আক্রমণের ভঙ্গিমা একই। শব্দ থেকে বাক্য, এমনকী নিশানাও প্রায় এক। নরেন্দ্র মোদীর পর এ বার অমিত শাহ। শিল্পায়ন থেকে সারদা, অনুন্নয়ন থেকে নারদ-কাণ্ড বা রাজ্য জুড়ে বোমা কারখানা— একের পর এক বাক্যবাণে আক্রমণ শানালেন তৃণমূল নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে। রাজ্যে ভোটপ্রচারে এসে মঙ্গলবার অমিত শাহ যেন খড়্গপুরের লাইনেই হাঁটলেন। রবিবার নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে খড়্গপুরের রেল ময়দানে মমতাকে নিশানায় রেখে আক্রমণ শানিয়েছিলেন, একই ভঙ্গিমায় এ দিন দেখা গেল বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতিকে।
সামনেই পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন। কিন্তু, আক্রমণাত্মক অমিতের মতে বাংলার পরিস্থিতি বিচিত্র। আগের মতো গোটা দেশকে পথ দেখানোর জায়গায় বাংলা এখন আর নেই। কারণ, কংগ্রেস-বাম এবং তৃণমূল এ রাজ্যকে পথভ্রষ্ট করেছে। বিষয়টিকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন মমতা। গোটা বাংলাকে হতাশ করেছেন তিনি। কী ভাবে? সে জবাবও এ দিন দিয়েছেন অমিত।
তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়নি। ৩৪ বছরের বাম শাসনের ছায়াই তৃণমূলের জমানায় দেখা গিয়েছে গত পাঁচ বছরে। রাজ্যে কোনও পরিবর্তন হয়নি। এমনকী, তৃণমূল আমলে রাজ্যে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বাড়বাড়ন্ত হয়েছে বলেও অমিতের দাবি। পাশাপাশি, শিল্পায়নের রাস্তা থেকে রাজ্য সম্পূর্ণ উল্টো দিকে হাঁটছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বাম আমলে বহু কারখানা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু, তৃণমূল জমানায় বোমা তৈরির কারখানা হয়েছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের বদলে এখন বোমার আওয়াজ শোনা যায়।’’
এ দিন সারদা-কাণ্ডের পাশাপাশি নারদের হুল নিয়েও তৃণমূলকে ফের বিঁধেছে বিজেপি। নারদ নিউজের প্রকাশিত ওই ভিডিওতে বেশ কয়েক জন সাংসদকে দেখা গিয়েছিল। তুমুল হইচইয়ের পর লোকসভায় শেষমেশ বিষয়টিকে এথিক্স কমিটিতে পাঠানো হয়। বিষয়টি কেন রাজ্যসভার এথিক্স কমিটিতে পাঠানো হল না, এ দিন সে প্রশ্নও ওঠে। ওঠে সিবিআই তদন্তের প্রশ্নও। এর পরেই বলটা মমতার কোর্টে ঠেলে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘মমতার যদি হিম্মত থাকে তা হলে সিবিআই তদন্ত চান। দরকার হলে দুর্নীতিগ্রস্তদের বের করে দিন দল থেকে।’’ মমতা সিবিআই চাইলে তিনি দুধ আর জল আলাদা করে দেবেন বলেও মন্তব্য করেছেন অমিত।
আরও পড়ুন
সবার উপরে দুর্নীতি, দিদির পরিবর্তন নিয়ে কটাক্ষ মোদীর
গত কাল রাজ্য বিজেপি-র সদর দফতরে ‘ঘুষ’ দেওয়ার অভিযোগে কলকাতা পুলিশের দুই কর্মী হাতেনাতে ধরা পড়েন বলে অভিযোগ। এ দিন সে প্রসঙ্গও তুলেছেন অমিত। এর পিছনে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের হাত আছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘এ বার তো পুলিশও চরবৃত্তিতে নেমে পড়েছে। কখনও এমনটা শুনিনি। আমাদের নেতা রাহুলকে ফাঁসানোর চেষ্টা করল। নেপথ্যে পুলিশ কমিশনারের হাত আছে।’’
এ দিন রাজ্যে বাম-কংগ্রেসের জোট নিয়েও কটাক্ষ করেন অমিত। দু’পক্ষের রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘‘কেরলে ওরা লড়ছে। আর বাংলায় জোট করেছে। ওদের নিজেদের আদর্শ আগে ঠিক করে নেওয়া উচিত।’’