জোট-বার্তা জোরালো হতেই হামলা তৃণমূলের

শিলিগুড়ি লাগোয়া জলপাইগুড়ির ডাবগ্রাম- ফুলবাড়ি কেন্দ্রের জোট প্রার্থী সিপিএমের দিলীপ সিংহের মিছিল তখন সবে ফুলবাড়ির রাস্তা দিয়ে এগোচ্ছে। মিছিলে রয়েছেন স্থানীয় কংগ্রেসের নেতারাও। সিপিএম এবং কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে মিছিল চলেছে পাকা সড়কের এক ধার দিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৬
Share:

ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে সিপিএম প্রার্থী দিলীপ সিংহকে (ডান দিকে) নিয়ে জোটের মিছিলের সময়েই পাশ দিয়ে যাচ্ছে তৃণমূলের পতাকা হাতে মোটরবাইক মিছিল। শুক্রবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

শিলিগুড়ি লাগোয়া জলপাইগুড়ির ডাবগ্রাম- ফুলবাড়ি কেন্দ্রের জোট প্রার্থী সিপিএমের দিলীপ সিংহের মিছিল তখন সবে ফুলবাড়ির রাস্তা দিয়ে এগোচ্ছে। মিছিলে রয়েছেন স্থানীয় কংগ্রেসের নেতারাও। সিপিএম এবং কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে মিছিল চলেছে পাকা সড়কের এক ধার দিয়ে। আচমকা গোটা পাঁচেক মোটরবাইককে দেখা গেল মিছিলের পাশে পাশে। সব ক’টি বাইকেই তৃণমূলের পতাকা লাগানো। বাইকের সংখ্যা বাড়তেও লাগল। কিছু ক্ষণের মধ্যেই গোটা পনেরো বাইকের একটি বাহিনীকে মিছিলের সঙ্গে সঙ্গে চলতে দেখা গেল। মিছিলের নেতা কর্মীদের বাইক সওয়াররা বলতে থাকলেন, ‘সরে দাঁড়ান’, ‘রাস্তা ছাড়ুন’। বাইকগুলো গায়ের উপরে এসে প়ড়ছে দেখে দিলীপবাবু শেষপর্যন্ত মোবাইলে পুলিশকে ফোন করে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান। তা কানে যেতেই বাইক বাহিনী তখনকার মতো সরে যায়।

Advertisement

অথচ, তার মাত্র চার কিলোমিটার দূরেই এনজেপি স্টেশনের কাছে তখন টহল দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাদের সঙ্গে রয়েছেন প্রশাসনের হোমরাচোমড়া কর্তারাও। তারপরেও কী করে বাইক বাহিনী এমন সাহস পায়?

বিরোধীদের বক্তব্য, খোদ দলনেত্রী ও তৃণমূলের অন্য নেতাদের কথাতেই শাসক দলের নেতাকর্মীরা ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা কেন্দ্রীয় বাহিনী বা প্রশাসন, কাউকেই তোয়াক্কা করছেন না।

Advertisement

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী তো মাত্র ক’দিনের অতিথি। ভোট হলেই চলে যাবে।’’ এরপরে প্রচ্ছন্ন হুমকির স্বরেই বলেছেন, ‘‘তারপর তো আমাদেরই দেখতে হবে।’’ এ দিনই পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক সভাতে মমতা বলেন, ‘‘ওরা তিন দিন বাদে চলে যাবে, তাই চিন্তার কোনও কারণ নেই। ভোটের পরে রাজ্যের হাতেই আইনশৃঙ্খলা থাকবে।’’ কর্মীদেরও তিনি বলেছেন, ‘‘কোনও ভয় পাবেন না। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ভোটটা করে দেবেন।’’ দলের ডাকাবুকো নেতাদের মুখেও একই ধরনের কথা শোনা গিয়েছে। বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সরাসরি দলের কর্মীদের বলেছেন, ‘‘কী করে ভোট করাতে হয়, আপনারা জানেন। সে ভাবেই এ বারও ভোট করাবেন।’’

বাম ও কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের দাবি, দলনেত্রী নিজে যে কেবল এমন কথা বলছেন, তাই নয়, অনুব্রতবাবুদের কথায় রাশ টানারও চেষ্টা করছে না শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। অর্থাৎ, এমন কথা বলায় উৎসাহই দেওয়া হচ্ছে। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘সেই কারণেই তৃণমূলের কর্মীরা লাগাম ছাড়া ভাবে জোটের উপরে হামলা করছেন।’’ তাই বাইক মিছিল নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূল কর্মীরা তার পরোয়া করছেন না। বাইকে করে এসেই জোটের নেতাকর্মীদের উপরে তৃণমূলের কর্মীরা আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী গৌতম দেবের অবশ্য দাবি, ‘‘এমন কোনও বাইক মিছিলের কথা জানি না।’’ কিন্তু ছবিতে ওই বাইক বাহিনীর চিত্র ধরা রয়েছে।

বিরোধীদের দাবি, জোটের জোরালো হওয়ার বার্তাই কাঁপুনি ধরিয়েছে শাসক শিবিরে। কেবল শিলিগুড়ি নয়, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকাতেই জোট প্রার্থীরা শাসক দলের হামলার মুখে পড়েছেন। আলিপুরদুয়ারের বেলতলা এলাকার সিপিএমের এক শিক্ষক নেতা জয়ন্ত সাহার বাড়িতে বৃহস্পতিবার হামলা হয়েছে। পড়শিদের অভিযোগ, যারা হামলা করেছে তাদের মুখে মাঝে মধ্যে ‘মা-মাটি মানুষ জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগানও শোনা যায়। ময়নাগুড়ির দক্ষিণ খাগরাবাড়ির দাসপাড়ার বাসিন্দা মাছ ব্যবসায়ী সিপিএম কর্মী মহাদেব দাসকে প্রচারে না যেতে হুমকি দেওয়া হয়। প্রতিবাদ করায় বাঁশ দিয়ে মহাদেববাবুকে পেটানো হয়েছে।

এ দিন ইটাহারের গুলন্দর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পারের গ্রাম এলাকায় বোমা ফেটে এক তৃণমূলকর্মী জখম হওয়ার পরেও বিতর্ক দানা বেঁধেছে। তাঁর দাবি, রাস্তার পাশে ঝোপের আড়ালে বোমা রাখা ছিল, তাতে পায়ের চাপ পড়াতেই বিস্ফোরণ হয়। যদিও, কংগ্রেস এবং বামেদের অভিযোগ, ভোটের আগে বিরোধীদের উপর হামলা করার জন্য তৃণমূল বোমা মজুত করে রেখেছিল, তারই একটি ফেটে ওই তৃণমূলকর্মী জখম হয়েছেন।

কংগ্রেস নেতা শঙ্কর মালাকারের কটাক্ষ, ‘‘গৌতমবাবুরা বুঝেছেন, কংগ্রেসের ভোট ছাড়া তাঁদের জয় সম্ভব নয়। তাই এখন কংগ্রেসকে বামেদের পাশে দেখে হাতে বাঁশ-বোমা তুলে নিচ্ছে তৃণমূল।’’ তবে গৌতমবাবু ও আলিপুরদুয়ারের জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘নীতি-আর্দশ ভুলে জোট করায় মানুষের সাড়া মেলেনি। তাই বাম-কংগ্রেস মিথ্যের আশ্রয় নিচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement