দেওয়ালে এখনও জহরুলের নাম। — নিজস্ব চিত্র
সাগরদিঘি থেকে কংগ্রেস যে প্রার্থী তুলে নিচ্ছে না তা নিশ্চিত করে দিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী। শুক্রবার বহরমপুরে দলীয় কার্যালয়ে সাগরদিঘির কর্মী ও নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অধীর স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন সাগরদিঘি ছাড়ছে না কংগ্রেস।
এতে অবশ্য অখুশি নয় সিপিএম। বরং সিপিএমের জোনাল কমিটির সম্পাদক জ্যোতিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন,“ জোট হোক বা না
হোক সাগরদিঘি নিয়ে কখনই চিন্তিত নই আমরা।”
কংগ্রেস না সিপিএম – সাগরদিঘি কার তা নিয়ে গত দু সপ্তাহ ধরে দুটি রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যেই চরম বিভ্রান্তি দেখা দেয়।ফলে দুই দলের কর্মীরাই সেভাবে প্রচার শুরু করতে পারছেন না সাগরদিঘিতে।
এক সপ্তাহ আগেই সাগরদিঘিতে জহুরুল হককে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল কংগ্রেস। সেই মত দেওয়াল লিখন শুরু করে প্রার্থীর নামে প্রচারও শুরু করেছিলেন দলের কর্মীরা।
দেওয়ালে দেওয়ালে সে নাম লেখা রয়েছে এখনও। কর্মীরা বলছেন,“ ঘন ঘন এভাবে প্রার্থী বদল হলে চলে? আগে কে মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন দেখি তারপরে নাম মুছবো দেওয়ালের।একবার লিখে ফের তা মেটাতে কত খরচ জানেন? ”
তারমধ্যেই বুধবার বিকেলে সাগরদিঘিতে ফের এক দফা প্রার্থী বদল করেছে কংগ্রেস। জহুরুল হককে সরিয়ে নতুন প্রার্থী করা হয়েছে আমিনুল ইসলামকে। ফলে কংগ্রেস কর্মী মহলে বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে।
এই বিভ্রান্তি কাটাতেই শুক্রবার দুপুরে সাগরদিঘির দলীয় কর্মীদের বহরমপুরে ডেকে পাঠিয়ে বৈঠক করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। মূলত সাগরদিঘিতে আমিনুলকে ঘিরে দলের কিছু কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। সেই ক্ষোভ ও মান অভিমান ভাঙিয়ে যাতে সাগরদিঘিতে কংগ্রেস একটা সম্মানজনক লড়াই দিতে পারে এই বৈঠকে সেটা যেমন স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন অধীরবাবু, তেমনই আরও একটা স্পষ্ট বার্তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে সিপিএমকেও,সাগরদিঘিতে লড়াইয়ের পথ থেকে সরছে না কংগ্রেস।
কিন্তু এই লড়াইয়ে লাভ কি ?কংগ্রেসের কর্মীদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, অনিশ্চিত আসন জেনেও সাগরদিঘিতে প্রার্থী দিয়ে জঙ্গিপুর আসনটিকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে কেন? আর জহুরুলকে সরিয়ে সাগরদিঘিতে আমিনুলকেইবা প্রার্থী করা হল কেন? জঙ্গিপুর আসনে সিপিএম তাদের প্রার্থী দেওয়ায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে রয়েছে কংগ্রেস।
সাগরদিঘিতে প্রথম যাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল সেই জহরুল হক দলের পর্যবেক্ষক পদে থাকলেও অধীর চৌধুরীর ডাকা শুক্রবারের বৈঠকে হাজির ছিলেন না তিনি। প্রার্থী বদলের ঘটনায় তার প্রতিক্রিয়া,“ অধীর চৌধুরী আমাদের নেতা। তিনি মনে করেছেন যে প্রার্থী বদল হলে ভাল ফল হবে সাগরদিঘিতে। তাই করেছেন। তার নির্দেশই চূড়ান্ত।”
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোট ভেঙে অধীর চৌধুরী সাগরদিঘিতে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন এই আমিনুল ইসলামকেই।২২, ৪০২ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন তিনি। আর এই সুযোগেই কংগ্রেসে বড়সড় ভাঙন ধরিয়ে তৃণমূল জিতে নিয়েছিল সাগরদিঘি আসনটি।
সিপিএমের সাগরদিঘির জোনাল কমিটির সম্পাদক জ্যোতিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কংগ্রেস সাগরদিঘিতে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। কিন্তু সিপিএম প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বহু আগেই প্রচারে নেমে পড়েছে। আমরা যে সাগরদিঘিতে লড়ছি তা নিয়ে দলের কর্মীদের মধ্যে কোনো বিভ্রান্তি নেই।”
সাগরদিঘিতে ২০১১ সালে তৃণমূল পেয়েছিল ৫৪,৭০৮ ভোট। সিপিএম পেয়েছিল৫০,১৩৪ ভোট এবং নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস পায় ২২, ৪৯২ ভোট।
এরপরে হয় পঞ্চায়েত ভোট। সেখানে জেলা পরিষদে কংগ্রেসের ছিল ৪৬, ৫৪৬ ভোট। তৃণমূল ৪৯,৩৮৯ এবং সিপিএমের ৪৯,৯৪২।
২০১৪ সালের সর্বশেষ লোক সভা নির্বাচনেও কংগ্রেস পায় ৪৩,৬২৩ ভোট, তৃণমূল ৪৫,৩০৬ ভোট এবং সিপিএম পায় ৪৩,৯৪৩ ভোট। সাম্প্রতিক এই ভোটের অঙ্ককে সামনে রেখেই সিপিএম সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। দলের এক নেতার কথায়, “সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের নিজস্ব কিছু ভোট রয়েছে। তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলে তাদের ভোটের বড়সড় বিভাজন নিশ্চিত। কংগ্রেসের প্রার্থী না থাকলে সেই সব কংগ্রেসি ভোট তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর দিকে ঢলে পড়ত। কংগ্রেসের প্রার্থী থাকায় তা আটকানো যাবে। তাই কৌশলগত কারণেই সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াইয়ে আপত্তি নেই সিপিএমের।”