সংসদীয় দলের বৈঠক সেরে বেরোচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী, রাজনাথ সিংহ ও জে পি নড্ডা। বুধবার। ছবি: পিটিআই
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির জয় নিশ্চিত বলে সংসদীয় দলের বৈঠকে দাবি করলেন নরেন্দ্র মোদী-জে পি নড্ডারা। পশ্চিমবঙ্গের জন্য তারকা প্রচারকদের তালিকাও আজ প্রকাশ করল দল— যাতে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী বা শ্রাবন্তী-মিঠুনরা থাকলেও বাদ পড়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।
দ্বিতীয় দফায় বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার পরে আজই ছিল সংসদীয় দলের প্রথম বৈঠক। সূত্রের মতে, বৈঠকে পাঁচ রাজ্যের আসন্ন ভোট পরিস্থিতি, করোনা প্রতিষেধক, উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বদল ও হরিয়ানার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাংলার নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। সূত্রের মতে, আজকের বৈঠকে দলীয় সভাপতি জে পি নড্ডা দাবি করেন, পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের মধ্যে বাংলায় সরকার গড়া সব থেকে বেশি চ্যালেঞ্জের। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষ পরিবর্তন চাইছেন। বর্তমানে রাজ্যের যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে সরকার গড়তে চলেছে বলে দাবি করেন নড্ডা। তাঁকে সমর্থন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, বাংলায় এ বার বিজেপির ক্ষমতায় আসা প্রায় নিশ্চিত। তিনি রাজ্যে প্রচারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের আরও দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান করেন। আরও বেশি করে দলের মানুষের কাছে পৌঁছতে বলেন। একই সঙ্গে আজকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গণটিকাকরণ অভিযানে গতি আনতে প্রত্যেক সাংসদকে নিজের সংসদীয় এলাকায় মানুষকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য সওয়াল করেন। বৈঠক শেষে সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বলেন, “আজকের বৈঠকে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান নিয়েও আলোচনা হয়। ঠিক হয়েছে আগামী ১২ মার্চ থেকে ৭৫ সপ্তাহ ধরে স্বাধীনতার ৭৫ বছরের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান পালন করা হবে।”
বিজেপির পক্ষে আজ পাঁচ রাজ্যে দলের তারকা প্রচারকদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রত্যাশিত ভাবে ওই তালিকায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বিজেপি সূত্রের খবর, আপাতত যা ঠিক হয়েছে তাতে আগামী ১৫ মার্চ রাজ্যে যাওয়ার কথা অমিত শাহের। ফের ২০ মার্চে বাংলায় প্রচারে যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজ্য বিজেপি আগেই আশ্বাস দিয়ে রেখেছিল যে নবান্ন দখলের লড়াইয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে বারবার রাজ্যে আসবেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ২৭ মার্চ প্রথম ও ১ এপ্রিলের দ্বিতীয় দফায় পূর্ব মেদিনীপুরের যথাক্রমে ৯টি ও ৭টি আসনে ভোট রয়েছে। তার আগে ১৮ ও ২০ মার্চ পশ্চিমবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ভোট রয়েছে নন্দীগ্রামেও। যদিও মোদী ইতিমধ্যেই হলদিয়াতে একটি সভা করে ফেলেছেন, তবুও মমতাকে নন্দীগ্রাম থেকে হারানোর লক্ষ্য শুভেন্দুর হয়ে মোদীকে নামিয়ে প্রচারের ঝড় তুলতে চাইছে দল। সব মিলিয়ে বাংলার মসনদ দখলের এ যাত্রায় অন্তত ২০টি সভা করার পরিকল্পনা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যার মধ্যে নির্বাচন ঘোষণার আগে দু’টি ও ঘোষণার পরে একটি সভা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। মেদিনীপুর ছাড়া মোদীর সভা করার কথা রয়েছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায়। দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে মোদী জনসভা করতে পারেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ ও সাগরে।
আজ তারকা প্রচারকদের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে প্রথম সারির নেতারা ছাড়াও দলের সংগঠনের দায়িত্বে থাকা শিবপ্রকাশ, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, অমিত মালব্যরা রয়েছেন। কয়েক দিন আগে দলে যোগ দেওয়া মিঠুন বা শ্রাবন্তী বা যশ দাশগুপ্তের মতো টলিউডের মুখও রয়েছে তালিকায়। সাম্প্রতিক সময়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন এমন কিছু পরিচিত রাজনৈতিক মুখ যেমন মুকুল রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী তারকা প্রচারকের তালিকায় থাকলেও, স্থান হয়নি কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের।