পদত্যাগী নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল (বাঁ দিকে) এবং অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে হঠাৎই ইস্তফা দিয়েছেন দেশের অন্যতম নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল। এই পদত্যাগে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া চিঠিতে অরুণ জানিয়েছেন যে, তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণে’ পদত্যাগ করছেন। তবে কমিশনের একটি সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গে বেশ কিছু বিষষে মতানৈক্যের জেরেই পদত্যাগ করেছেন অরুণ। কেউ কেউ আবার জানাচ্ছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই এই পদত্যাগ। তবে অরুণের চোখে পড়ার মতো কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল না বলে দাবি করেছে কমিশনের ওই সূত্রটি। এই আবহেই নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ-রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলিও। কংগ্রেস আরও এক ধাপ এগিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছে। রবিবার সকালে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ নিয়ে তিন দফা প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর প্রশ্ন, অভিজিতের মতোই কি বিজেপির প্রতীকে লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন অরুণ? আদৌ ব্যক্তিগত কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন কি না, সেই প্রশ্নও উস্কে দিয়েছে কংগ্রেস। একই সঙ্গে কংগ্রেসের প্রশ্ন, অরুণ কি মোদী সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরেই পদ ছা়ড়লেন? অরুণের হঠাৎ পদত্যাগ নিয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকারকে বিঁধতে শুরু করেছে বঙ্গের শাসকদল তৃণমূলও। দলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখেল এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনারের পদটি এখন শূন্য। তার মানে এখন নির্বাচন কমিশন বলতে এক জন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এ বার নরেন্দ্র মোদী দু’জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন।’’
প্রসঙ্গত, দেশে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার-সহ মোট তিন জন নির্বাচন কমিশনারের থাকার কথা। এত দিন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার এবং নির্বাচন কমিশনার অরুণই দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। তৃতীয় পদটি ফাঁকাই ছিল। এ বার নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে অরুণ ইস্তফা দেওয়ায় কমিশনের ‘ফুল বেঞ্চ’ বলতে এখন শুধু রাজীবই রয়েছেন! নির্বাচন কমিশনার পদে অরুণের কার্যকালের মেয়াদ ছিল ২০২৭ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত। রাজীবের ইস্তফার পর ২০২৫ সালে অরুণেরই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হওয়ার কথা ছিল।
অনেকেই অবশ্য স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, নির্বাচন কমিশনার হিসাবে অরুণকে নিয়োগের সময়েও বিতর্ক হয়েছিল। পঞ্জাব ক্যাডারের আইএএস আধিকারিক অরুণ কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকের সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু তাঁর আগেই ওই বছরের ১৮ নভেম্বর স্বেচ্ছাবসর নেন অরুণ। অবসর নেওয়ার পরেই তাঁকে অন্যতম নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ করা হয়। অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) নামের একটি সংগঠন এই নিয়োগকে অবৈধ বলে দাবি করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। পরে অবশ্য নির্বাচন কমিশনার পদে প্রাক্তন আমলা অরুণকেই বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সূত্রের দাবি, সরকারের তরফে চেষ্টা করা হয়েছিল যাতে অরুণ পদত্যাগ না করেন। কিন্তু তিনি এক রকম জোর করেই পদত্যাগ করেছেন। শীঘ্রই শূন্যপদে নিয়োগ করা হবে বলে দাবি করেছে ওই সরকারি সূত্রটি।