুষ প্রতিবাদ করায় তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছে নালিশ জানান। অভিযোগ খতিয়ে না দেখেই সিআরপি লাঠি চালিয়েছে।’’
পুলিশ বলছে, তৃণমূল একচেটিয়া ভোট করাচ্ছে খবর পেয়ে দক্ষিণ হাওড়ার জোটপ্রার্থী অরিন্দমবাবু লিচুবাগানে গেলে শাসক দলের সঙ্গে তাঁর বচসা-হাতাহাতি হয়। এর পরে আরও সক্রিয় হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। গুড্ডু বলেন, ‘‘আমাকে বললে জোটকে এজেন্ট দিয়ে দিতাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটটাই শেষ করে দিল।’’
জোট এজেন্ট দিতে পারেনি মধ্য হাওড়ার বৈষ্ণবপাড়ায় গাঁধী স্মৃতি স্মারক স্কুলেও। অভিযোগ ওঠে, তার সুযোগে ভোটারদের প্রভাবিত করছে তৃণমূল। বুথের বাইরে উত্তেজনা শুরু হলে বুথ থেকে তৃণমূল এজেন্টকে সরিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। পরে ক্ষমা চেয়ে বুথে ফেরেন তিনি।
আন্দুলের দুইলা গ্রামে বুথের ২০০ মিটার সীমার বাইরের একটি ক্লাব থেকে যাওয়া খাবার আটকে দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। কারণ, সরবরাহকারীদের ব্যাজ ছিল না। শেষমেশ শুধু জল দেওয়ার অনুমতি মেলে। উনসানি ফ্রি প্রাইমারি স্কুলেও বয়স্ক ভোটারদের সাহায্য করার অজুহাতে বুথে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় বাহিনীই তখন বয়স্ক ভোটারদের বুথে পৌঁছে দিতে শুরু করে।
হাওড়া জেলার (শহর) সভাপতি অরূপ রায় থেকে শুরু করে হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ বিভাস হাজরা সকলেরই অভিযোগ, তৃণমূলকে জব্দ করতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পাঠানো হয়েছে। অরূপ বলেন, ‘‘অকারণে আমাদের ছেলেদের মারধর করেছে। ক্যাম্প অফিস ভেঙে দিয়েছে।’’
জওয়ানদের অবশ্য তাতে হেলদোল নেই। ‘‘কে কোন দলের আমাদের জানার দরকার নেই। শান্তিতে ভোট করাতে হবে, এটাই একমাত্র নির্দেশ,’’ বলছেন তাঁরা।
বালিতে ভোট। কেন্দ্রীয় বাহিনী সক্রিয় ছিল বালিতেও। তবে দুপুরের পরে কিছু বুথে শাসক দলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট করার অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। লিলুয়ার এক বুথে সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তর্কাতর্কি বাধে বালির তৃণমূল প্রার্থী
বৈশালী ডালমিয়ার।