জখম সিপিএম কর্মী। মঙ্গলবার সিউড়ি হাসপাতালে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
শাসকদলের বিদায়ী বিধায়কের সঙ্গে তাঁর ‘দহরম-মহরমে’র কথা সুবিদিত। তাঁর আমলেই হত্যার মামলার চার্জশিটে নাম নেই সেই তৃণমূল নেতা মনিরুল ইসলামের। সপ্তাহ দুয়েক আগেই তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধী কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে।
বীরভূমের লাভপুর থানার সেই বির্তকিত ওসি দেবাশিস ঘোষের অপসারণের দাবিতে ফের সরব বিরোধী বাম-কংগ্রেস জোট। অভিযোগ, সোমবার লাভপুরের কাপসুন্দি গ্রামে পতাকা ছেঁড়াকে ঘিরে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা সিপিএম কর্মীদের মারধর করেছে। গোটা ঘটনাটি ঘটেছে পুলিশেরই মদতে। প্রতিবাদে মঙ্গলবার লাভপুরের সিপিএম প্রার্থী মাহফুজুল করিমের নেতৃত্বে বাম-কংগ্রেস জোটের কর্মী-সমর্থকেরা ওসি অপসারণের দাবি লিখিত ভাবে জানান রিটার্নিং অফিসার তথা লাভপুরের বিডিও-র কাছে। ওই দাবিতে এ দিন তাঁরা থানায় বিক্ষোভও দেখান। মঙ্গলবার বিকেলেই বর্ধমানের খণ্ডঘোষ বিধানসভা কেন্দ্রের লোধনা গ্রামে জোট প্রার্থী অসীমা রায়ের সমর্থনে পোস্টার সাঁটানোর সময় আক্রান্ত হন সিপিএম কর্মীরা। অভিযোগ,
তৃণমূলের লোকজনের মারে আহত ৮ জন। তাঁদের বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে।
কয়েক দিন আগেই লাভপুরের ওসি-র অপসারণ চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিলেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, স্থানীয় থিবা গ্রামে সেই পতাকা টাঙানোকে ঘিরেই তৃণমূলের সঙ্গে বিবাদের জেরে বেছে বেছে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের নামে মামলা দায়ের করার পাশাপাশি বাড়ি ভাঙচুরের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ওই ওসি। এ দিনও তাঁর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও। প্রশাসনের কাছে খবর পৌঁছনোর ১২ ঘণ্টা পরে বাহিনী পৌঁছয় ওই গ্রামে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদার অভিযোগ, ‘‘ওসি তৃণমূল নেতার মতো কাজ করছেন। শাসকদলের যাতে ক্ষতি না হয়, তার জন্য দলীয় কর্মীদের ভয় দেখাচ্ছেন, মারধর করছেন। ওঁর আগেও অপসারণ চেয়েছি। এ দিনও চেয়েছি। কিন্তু, জেলা প্রশাসন, কমিশন তা কানে তুলছে না।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার দলীয় পতাকা ছেঁড়ার অভিযোগে গ্রামে তৃণমূল-সিপিএম সমর্থকদের মধ্যে ঝামেলা বাধে। সিপিএমের অভিযোগ, ওসি-র মদতে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা তাদের কর্মীদের মারধর করে। তাপস দাস নামে এক সিপিএম কর্মী মাথায় ও হাতে গুরুতর চোট পান। তাঁকে সিউড়ি হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাপসবাবু মঙ্গলবার বলেন, ‘‘পুলিশের উপস্থিতিতেই তৃণমূলের লোক বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালায়। ওরা শাবল, লাঠি দিয়ে মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দেয়।’’ একই অভিযোগ আর এক জখম সিপিএম কর্মী রফিক মল্লিকের। তাঁর ডান পায়ে চোট লেগেছে। গভীর রাতে আত্মীয়েরা তাঁকে উদ্ধার করে কোনও রকমে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরিবারের অভিযোগ, গুরুতর জখম হলেও রফিককে নিয়ে গ্রাম থেকে বেরোলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল তৃণমূল। ঘটনার খবর পেয়ে এ দিন সকালে স্থানীয় সিপিএম নেতারা রফিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। মাহফুজুল করিমের ক্ষোভ, ‘‘ঘটনাস্থল থেকে লাভপুরের (যেখানে এক কোম্পানি বাহিনী রয়েছে) দূরত্ব মাত্র ১৪-১৫ কিলোমিটার। মাত্র ২০ মিনিটেই ওই গ্রামে চলে আসা যায়। বাহিনী এল ১২ ঘণ্টা পরে!’’
এ দিন বেলায় কাপসুন্দিতে পৌঁছে দেখা গেল, গ্রাম থমথমে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে টহল দিচ্ছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে রয়েছেন অভিযুক্ত ওসি দেবাশিস ঘোষও। কোনও পুলিশ কর্তাই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। জখম বাম কর্মী তাপসবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ছড়িয়ে রয়েছে
চাল, ডাল এবং নানা আসবাবপত্র। একই ছবি রফিকের বাড়িতে।
সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন গ্রামের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য রসিয়া বিবি। তাঁর পাল্টা দাবি, সিপিএমের লোকেরাই তৃণমূলের পতাকা ছিঁড়ে দিয়ে দলীয় কর্মীদের উপরে হামলা চালায়। দুই কর্মী তাতে জখম হন। মন্তব্য করেননি বিদায়ী বিধায়ক মনিরুল। জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের আবার দাবি, ‘‘লাভপুরে এমন ঘটনাই ঘটেনি। ওসি-ও ঠিক ভাবেই কাজ করছেন। সব সিপিএমের নাটক!’’
সময়ে কেন বাহিনী পৌঁছল না? অভিযুক্ত ওসি-র বিরুদ্ধেই বা কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে? সাড়া দেননি এসপি মুকেশ কুমার। ‘এখনও অভিযোগ পাইনি’—বলে ফোন কেটে দিয়েছেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী।