নজরে গোপীবল্লভপুর

শিকেয় বিধি, ঢালাও খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে মদও

ভোটের আগে ঢালাও মাংস-ভাতের আয়োজন। সঙ্গে মদও রয়েছে। ভোটের আগের দিন এ সব আয়োজনের ঝুঁকিটা একটু বেশি। যদি পর্যবেক্ষক হঠাৎ হাজির হন, তাহলেই বিপদ। তাই শনিবার রাতেই খাওয়া-দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে ফেলা আর কী!

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

গোপীবল্লভপুর শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২৩
Share:

রাজ্য পুলিশ দিয়েই চলছে তল্লাশি। রবিবার রোহিণী থেকে রগড়া যাওয়ার রাস্তায়। — রামপ্রসাদ সাউ

ভোটের আগে ঢালাও মাংস-ভাতের আয়োজন। সঙ্গে মদও রয়েছে। ভোটের আগের দিন এ সব আয়োজনের ঝুঁকিটা একটু বেশি। যদি পর্যবেক্ষক হঠাৎ হাজির হন, তাহলেই বিপদ। তাই শনিবার রাতেই খাওয়া-দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে ফেলা আর কী!

Advertisement

লাউদহের এক বাসিন্দা বলছেন, “বিকেলে সাইকেল মিছিল হয়েছে। সেখান থেকে যা বলার বলে গিয়েছে। রাতে ভালই তো খাওয়া-দাওয়া হল। তা হলে বুঝুন কেমন শান্তিতে ভোট হবে!” সাঁকরাইলে এক পুলিশ আধিকারিকও বলছেন, ‘‘মাংস-ভাত যা খাওয়ানোর শনিবার রাতেই হয়ে গিয়েছে। এখন বড়-বড় করে চোখ পাকিয়ে ভোটারদের বোঝাচ্ছে তৃণমূল। আমরাও ছেড়ে দিয়েছি। কারণ তৃণমূলের প্রভাব তো আর অস্বীকার করতে পারব না।’’

গোপীবল্লভপুরের সিপিএমের প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কে বলেন, “ধানঘেরি, খাঁড়বাঁধি, রগড়া এলাকার মানুষকে এখনও তৃণমূলের লোকজন শাসাচ্ছে। মাংস-ভাত খাওয়া চলছে। অভিযোগ করেও লাভ হচ্ছে না। যদি নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনে ভোট হয় তবে আমরা জয়ী হব।” যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের সাঁকরাইল ব্লক সভাপতি সোমনাথ মহাপাত্র বলেন, “এলাকায় মানুষ উৎসবের মেজাজে ভোট দেবে। কিছু বুথে প্রচারের শেষে ভাত, ডাল খাওয়ানো হয়েছে। পরাজয়ের ভয়ে বিরোধীরা অপপ্রচার করছে।”

Advertisement

ভোটের আগে ঝাড়গ্রামের লোধাশুলি, সাঁকরাইলের কেশাপাতা, কুলটিকড়ি, রোহিণী, রগড়া, ধানঘেড়ি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় চোখে পড়েনি কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। কয়েকটি এলাকায় রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশকেই দেখা গিয়েছে। গোপীবল্লভপুর বিধানসভার ২৩টি অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে সাঁকরাইল ব্লকের ১০টি অঞ্চল। ঝাড়গ্রাম ব্লকের ৯টি ও গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের ৪টি অঞ্চলও রয়েছে এই কেন্দ্রে। সিপিএমের এক নেতার কথায়, ঝাড়গ্রাম নিয়ে নিশ্চিন্ত। তবে সাঁকরাইল ও গোপীবল্লভপুরের কয়েকটি অঞ্চল নিয়ে চিন্তা রয়েছে।

বিজেপিরও অভিযোগ, শনিবার রাতে গোপীবল্লভপুরের কালিঞ্জা বুথের বিজেপি কর্মী আশিস মণ্ডলকে মারধর করে তৃণমূল সমর্থকেরা। গোপীবল্লভপুরের বিজেপি প্রার্থী সুশীল ঘোষ বলেন, “আমাদের কর্মীদের পথে দেখলেই মারধর করা হচ্ছে। কালিঞ্জায় একই ঘটনা ঘটেছে। আমরা তৃণমূলের চারজনের নামে অভিযোগ করলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি।” যদিও পুলিশের দাবি, তদন্ত চলছে।

ভোটের চব্বিশ ঘণ্টা আগে সাধারণ মানুষের মুখেও কুলুপ। রোহিনী মোড়ে এক প্রৌঢ় চিত্তরঞ্জন বেরা ভোট নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন, “ভোট এসেছে তাই ভোট দেব। কিন্তু যে জিতবে সেই রাজা হবে। আর আমরা তো একই জায়গায় থেকে যাব।” লোধাশুলি যাওয়ার পথে রগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন এক বৃদ্ধ শান্তি পাত্র। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের এলাকা একসময় অশান্ত ছিল। তবে এখন সব শান্ত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা আগে অন্য দিকে চলে গিয়েছিল, তাঁরা তো তৃণমূলে চলে এসেছে। উন্নয়ন হয়েছে। তাই শান্তিতেই ভোট হবে।” ভোট চাইতে আসছে না কেউ? এ বার ওই বৃদ্ধ বলছেন, “রাতে সিপিএম একবার আসছে। তার পরেই তৃণমূল আসছে।”

সাঁকরাইলের রগড়া গ্রামে ঢুকতেই স্পষ্ট হল ‘শান্তি’র ছবিটা। গ্রামের একটি বুথের সামনেই পুকুরের ধারে বাড়ি যুথিকা প্রধানের। ভোটের আগে পরিস্থিতি কেমন বুঝছেন? উত্তরে যুথিকাদেবী বললেন, ‘‘আমি জানলাম না আমার বাড়ি বিক্রি হয়ে গেল। আমি বাড়ি ছাড়িনি বলে মামলা হয়েছে। ওঁদের পিছনে তৃণমূলের লোকেরা আছে। এই তো শান্তি।” অচেনা মুখ দেখে স্থানীয় এক যুবক প্রশ্ন করল কোথা থেকে আসছেন? সাংবাদিক পরিচয় দিতেই আরও কয়েকজনকে জোগাড় করতে গেল সে। ঘটনা দেখে স্থানীয় বাসিন্দা এক মহিলা বললেন, ‘‘এই তো আমরা এখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। রাতে ওঁরা এসেই বলবে ঠিক জায়গায় ভোট না দিলে গ্রাম ছাড়া করব।” ওঁরা কোন দল করে? সে বলল, “তৃণমূল।”

গোপীবল্লভপুরের তৃণমূল প্রার্থী চূড়ামনি মাহাতো বলছেন, ‘‘এত দিন ধরে প্রচার চলেছে। শনিবার প্রচারের শেষ দিন ছিল। তার পরে হয়তো কোথাও-কোথাও সাধারণ মানুষ একসাথে ডাল-ভাত খাওয়ার আয়োজন করেছে।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বিরোধীদের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। তাই ওঁরা কুৎসা করছে। আমরা এ বার ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement