এক মঞ্চ থেকে তৃণমূলকে আক্রমণ মান্নান, অধীরের

ভুলে দ্বৈরথ, মিলল হাতে হাত

কখনও জেলায় দলের নেতৃত্ব, কখনও বা লোকসভা ভোটে প্রার্থী দাঁড় করানো নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছে আব্দুল মান্নান এবং অধীর চৌধুরীর বিরোধ। দলের অন্দরে দু’জনেই যেন অঘোষিত বিরোধী হয়ে উঠেছিলেন! কিন্তু জোটের আবহে দ্বৈরথ আপাতত শেষ! দলের অন্দরে নানা প্রশ্নে নিজেদের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের পালাও অতীত! এখন মৈত্রীই বাস্তব।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চাঁপদানি শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৪৩
Share:

চাঁপদানিতে জোটের প্রচার সভায় আব্দুল মান্নান ও অধীর চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।

কখনও জেলায় দলের নেতৃত্ব, কখনও বা লোকসভা ভোটে প্রার্থী দাঁড় করানো নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছে আব্দুল মান্নান এবং অধীর চৌধুরীর বিরোধ। দলের অন্দরে দু’জনেই যেন অঘোষিত বিরোধী হয়ে উঠেছিলেন!

Advertisement

কিন্তু জোটের আবহে দ্বৈরথ আপাতত শেষ! দলের অন্দরে নানা প্রশ্নে নিজেদের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের পালাও অতীত! এখন মৈত্রীই বাস্তব।

রবিবার চাঁপদানিতে আব্দুল মান্নানের সমর্থনে প্রচারে এসে তাঁকে ভূয়সী প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। পাশে দাঁড়িয়ে সমালোচনায় বিদ্ধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। হাতে-হাত ধরে জেতার শপথ নিলেন দু’জনে! কানে-কানে শলা থেকে হাসি-মস্করা বাকি থাকল না কিছুই। যা দেখে উৎসাহিত দলের কর্মী-সমর্থকেরাও। জেলায় সংগঠনের রাশ হাতে থাকা নিয়ে অধীর-ঘনিষ্ঠ যে নেতার সঙ্গে মান্নানের ঠোকাঠুকি লেগেই ছিল, সেই প্রীতম ঘোষও হাসিমুখে ঘুরে বেড়ালেন মঞ্চে।

Advertisement

সারদা নিয়ে তৃণমূল জর্জরিত। ব্যাপক এই আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছেন যিনি, তিনি বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা মান্নান। দুর্নীতির প্রসঙ্গে সুযোগ পেলেই ‘বেআব্রু’ করার চেষ্টা করেছে‌ন শাসক দলকে। যার জেরে কম অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি শাসক দলকে। এ বার তিনিই প্রার্থী হয়েছেন হুগলির চাঁপদানি কেন্দ্রে।

শনিবারই এই কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে এলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের সিংহভাগ জুড়ে আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে তোপ দেগে গিয়েছেন। আর রবিবার সন্ধ্যায় চাঁপদানি ফাঁড়ির পাশে সভা করে প্রদেশ সভাপতি যা বলে গেলেন তার নির্যাস, মান্নানের জন্যই তৃণমূলের মুখোশ খসে পড়েছে!

মান্নানকে ‘ক্রান্তিকারী’ নেতা হিসেবে অভিহিত করে অধীর বলেন, ‘‘দিদি বলছেন, যে কোনও মূল্যে মান্নানকে হারাতেই হবে। তাই নিজে হুগলিতে এসে ভাষণ দিয়ে গেলেন। আসলে ওঁর জ্বলুনি হচ্ছে। কারণ মান্নানভাই প্রমাণ করে দিয়েছেন, উনি (মুখ্যমন্ত্রী) সততা বিক্রি করে মানুষের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। মান্নানদা না থাকলে সারদা কেলেঙ্কারি উদঘাটিতই হত না।’’ মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে প্রদেশ সভাপতির কটাক্ষ, ‘‘উনি হুগলিতে এসে মান্নানভাইকে গালাগাল দিচ্ছেন মানেই এটা পরিষ্কার, উনি হেরে গিয়েছেন।’’ এক কদম এগিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ বার বাংলায় জোট সরকার ক্ষমতায় আসবে। আর মান্নানদা হবেন‌ তার মন্ত্রী।’’ তারপরেই মান্নানের দিকে ফিরে বলেন, ‘‘মন্ত্রী আপনাকে হতেই হবে।’’

সভার আগে নওগাঁর মোড় থেকে জিটি রোড ধরে চাঁপদানি পর্যন্ত মিছিল হয় মান্নানের সমর্থনে। কয়েক হাজার মানুষ মিছিলে পা মেলান। কংগ্রেসের পাশাপাশি সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মী-সমর্থকেরাও মিছিলে সামিল হন। ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায়, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্র, সাকিল আহমেদ খান‌। সভায় মান্নান বলেন, ‘‘সারদায় গরিব মানুষের টাকা লুঠ হয়েছে। তাই আমি আইনের দ্বারস্থ হয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীর তাতেই গোঁসা হয়ে গেল!’’

তাঁর কটাক্ষ, ‘‘কেউ যদি চোর হয়, তাকে কি সাধু বলব! যারা গরিব মানুষের টাকা লুঠ করেছে, তাদের সাজা দিতে লড়াই চালিয়ে যাবই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement