হুমায়ুন কবীর ও ভারতী ঘোষ।
ডেবরার মাটিতে ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি হতে পারেন রাজ্যেরই দুই প্রাক্তন আইপিএস কর্তা। দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হওয়া এই জল্পনা পূর্ণতা পেল শনিবার। শুক্রবার ডেবরার প্রার্থী হিসাবে প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবীরের নাম ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ওই কেন্দ্রে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ভারতী ঘোষকে খাড়া করল বিজেপি। প্রসঙ্গত, দিল্লি থেকে প্রথম দফায় ৫৭ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে গেরুয়াশিবির।
তৃণমূল নেত্রীর প্রার্থিতালিকায় চমকের ইতিহাস বরাবরের। এর আগে, ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল এবং ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তেমনই ছবি দেখেছে গোটা রাজ্য। ২০২১-এও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সেই ‘চমক’-এর অঙ্গ হিসাবেই ডেবরায় ভূমিপুত্র হুমায়ুনকে প্রার্থী করেছে জোড়াফুল শিবির। আগামী এপ্রিলে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল হুমায়ুনের। কিন্তু তার মাস তিনেক আগে গত জানুয়ারির শেষ লগ্নে ইস্তফা দেন তিনি। এর মধ্যেই তৃণমূলে যোগ দেন তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতা কবীরও। ফলে তখন থেকেই ডেবরা ব্লকের বনবারাসতীর বাসিন্দা হুমায়ুনের রাজনৈতিক কক্ষপথ ঘিরে জল্পনা দানা বাঁধতে থাকে। দিন কয়েক আগে হুগলির চন্দননগরের ওই প্রাক্তন কমিশনার জোড়াফুল শিবিরে যোগ দেওয়ায় তাঁকে ঘিরে গুঞ্জন আরও জোরাল হয়ে ওঠে। তাতে সিলমোহর দিয়েই শুক্রবার তাঁকে ডেবরার প্রার্থী ঘোষণা করেন দলনেত্রী।
রাজ্যের শাসকদলে যখন ডেবরা কেন্দ্রে লড়াইয়ের প্রস্তুতি তুঙ্গে ঠিক তখনই পাল্টা চাল দিল বিজেপিও। প্রাক্তন দুঁদে আইপিএস কর্তার মোকাবিলা করতে, জোড়াফুল শিবিরের মতোই আর এক প্রাক্তন আইপিএসকেই হাতিয়ার করেছে পদ্মশিবির। শনিবার দিল্লিতে প্রথম দফার প্রার্থিতালিকায় ঠাইঁ পেয়েছেন রাজ্যের এক সময়ের দাপুটে আইপিএস আধিকারিক ভারতী।
২০১০ সালে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে .যৌথবাহিনীর অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হুমায়ুন। সেইসঙ্গে বাম আমলে হাতকাটা দিলীপের মতো দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারের কৃতিত্বও তাঁর ঝুলিতে। আবার পরবর্তী কালে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব সামলানোর মতো অভিজ্ঞতা রয়েছে ভারতীর। এর আগে ভোটের লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা নেই হুমায়ুনের । তবে ২০১৯-এর নির্বাচনে ঘাটাল কেন্দ্রের প্রার্থী ছিলেন ভারতী। বস্তুত তাঁর হাত ধরেই ঘাটাল লোকসভার অন্তর্গত ডেবরা কেন্দ্রের চমকপ্রদ উত্থান ঘটে বিজেপি-র। এ বার ভারতীকে তারই ‘পুরস্কার’ দিল দল। ফলে, রাজনৈতিক মহলের ধারণা, দুই দুঁদে আইপিএস আধিকারিকের এই লড়াইয়ের ফলে রাজ্যের অন্যতম নজরকাড়া কেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে ডেবরা।
ডেবরার রাজনৈতিক অঙ্কও চমকপ্রদ। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। তবে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ডেবরায় চমকপ্রদ উত্থান ঘটে বিজেপি-র। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ছে ডেবরা বিধানসভা। গত লোকসভা নির্বাচনে ঘাটালে বিজেপি-র প্রার্থী হন ভারতী। ভোটে হারলেও, ডেবরা বিধানসভায় বিজেপি পৌঁছে যায় প্রথম স্থানে। ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের চেয়ে ৪ হাজারের বেশি ভোট পান তিনি। সেই ভারতীর উপর ফের আস্থা রেখেছে পদ্মশিবির।
বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘প্রার্থীকে জেতানোর জন্য কর্মীরা প্রস্তুত। তার থেকেও বেশি প্রস্তুত জনগণ।’’ তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির অবশ্য বক্তব্য, ‘‘শুধু ডেবরা নয়, গোটা রাজ্য থেকেই খালিহাতে ফিরতে হবে বিজেপিকে। ওদের আশা পূর্ণ করবেন না এ রাজ্যের মানুষ।’’