পুরসভার পথে শ্যামবাবু। গানে মগ্ন তুষারবাবু।—শুভ্র মিত্র
শহরের মাঝখানে রয়েছে পুরনো দিনের বাড়িটা। বিষ্ণুপুরের পুরভবন। এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে দুই যুযুধানের রাজনৈতিক জীবন জড়িয়ে রয়েছে এই বাড়িটার সঙ্গে। চার বছর বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান ছিলেন এ বারের জোট প্রার্থী তুষারকান্তি ভট্টাচার্য। আর ছাব্বিশ বছর ধরে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ঠিকানা এটিই।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুর কেন্দ্র থেকে জিতে রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদবাবু। এ বারও তৃণমূলের হয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছেন তিনি। ভোট মেটার পরে এখন লম্বা ছুটি। ফল বেরোতে ঢের দেরি। সেই সুযোগে পুরকর্তা পুরনো সংসারে বেশি করে সময় দিতে শুরু করেছেন। মঙ্গলবার পুরভবনে দেখা মিলল তাঁর। পাশে বেশ কয়েক জন পারিষদ। তাঁদের মধ্যে কেউ কাউন্সিলর, কেউ দলীয় কর্মী। টেনশন হচ্ছে? কম্পিউটার থেকে চোখ না সরিয়েই শ্যামাপ্রসাদবাবুর উত্তর, ‘‘টেনশন আবার কীসের! হাসতে হাসতে জিতব। ১৯ তারিখ যা করার কাউন্টিং এজেন্টরাই করবে। আমার মাথা ঘামানোর দরকারও পড়বে না।’’
দল আর পুরসভার কাজে কর্মে দিন কেটে যাচ্ছে শ্যামাপ্রসাদবাবুর। দলের কাজে মাঝে মধ্যে গ্রামে গঞ্জেও যেতে হচ্ছে। কিন্তু কাজের তাগিদ ছাড়াই, শুধু ছুটি কাটাতে বাইরে কোথাও বেড়িয়ে আসা হয়ে ওঠেনি। তিনি বলেন, ‘‘সেই কলেজ জীবন থেকে রাজনীতি করছি। সারাক্ষণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা। ভোটের ময়দানেও নেই নেই করে প্রায় তিন দশক পার হতে চলল। এখন প্রচার, ভোট, গণনা— এ সব নাওয়া খাওয়ার মত হয়ে গেছে। ক্লান্ত লাগে না।’’
রাজনীতি, রাজনীতি! নিজের কোনও শখ নেই শ্যামাপ্রসাদবাবুর? আছে। ঝানু রাজনীতিবিদ জানান, রাতে ঘুমনো আগে বই পড়া তাঁর অনেক দিনের অভ্যাস। রাজনীতির ব্যস্ততায় সেই নেশা ছাড়তে পারেননি কখনও।
অন্য দিকে, গানে মজেছেন আর এক প্রার্থী। তিনি জোটের তুষারকান্তি ভট্টাচার্য। শহরের বৈলাপাড়ার বাড়িতে কর্মীদের মধ্যমণি হয়ে বসে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইছিলেন এই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। চারণকবি মুকুন্দ দাসের গান, ‘ছল চাতুরি, কপটতা, মেকি মাল আর চলবে ক’দিন?’’ গান চলতে থাকে— ‘‘এখন আপনা বেঁচে মালসী পাড়ায়, যোগান তাঁরা ভোটের দাদন | তোদের পতন এতই গভীর ভবলেও তা করে স্থবির|’’ পাশের টেবিলে তাল ঠুকছেন জনা কয়েক কর্মী। অবসরের গান বাজনাতেও ভোট-ভোট গন্ধ!
তাহলে কী ১৯ তারিখের কথা ভেবে চাপা টেনশন কাজ করছে? প্রশ্ন শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে গেল সত্তর পেরোনো মানুষটির। বললেন, ‘‘শুনুন, আমার হারাবার কিছু নেই। সেই ছোটবেলা থেকে রাজনীতি বলতে জনসেবাই বুঝে এসেছি। আর মাত্র চার বছর পুরপ্রধান থেকে যা কাজ করেছি, তার কথা এখনও বলেন মানুষ।’’ তুষারবাবু জানান, সকাল সন্ধ্যা দলের কর্মীদের ভিড় লেগেই রয়েছে বাড়িতে। ভোট মিটলেও রাজনীতির আলোচনাই চলছে সারাক্ষণ। আর মাঝে মধ্যে তাঁদের গান গেয়ে বা কবিতা শুনিয়ে তাঁদের চাঙ্গা করছেন তুষারবাবু। সারাক্ষণ তাই বলে বাড়িতেই থাকছেন না। এক কালে চুটিয়ে ফুটবল খেলেছেন। সত্তর পেরিয়ে এখন রোজ ব্যাডমিন্ট খেলা চাই-ই। বলেন, ‘‘ব্যাডিমিন্টন খেলায় এক-আধটা ম্যাচ হারতে পারি। কিন্তু এ বার জিতবই! টেনশন নেই কোনও।’’
বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে এ বার বিজেপির প্রার্থী নন্দদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মহকুমা শাসকের অফিসে ভোট গণনা নিয়ে বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন তিনি। বললেন, ‘‘চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। এখন সারা দিন রাজনীতি নিয়েই কাটে। ভোটে কয়েক মাস খুব ধকল গেল। এখন পরিবারকে একটু সময় দিতে পারছি।’’ তার সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘টেনশন হচ্ছে না। জিতব বলেই তো পার্টি আমাকে দাঁড় করিয়েছে।’’