প্রচারে নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার রাজস্থানের টঙ্কে। ছবি: পিটিআই।
পাল্টে গিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও তাঁর সহযোগীরা। সময় এগিয়ে গিয়েছে প্রায় পাঁচ বছর। কিন্তু এ বারও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগে পদক্ষেপ করার প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন নীরব বলেই মত বিরোধীদের। কংগ্রেসের তরফে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অন্তত ছ’টি অভিযোগ জমা দেওয়ার পরে ৪৮ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কমিশন কোনও পদক্ষেপ করেনি। কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রশ্ন, নরেন্দ্র মোদী কি সব অভিযোগের ঊর্ধ্বে? সামান্য শো-কজ় নোটিস পর্যন্ত কেন পাঠানো হল না প্রধানমন্ত্রীকে? কমিশন অবশ্য এ ব্যাপারে জবাব এড়িয়ে গিয়েছে।
পাঁচ বছর আগের লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে নির্বাচন আচরণবিধি ভাঙার কমপক্ষে ছ’টি অভিযোগ উঠেছিল। সব ক’টি ক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত ক্লিনচিট পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে সেই ক্লিনচিট দেওয়ার ব্যাপারে যে মতপার্থক্য হয়েছিল, তা স্পষ্ট হয়ে যায় ভোটের কিছু দিন পরেই তিন নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে পদাধিকার বলে দ্বিতীয় স্থানে থাকা নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসার ইস্তফায়। সূত্রের মতে, সে সময়ে একাধিক অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীকে ক্লিনচিট দেওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন লাভাসা।
এ বার এখনও পর্যন্ত কেবল প্রথম পর্বের নির্বাচন শেষ হয়েছে। তার মধ্যে পরশু প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার ছ’টি অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয় কংগ্রেস। দলের নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজের বক্তব্যে ধর্মকে টেনে এনে বিভাজনের রাজনীতি করেছেন। সম্প্রতি রাজস্থানের বাঁসওয়াড়ায় প্রধানমন্ত্রী নিজের প্রচারে বলেন, ‘‘কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশের হিন্দু সমাজের ধনসম্পত্তি মুসলিমদের মধ্যে বণ্টন করে দেবে বলে ঠিক করেছে। মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্রকেও ছাড়া হবে না।’’ কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদীর এই অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং বিদ্বেষপূর্ণ। মোদী এই কথা বলে ঘৃণার রাজনীতি করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা ও মেরুকরণ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন। সুরজেওয়ালার দাবি, এত নিম্ন মানের বক্তব্য ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রীর মুখে অতীতে শোনা যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে কংগ্রেস।
কমিশনকে জমা দেওয়া অন্য অভিযোগগুলিতে কংগ্রেস জানিয়েছে, গত ১৯ মার্চ সালেমে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ‘শিবশক্তি’-কে ধ্বংস করতে চান। যারা শক্তির পুজো করে আর যারা শক্তিকে ধ্বংস করতে চায়, এই নির্বাচন তাদের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়ার লড়াই। ওই দিনই মোদীর এক্স হ্যান্ডলে লেখা হয়, বিরোধী ইন্ডিয়া জোট হিন্দু সংস্কৃতির বিরোধী। সুরজেওয়ালার কথায়, ‘‘নির্বাচন কমিশনের নিয়ম বলছে, ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাওয়া আদর্শ আচরণবিধির বিরোধী।’’
আর একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ৪ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের সাহারাণপুরের সভায় মোদী কংগ্রেসের ইস্তাহারকে ‘মুসলিম লিগের মনোভাবের পরিচায়ক’ বলে দাবি করেন। উঠে এসেছে রামমন্দির প্রসঙ্গও। কংগ্রেসের অভিযোগ, ৭ এপ্রিল একটি জনসভায় মোদী দাবি করেন, কংগ্রেস রামমন্দির নির্মাণের বিরোধী ছিল। তাই কংগ্রেসকে ‘পাপী’ আখ্যা দিয়ে এমন দলকে ভোট না দেওয়ার জন্য জনতার কাছে আবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী। সুরজেওয়ালা আরও দাবি করেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের আমরোহায় গত ১৯ এপ্রিলের একটি জনসভায় রাহুল গান্ধীকে হিন্দু ধর্মের বিরোধী হিসাবে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন মোদী।’’
কংগ্রেসের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন মোতাবেক ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায় কিংবা ভাষার মাধ্যমে কোনও প্রার্থী পরস্পরের মধ্যে ঘৃণা ছড়াতে পারেন না। কিন্তু মোদী প্রচারের একেবারে গোড়া থেকেই ঘৃণাভাষণকে নিজের হাতিয়ার করেছেন। কংগ্রেসের মতে যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরে থাক, শো-কজ় নোটিস পর্যন্ত পাঠিয়ে উঠতে পারেনি। এর ফলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশুদ্ধতা নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি করে কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে কমিশনের পক্ষে জানানো হয়েছে, ‘‘কমিশন এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবে না।’’