ভোট মিটতেই শুরু হয়ে গেল অঙ্ক কষা

সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েই ধূপগুড়ির জোটপ্রার্থী মমতা রায় অভিযোগ পান, একটি বুথে তাঁর এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সটান সেই বুথে হাজির হয়ে যান ধূপগুড়ির বিদায়ী বিধায়ক। প্রিসাইডিং অফিসারকে সোজাসুজি প্রশ্ন করেন, ‘‘আমার এজেন্টকে ঢুকতে দেবেন কি না?’’

Advertisement

অনির্বাণ রায় ও রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩১
Share:

(বাঁ দিকে) ভোটের দিন কংগ্রেস প্রার্থী সুখবিলাস বর্মা ও (ডান দিকে) তৃণমূল প্রার্থী ধর্তিমোহন রায়। ছবি: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েই ধূপগুড়ির জোটপ্রার্থী মমতা রায় অভিযোগ পান, একটি বুথে তাঁর এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সটান সেই বুথে হাজির হয়ে যান ধূপগুড়ির বিদায়ী বিধায়ক। প্রিসাইডিং অফিসারকে সোজাসুজি প্রশ্ন করেন, ‘‘আমার এজেন্টকে ঢুকতে দেবেন কি না?’’ তারপরে অবশ্য ধূপগুড়ির ওই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সিপিএমের এজেন্টের ঢুকতে আর কোনও সমস্যা হয়নি। বিদায়ী বিধায়ক ফিরে গেলেও, ওই কেন্দ্রের সামনে দিনভর কমিশনের তৈরি ‘কুইক রেসপন্স টিমে’র গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল।

Advertisement

জলপাইগুড়ির রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ের ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে কংগ্রেসের দুই সমর্থককে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের এক এজেন্টকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়েই সিপিএমের যুব সংগঠনের কর্মী-সমর্থকরা স্কুলের সামনে পৌঁছোন। ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত বামেদের যুব নেতা-কর্মীরা কংগ্রেসের এজেন্টদের ‘পাহারা’য় রাখেন।

ধুপগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি রবিবার দিনভর জোটের কর্মী সমর্থকদের এমনই দাপটে ভোট করাতে দেখা গেল। যদিও, দিনের শেষে তৃণমূল শিবিরের আশা জেলার ৭টি বিধানসভা আসনের মধ্যে অন্তত ৪টি তাঁদের দখলে আসছে। তৃণমূল নেতাদের দাবি, জেলার মানুষ আবেগে ভোট দিয়েছে, জোটের অঙ্ক করে সেই ভোট বিচার করা যাবে না।

Advertisement

গত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তৃণমূল ২টি আসনে জিতেছিল। বিধানসভা ভোটের পরে আরও ২ বিধায়ককে দলে টেনেছিল তৃণমূল। সে হিসেবে এবারেও চারটি আসনের হিসেব দলীয় রিপোর্টে কষে রেখেছেন তৃণমূল নেতারা। তৃণমূলের নিজস্ব রিপোর্টে অন্তত তিনটি আসন নিশ্চিত বলেই দাবি করা হয়েছে। যদিও, তৃণমূলের থেকে কংগ্রেসের ভোট বামেদের দিকে ঝুঁকে গেলে, এবং বাম ভোট কংগ্রেসের ঘরে এলে সে হিসেব গুলিয়ে যাবে বলে জোটের দাবি। অন্তত এ দিন ধুপগুড়ি, জলপাইগুড়ি, মালবাজার এবং নাগরাকাটায় যে ভাবে বাম এবং কংগ্রেসের নীচু তলার কর্মীরা একসঙ্গে ভোটের কাজ করেছে তাতে দুই দলের নেতারাই আশাবাদী। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য বলেন, ‘‘জেলার সিংহভাগ আসন আমাদের দখলে আসছে তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তবে সব আসনেও জিতে গেলে অবাক হব না।’’

এ দিন কয়েকটি বুথে বিরোধী এজেন্টদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও বড় কোনও গোলমালের অভিযোগ বিরোধীদের তরফে জানানো হয়নি। মূলত ইভিএম বিকল হওয়া, ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের সামনে দলের বুথ অফিস তৈরি করা, লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার মতো অভিযোগ প্রশাসনের কাছে জমা পড়েছে। তৃণমূল শিবিরের থেকেও এমনই অভিযোগ শোনা গিয়েছে। বেরুবাড়ির ২২২ নম্বর বুথে কোনও একজন ভোটার ইভিএম মেশিনে তৃণমূল প্রার্থী ধর্তিমোহন রায়ের নামের ওপরে কালি লেপে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ধর্তিবাবু নিজেই সেই বুথে গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন।

এ দিন দুপুরের পর রাজগঞ্জের বেশ কিছু বুথে বিরোধী এজেন্টদের দেখা মেলেনি। ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের সামনেও বিরোধীদের টেবিল ফাঁকাই দেখা গিয়েছে। বিরোধীদের তরফে হুমকির অভিযোগ জানানো হলেও, রাজগঞ্জের তৃণমূল নেতাদের দাবি, বাসিন্দারা ওদের ভোট দিচ্ছে না টের পেয়েই, বিরোধী কর্মীরা ময়দান ছেড়ে দেন।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিরোধীরা কী অঙ্ক করছে জানি না, তবে মানুষ তো উন্নয়ন দেখে ভোট দিয়েছেন। সেটা গণনার দিন ইভিএম খোলার পরেই জানা যাবে। জলপাইগুড়ি জেলায় ভোটের ফল গতবারের তুলনায় অনেক ভাল হবে।’’

এ বার ভোটের দিন পুরোটাই নিজের বাড়িতেই কাটালেন দেবপ্রসাদ রায়। বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটের বিরোধিতা করে তিনি প্রকাশ্যেই সরব হয়েছিলেন, কনভেনশনও করেছিলেন। নিজে প্রার্থীও হননি। যদিও, এ দিন সকাল থেকেই জলপাইগুড়ির বুথে বুথে জোটের অফিসে বাম-কংগ্রেস কর্মীদের একসঙ্গে ভোট করাতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু দেবপ্রসাদবাবু এ দিন সকাল থেকে নিজের বাড়িতেই সময় কাটান। দুপুরে শুধু একবার নিজের ভোট দিতে বেরিয়েছিলেন। তারপর ফের বাড়ি ফিরে যান। সাম্প্রতিক অতীতে এই প্রথম ভোটের দিন বাড়িতেই বসেই কাটালেন দেবপ্রসাদবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement