জিতেন্দ্র তিওয়ারি। নিজস্ব চিত্র।
বোমা বাঁধতে গিয়ে এক ব্যক্তির নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠল অন্ডালের জামবাগ এলাকা। পাণ্ডবেশ্বরের বিদায়ী বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির দাবি, ভোটের সময় তাঁকে খুনের জন্য তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা বোমা মজুত করতে গিয়ে তা ফেটে এই বিপত্তি ঘটেছে। যদিও জিতেন্দ্র অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দলের স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। একে বিজেপি-র গোষ্ঠী কোন্দলের ফল বলেও আখ্যা দিয়েছে শাসকদল।
পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার রাত ১২টা-১টা নাগাদ পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার অন্তর্গত জামবাদে বোমা বাঁধতে গিয়ে নিহত হন সরবন চৌধুরী (৩৯) নামে এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে আরও ৩ জন ছিলেন, যাঁরা গুরুতর জখম। কোনও গোপন আস্তানায় ওই আহতদের চিকিৎসা করানো হচ্ছে। গুরুতর আহত সরবনকে রানিগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বৃহস্পতিবার সকালে নিহত হন তিনি। তাঁর দেহ উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই আহতদের খোঁজে এলাকায় তল্লাশি শুরু করেছে অন্ডাল থানার পুলিশ।
ওই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, জামবাদ এলাকায় এক মহিলার বাড়িতে বোমা-গুলি মজুত করা হচ্ছিল। সেই সময় কোনও ভাবে একটি বোমা মাটিতে পড়ে ফেটে যায়। এই ঘটনায় যুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
বোমা ফেটে ওই ব্যক্তির নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই সরাসরি আঙুল তুলেছেন বিজেপি-তে যোগ দেওয়া জিতেন। নীলবাড়ির লড়াইতে পাণ্ডবেশ্বরেই দাঁড়িয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, পশ্চিম বর্ধমানের জামবাদের বহুলা গ্রামের প্রধান বীরবাহাদুর সিংহের সঙ্গে যোগসাজস করে ভোটের সময় তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করেছেন পাণ্ডবেশ্বর আসনের তৃণমূল প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। সে সময় তৃণমূলের কর্মী বোমা ফেটে নিহত হন। তিনি বলেন, ‘‘পাণ্ডবেশ্বরের প্রার্থী তাঁর গোটা রাজনৈতিক জীবনে বোমা-গুলি নিয়ে কারবার করে এসেছেন। আমি বিগত ৫ বছর বিধায়ক থাকার সময় তা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এখন ভোটের সময় আমাকে হত্যা করার জন্য এলাকার বেশ কয়েক জনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি।’’ সরবনের মৃত্যুকে দুর্ভাগ্যজনক বললেও একে তৃণমূলআশ্রিত দুষ্কৃতীদের কাজ বলে দাবি করেছেন জিতেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন, বোমা-গুলির এই রাজনীতি বন্ধ করুন।’’
জিতেনের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বহুলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তথা তৃণমূল নেতা বীরবাহাদুর। তিনি বলেন, ‘‘জিতেন তিওয়ারি নেতৃত্বে বুধবার ছাতাডাঙার মাঠে মিটিং হয়েছিল। সে সময় নতুন-পুরনো বিজেপি ঝামেলার ফলে জামবাদে বোমা বাঁধার মতো ঘটনা হয়েছে। ওই মিটিংয়ে বিজেপি-তে যোগ দিতে গিয়ে বাধা পান কয়েক জন। এটা নতুন-পুরনো বিজেপি-র মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দলের ফল।’’
জিতেনকে খুনের পরিকল্পনার দাবিও উড়িয়ে দিয়েছেন বীরবাহাদুর। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘এটা (জিতেনের) ওঁর ব্যক্তিগত মত। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। জিতেনবাবু বিজেপি-র গোষ্ঠী কোন্দলকে সামলাতে পারছেন না। তাই তৃণমূলকে দোষারোপ করছেন। তবে তৃণমূল বোমা-গুলির রাজনীতি করে না।’’