দিদির লোক, নিশ্চিত হয়েই রাজীব-বিদায়

সরানোতেই প্রমাণ হল, কারণ ছিল সঙ্গত। কিন্তু এত দেরি কেন? কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে রাজীব কুমারকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে এখন এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। কমিশন রাজীবকে সরিয়ে সৌমেন মিত্রকে নতুন সিপি নিয়োগ করেছে। এবং তাৎপর্যপূর্ণ হল, এ ব্যাপারে তারা নবান্নের সঙ্গে কোনও রকম পরামর্শই করেনি!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩০
Share:

সরানোতেই প্রমাণ হল, কারণ ছিল সঙ্গত। কিন্তু এত দেরি কেন? কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে রাজীব কুমারকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে এখন এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। কমিশন রাজীবকে সরিয়ে সৌমেন মিত্রকে নতুন সিপি নিয়োগ করেছে। এবং তাৎপর্যপূর্ণ হল, এ ব্যাপারে তারা নবান্নের সঙ্গে কোনও রকম পরামর্শই করেনি!

Advertisement

রাজীবকে সরানোর জন্য বিরোধীরা যে ভাবে বারবার দরবার করেছে, তাতে বিস্মিত নির্বাচন কমিশন। কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘কোনও এক জন অফিসারের অপসারণ চেয়ে সব বিরোধী দলের এ ভাবে একযোগে দাবি জানানোর ঘটনা অভূতপূর্ব। সেই দাবি উপেক্ষা করাও অসম্ভব।’’ কিন্তু তার পরেও তাঁরা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেননি। কমিশন সূত্রের খবর, রাজীব যে আসলে ‘দিদির লোক’, এটা নিশ্চিত হয়ে তবেই তাঁকে সরানো হয়েছে এবং এ কারণেই পরবর্তী সিপি নিয়োগ নিয়ে নবান্নের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়নি।

ফেব্রুয়ারি মাসে সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সিপি পদে রাজীবকে বসানোর পর থেকেই সরব হন বিরো‌ধীরা। কমিশনের ফুল বেঞ্চ কলকাতায় এলে সেখানেও বিরোধী দলগুলি রাজীবের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ করেন। ঘটনা হল, জঙ্গি দমন বা দাগি অপরাধীদের গ্রেফতারে রাজীবের বিভিন্ন ভূমিকা যেমন সহকর্মীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে, তেমনই তাঁর কিছু কাজকর্ম নিয়ে সমালোচনায় মুখর পুলিশমহলেরই একাংশ। বাম আমলে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের প্রধান হিসেবে রাজীব তাঁর দুই অধস্তনকে সাংবাদিক সাজিয়ে পাঠিয়ে ধরে এনেছিলেন জনসাধারণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতোকে। তাতে কিছুটা হলেও মাওবাদীরা ধাক্কা খায়। বাম আমলে তাঁরই বিরুদ্ধে ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ তুলেছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ২০১১-য় রাজ্যে পালাবদলের সঙ্গে বদলান রাজীবও। বিধাননগরে নতুন কমিশনারেট গড়ে তাঁকে কমিশনার করেন মমতা। সেখান থেকেই দু’জনের সুসম্পর্কের সূত্রপাত বলে খবর। তার পরেই সারদা-কাণ্ডে তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য লোপাটের অভিযোগ ওঠে।

Advertisement

মমতা-ঘনিষ্ঠতা এবং সারদা-তথ্য লোপাটের অভিযোগের পাশাপাশি ২৮ মার্চ বিজেপি নেতা রাহুল সিংহকে ঘুষ দিতে গিয়ে দুই পুলিশকর্মী ধরা পরার পরে রাজীবের দিকে আঙুল তোলে বিজেপি। ৩০ মার্চ কলকাতায় এসে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ রাজীবকে সরানোর দাবি তোলেন। পরের দিন দিল্লিতে নির্বাচন সদনে গিয়ে কংগ্রেসের রাজীব শুক্ল এবং মণীশ তিওয়ারিও রাজীবকে সরানোর লিখিত দাবি জানান।

কমিশন সূত্রের খবর, ৩১ মার্চ সকালেই কমিশনের ফুল বেঞ্চ কলকাতার পুলিশ কমিশনার-সহ রাজ্যের বেশ ক’জন জেলাশাসক-পুলিশ সুপারকে সরানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলে। কিন্তু ওই বৈঠকের মাঝেই বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুল ভেঙে পড়ার খবর পৌঁছয়। এমন বিপর্যয়ের সময় শহরের সিপি-কে সরাতে চায়নি কমিশন। তখনকার মতো বিষয়টি থমকে যায়। সে দিনই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী আনন্দবাজারকে বলেছিলেন, ‘‘সব অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

মঙ্গলবার এক কমিশন কর্তা জানান, অমিত শাহ কলকাতায় এসে দাবি করার পর দিনই যদি পুলিশ কমিশনারকে সরানো হলে ধারণা হতো, বিজেপির চাপেই এই সিদ্ধান্ত। কমিশন কোনও ভাবেই সেই ঝুঁকি নিতে চায়নি। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেলেও তা ঘোষণা করা হয়নি।

এর মধ্যেই ৪ এপ্রিল প্রথম দফার ভোট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কমিশন। ঠিক হয়, রাহুল সিংহকে ঘুষ দিতে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে পুলিশের বিস্তারিত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হবে। সেই রিপোর্ট দিল্লি পাঠানো হয় প্রথম দফার ভোটের পর। রিপোর্ট পেয়ে উপ-নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা জানিয়েছিলেন, সিপি-কে সরানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে কমিশন। কিন্তু শুধু রাজীবকে সরানো হবে, না কি আরও যে আট জন ডিএম-এসপি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাঁদেরও সরানো হবে, সেই ব্যাপারে কমিশন কিছুটা দ্বিধায় ছিল। তখন কমিশনের প্রধান সচিব আর কে শ্রীবাস্তবকে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান ও নদিয়ার পরিস্থিতি বুঝতে পাঠিয়েছিলেন জৈদী। শ্রীবাস্তব দিল্লি ফিরে ওই ডিএম-এসপি-দের কাজে মোটের উপর সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ দিনও অবশ্য বিজেপির প্রতিনিধি দল জৈদীর কাছে ওই অফিসারদের সরানোর দাবি জানিয়েছে।

তা হলে ওই অফিসারদের কী হবে? জৈদী আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘অফিসারদের উপর নজরদারি ভোটের সময় কমিশনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ারই অঙ্গ। প্রয়োজনে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’’

রাজীব সরলেন। স্বস্তিতে নেই অন্য অফিসারেরাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement