সমীক্ষার হাওয়ায় বদল বাজির দরেও

কারও পক্ষে দর উঠেছে ফিফটি-ফিফটি। কোথাও আবার তৃণমূলের পক্ষে টাকায় দ্বিগুণ দর দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন জুয়ার কারবারীরা। অভিযোগ, সোমবার ভোট পরবর্তী সমীক্ষার পরে বেটিং চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রায় গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে।

Advertisement

অনির্বাণ রায় ও নমিতেশ ঘোষ

শিলিগুড়ি ও কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০২:২০
Share:

কারও পক্ষে দর উঠেছে ফিফটি-ফিফটি। কোথাও আবার তৃণমূলের পক্ষে টাকায় দ্বিগুণ দর দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন জুয়ার কারবারীরা। অভিযোগ, সোমবার ভোট পরবর্তী সমীক্ষার পরে বেটিং চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রায় গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে।

Advertisement

সমীক্ষার ধাক্কায় কয়েক ঘণ্টাতেই উল্টে গিয়েছে ভোট-বাজির দরও। ক্রিকেটের মতো বিধানসভা-লোকসভা ভোটেও আকছার বেটিঙের অভিযোগ শোনা যায় শহর এমন কী গ্রামেও। জলপাইগুড়ি শহরের দিনবাজার থেকে কামারপাড়া, রায়কতপাড়ার যে সব ব্যক্তির মাধ্যমে আইপিএল-এ বাজি ধরা যায়, তাঁদেরই অনেকের মাধ্যমেই ভোটের ফল নিয়ে বেটিং চলছে বলে দাবি।

বিধানসভা ভোট ঘোষণার পর থেকেই জলপাইগুড়িতে বেটিং শুরু হয়ে গিয়েছে বলে খবর ছড়িয়েছিল পুলিশে। সেই মতো অভিযানও চালায় পুলিশ। যদিও, পুলিশের হাতে তেমন কিছু প্রমাণ আসেনি। তবে সূত্রের খবর, প্রথম দফার পর থেকে ভোট প্রক্রিয়া যত এগিয়েছে বাজির দরে এগিয়েছিল বিরোধী বাম কংগ্রেস জোট-ই। অর্থাৎ বিরোধী জোট-ই রাজ্যের আগামী সরকার গঠন করতে চলেছে, এমনই ধারণা ছিল বুকিদের। তবে সোমবার সন্ধ্যায় ভোট পরবর্তী সমীক্ষায় বিভিন্ন হিসেব প্রকাশ্যে আসার পরে বেটিঙের দরে উথালপাতাল হয়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর।

Advertisement

জানা গিয়েছে, গত সোমবার দুপুর পর্যন্ত তৃণমূলের হয়ে ১০০ টাকা বাজি ধরলে ২৩০ টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, এবং জোটের হয়ে ১০০ টাকার বিনিময়ে ১৩০ টাকা। সোমবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন চ্যানেলে সমীক্ষার ফল দেখানোর পর থেকেই তৃণমূলের হয়ে বাজির দর ঘুরতে থাকে।

মঙ্গলবার সকালের খবর, তৃণমূলের হয়ে ১০০ টাকা বাজি ধরে জিতলে পাওয়া যাবে ১৫০ টাকা, অন্যদিকে জোটের হয়ে বাজি ধরে জিতলে ১০০ টাকায় ২৪০ টাকা মিলবে। বেটিং দুনিয়ার খবর অনুযায়ী, যে ঘটনার সম্ভাবনা যত বেশি থাকে, তার দর তুলনামূলক কম থাকে। কারণ প্রায় নিশ্চিত দল বা ঘটনার পক্ষেই বেশি সংখ্যায় বাজি ধরা হয়। বিনিয়োগ হয় বেশিই টাকা।ও। বুকিদের পরিভাষায় সেই দলই ‘ফেভারিট’।

অন্যদিকে, যে দলের জেতার সম্ভাবনা কম থাকে তার দরও বেশিই থাকে। কেন না প্রায় অনিশ্চিত সম্ভাবনা ধরে নিয়ে অনেকেই টাকা বিনিয়োগ করতে রাজি হন না। সে কারণেই ওই দলের প্রতি বিনিয়োগ টানতেই দর চড়িয়ে রাখা হয়। এবার ভোটের শুরুতে তৃণমূলের বাজির দর ছিল যথেষ্ট চড়া। অর্থাৎ বুকিদের কাছে তৃণমূল সরকার গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল অনেক বেশি।

জানা গিয়েছে, কোনও খেলা নিয়ে হোক বা লোকসভা-বিধানসভা ভোটের ফল যে কোনও বিষয়েই বাজি ধরতে চাইলে জলপাইগুড়ির দিনবাজার, উকিলপাড়া, কামারপাড়া, মহাত্মা গাঁধী রোডের বিভিন্ন কাউন্টারে দেদার সুযোগ মেলে। কোনও পরিচিতের মাধ্যমে গেলে লটারির কাউন্টার, সাইবার ক্যাফে, বালি-পাথরের দোকান, টিকিট বুকিং সেন্টারের মতো অফিস-দোকানে গিয়েও বাজি ধরা যায়। টাকা জমা দিলে কখনও কাউন্টার থেকে ছেঁড়া লটারির টিকিট অথবা ক্যারামের ঘুঁটি হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। ফলাফল প্রকাশের পরে সেগুলি নির্দিষ্ট কাউন্টারে দেখালেই টাকা মিলে যায়। সূত্রের খবর এবারে বিধানসভা ভোটে কোন দল ক্ষমতায় আসবে তা নিয়ে জলপাইগুড়ির মাত্র তিনটি কাউন্টার থেকেই প্রায় দেড় কোটি টাকার বাজি ধরা হয়েছে। এ ছাড়াও ছোট-মাঝারি অনান্য বেটিং কাউন্টারতো রয়েইছে।

পুলিশ সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে বেটিং চক্র খুঁজতে নিয়মিত অভিযান চলছে। জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়ার দাবি, ‘‘সারা বছরই অভিযান চলে। অনেকে বেটিং নিয়ে গুজবও ছড়িয়ে থাকেন। দেদার বেটিং চলছে এমন অভিযোগ সত্যি নয়।’’

জানা গিয়েছে ক্ষমতার দৌড়ে তৃণমূলকে এগিয়ে রেখে দর দিচ্ছেন কোচবিহারের জুয়াড়িরাও। জুয়াড়িদের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, তৃণমূল ১৫৩ থেকে ১৫৮টি আসন পাবে। কেউ ১৫৮ আসনের উপরে ধরলে তাঁকে দশ হাজারে কুড়ি হাজার টাকা দেওয়া হবে। আবার কেউ ১৫৩ আসনের নিচে ধরলে তাঁকেও দশ হাজারে কুড়ি দেওয়া হবে। শুধু এখানেই নয়, দর দেওয়া হছে দিনহাটার তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ এবং নাটাবাড়ির শাসক দলের প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের হারজিতের উপরেও। কোচবিহার জেলা পুলিশের এক কর্তাও বলেন, “এটা পুরোপুরি বেআইনি। এমন কিছু পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

দলীয় সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধ্যা থেকেই একের পর এক ভোট পরবর্তী সমীক্ষা সামনে আসতে শুরু করে। সেই সময় জুয়াড়িরা নিজেদের মতো করে আসন সংখ্যা ঠিক করে বাজারে ছেড়ে দেয়। ইতিমধ্যেই কয়েক কোটি টাকা ওই খাতায় পড়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। কোচবিহার শহর থেকে শুরু করে লাগোয়া খাগরাবাড়ি, পুন্ডিবাড়ি, বানেশ্বর, দিনহাটা, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জের প্রায় সমস্ত এলাকায় ওই চক্রের রমরমা।

তৃণমূলের ১৫৮ আসনের পরে দশ হাজার টাকা দর দেওয়া এক ব্যক্তি বলেন, “সব টিভি চ্যানেলের সমীক্ষাতেই তৃণমূল ১৬০ আসনের বেশি পাবে বলে দেখানো হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই সে দিকে দর দিয়েছি।”

স্থানীয় ভাবেও নাটাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের শাসক দলের প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে নিয়ে দর দেওয়া হচ্ছে। জানা গিয়েছে, রবিবাবু জেতার পক্ষে ১০০ টাকায় চল্লিশ টাকা দেওয়া হচ্ছে। হারলে একশ টাকায় ষাট টাকা দেওয়া হবে। আবার দিনহাটার শাসক দলের প্রার্থী উদয়নবাবুকে নিয়ে দর চলছে ফিফটি-ফিফটি। জিতলে একশ টাকায় পঞ্চাশ আবার হারলেও একশ টাকায় পঞ্চাশ টাকা দেওয়া হচ্ছে।

এ সব নিয়ে অবশ্য মাথা ঘামাতে চান না রাজনৈতিক দলগুলি। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “জুয়া বিষয়টি ঠিক নয়। এটুকু বলতে পারি কোচবিহারের সব আসনে আমরা বিপুল ভাবে জিতব। তা নিয়ে কোনও সমীক্ষার দরকার নেই।”

বেটিং চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা তথা সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দা সাহা। তিনি বলেন, “বেটিং নানা কিছু নিয়ে হয়। আইপিএলের সঙ্গে ভোট নিয়েও বেটিং হচ্ছে বলে শুনছি। কিন্তু মানুষের রায় নিয়ে জুয়া চলে না। ”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement