আসানসোল পোলো মাঠে নরেন্দ্র মোদীর সভার প্রস্তুতি।
গত গ্রীষ্মেও এই শিল্পাঞ্চলে পা পড়েছিল তাঁদের। তবে আবহটা ছিল আলাদা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সে বার ছিলেন এক মঞ্চে।
এই গ্রীষ্মেও ফের শিল্পাঞ্চলে তাঁরা। তবে এ বার যুযুধান। আজ, বৃহস্পতিবার তৃণমূল নেত্রী যখন দলের প্রার্থীদের হয়ে প্রচার সারবেন রানিগঞ্জ, পাণ্ডবেশ্বরে, সেই সময়েই আসানসোলে বিজেপির সভায় হাজির হবেন মোদী। যা নিয়ে বুধবার থেকেই তাল ঠুকতে শুরু করে দিয়েছেন দু’পক্ষের নেতা-কর্মীরা।
আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে পরপর তিন দিনের প্রচার কর্মসূচি বুধবার থেকেই শুরু করে দিয়েছেন মমতা। এ দিন তিনি সভা করেছেন বারাবনি, কুলটি, জামুড়িয়া ও দুর্গাপুরে। আজ, বৃহস্পতিবার তাঁর রানিগঞ্জ ও পাণ্ডবেশ্বরে এবং শুক্রবার আসানসোল পোলো মাঠেও তাঁর সভা করার কথা। তৃণমূল সূত্রের খবর, আসানসোলের সব ক’টি আসনই এ বার মর্যাদার লড়াই বলে মনে করছে দল। কারণ, লোকসভা ভোটে আসানসোল কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা এলাকায় পাণ্ডবেশ্বর ছাড়া সব ক’টিতেই ভরাডুবি হয়েছিল তৃণমূলের। আসানসোল পুরভোটে তা খানিকটা সামলে নেওয়া গেলেও এ বার ভোটের মুখে নারদ-কাণ্ড নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। তার উপরে ভোট হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে। সে কারণেই দলনেত্রী নিজে এই অঞ্চলের সব বিধানসভা কেন্দ্র ছুঁয়ে প্রচার সারছেন বলে মনে করছেন তৃণমূলের অনেকেই।
লোকসভা ভোটের নিরিখে তৃণমূলের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হয়েছিল কুলটিতে। বিজেপির থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল তারা। বারাবনি বিধানসভা এলাকায় আবার সালানপুর ব্লকে সিপিএমের থেকে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। শিল্পাঞ্চলে দলের একাংশের অনুমান, সে কারণেই এ বার এই এলাকা থেকে প্রচার শুরু করলেন মমতা। পরের সভাটিই করলেন কুলটিতে। জামুড়িয়ায় গত বিধানসভা ভোটে জিতেছিল সিপিএম। লোকসভা ভোটেও সেখানে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিল তারাই। এ দিন মমতার তৃতীয় সভাটি ছিল সেখানে।
বৃহস্পতিবার তৃণমূল নেত্রীর প্রথম সভা রানিগঞ্জে, যে কেন্দ্রে এ বার লড়াই বেশ কঠিন বলে মনে করছেন দলের নেতারাই। এক জেলা তৃণমূল নেতার দাবি, ‘‘গত পাঁচ বছরে রানিগঞ্জে দলের কাজে খুব একটা সন্তুষ্ট নন নেত্রী। তার উপরে লোহা চুরির মামলায় গত বারের বিধায়ক সোহরাব আলির দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনায় দল আরও বিব্রত হয়েছে।’’ সোহরাব অবশ্য এ কথা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা নেত্রীর সভার জন্য ২৫ হাজার লোক জমায়েতের ব্যবস্থা করছি।’’ আর এক নেতা গোপাল আচার্য আবার বলেন, ‘‘আশা করি ৩০ হাজার জমায়েত হবে।’’
লোকসভা ভোটে দলের প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র প্রচারে আসানসোলে এসেছিলেন মোদী। সভায় বলেছিলেন, ‘‘মুঝে পার্লামেন্ট মে বাবুল চাহিয়ে।’’ তাঁর সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বাবুলকে বড় ব্যবধানে জিতিয়েছিলেন আসানসোলের মানুষ। সংসদে গিয়ে তিনি মন্ত্রীও হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও এক বার আসানসোলে এসেছেন মোদী। গত বছর ১০ মে ইস্কো আধুনিকীকরণ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরে পোলো মাঠেই সভা করেন তিনি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সেখানে হাজির ছিলেন মমতাও।
গত পুরভোটে অবশ্য আসানসোলে মুখ থুবড়ে পড়ে বিজেপি। তার পরে দলে নানা রদবদল হয়েছে। নতুন সভাপতি দায়িত্ব নিয়েছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, এ বার তারা কুলটি, আসানসোল উত্তর ও দক্ষিণ কেন্দ্রে ভাল ফলের আশা করছে। সে জন্য সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। মোদীর সভা পালে আরও হওয়া দিয়ে যাবে বলে তাঁদের আশা। তাই এই সভা সফল করার জন্য কোমর বেঁধে নেমেছেন নেতারা। বিজেপির আসানসোল জেলা সভাপতি তাপস রায় বলেন, ‘‘গত বারের চেয়েও বেশি মানুষ আসবেন আমাদের সভায়।’’
একই দিনে শিল্পাঞ্চলের দুই এলাকায় দুই হেভিওয়েট নেতানেত্রীর সভা নিয়ে ঘাম ছুটছে প্রশাসনেরও। কমিশনারেটের এক পুলিশ কর্তা যেমন বলেন, ‘‘ভালয় ভালয় সব উতরে দিতে পারলে মুক্তি!’’
ছবি: শৈলেন সরকার।