Lok Sabha Election 2024

গুজরাতি বাবুর্চি থেকে দোভাষী! বহরমপুরে প্রার্থী পাঠানের জন্য ‘বাড়তি’ ব্যবস্থা রাখছে তৃণমূল

তৃণমূল সূত্রে খবর, ইউসুফ বহরমপুরে আসার পর কোথায় উঠবেন, ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোথায় থাকবেন, সে বিষয়েও মঙ্গলবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলার দুই নেতাকে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪ ২২:২১
Share:

বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠান। —ফাইল চিত্র ।

ভারতীয় ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। দলীয় সূত্রে খবর, খুব শীঘ্রই নির্বাচনী প্রচারে নামবেন তিনি। সে জন্য ব্যস্ততা তুঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের। হিন্দিভাষী ইউসুফ কী ভাবে বাংলায় প্রচার করবেন এবং কোথায় কোথায় প্রচার করবেন, তা নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ‘রুট ম্যাপ’ও। একই সঙ্গে বাংলার খাবারের সঙ্গে ইউসুফ কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন, সে কথা মাথায় রেখে গুজরাতি রান্নায় পারদর্শী, এমন বাবুর্চিকে বহরমপুরে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলেও তৃণমূল সূত্রে খবর।

Advertisement

লোকসভা ভোটের প্রচারে অলিগলি ছুটে বেড়াতে হয় প্রার্থীদের। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হয় প্রচারের কাজ। তৃণমূলের অন্দরের খবর, ইউসুফকে প্রার্থী করা হলেও বহরমপুর তাঁর একেবারেই অচেনা জায়গা। অল্প সময়ের মধ্যে যাতে তিনি বেশি এলাকায় প্রচার সারতে পারেন, তা নিশ্চিত করতেই আগেভাগে ওই ‘রুট ম্যাপ’ তৈরি করা হচ্ছে। অন্য দিকে, আইপিএলে কলকাতার দলে খেললেও তিনি বাংলা ভাষা এবং খাবারের সঙ্গে সে ভাবে স্বচ্ছন্দ হবেন না বলেই মনে করছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। তাই ইউসুফ এবং আমজনতার মধ্যে যোগাযোগ সমন্বয়ে যাতে ভাষাগত কোনও সমস্যা না তৈরি হয়, তাই বিধানসভাভিত্তিক দোভাষীদের একটি দল গঠন করা হচ্ছে বলেও তৃণমূল সূত্রে খবর। নজর রাখা হচ্ছে তাঁর খাবারদাবারের দিকেও। আর সেই কারণেই গুজরাতি বাবুর্চি আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, এমনই আরও অনেক বিশেষ পরিকল্পনার মাধ্যমে রাজনীতিতে নবাগত ইউসুফের প্রচারে চমক দিতে চাইছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুরের প্রার্থী হিসাবে ইউসুফের নাম ঘোষণার পর থেকেই দলের নির্বাচনী কমিটি প্রার্থীপ্রচার নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোপন বৈঠক সেরেছে। ব্রিগেডের বৈঠক শেষে তৃণমূলের রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্ব জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার (ওরফে ডেভিড)-কে বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। সেই মোতাবেক, জেলার কোর কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বহরমপুর কেন্দ্রে প্রচার কৌশল নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক সেরে নিয়েছেন জেলা সভাপতি।

Advertisement

সূত্রের খবর, ইউসুফ বহরমপুরে আসার পর কোথায় উঠবেন, ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোথায় থাকবেন, সে বিষয়েও মঙ্গলবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলার দুই নেতাকে। জেলার এক বিধায়কের পরামর্শ মতো, প্রতি বিধানসভা এলাকায় যুব তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের নিয়ে একটি দোভাষী দল গঠন করা হচ্ছে। এদের কাজ হবে ইউসুফের সঙ্গে আমজনতার কথোপকথনে সাহায্য করা। ইউসুফের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর খাবারদাবারের জন্য গুজরাতি বাবুর্চি আনার অনুরোধ করা হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বের পক্ষ থেকে। বিরোধীরা যাতে কোন মতেই তৃণমূল প্রার্থীর গায়ে ‘বহিরাগত’ তকমা না লাগাতে পারে, তাই এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে তৃণমূলের অন্দরের খবর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান নেতা জানিয়েছেন, গুজরাতের মানুষ নিশ্চয়ই বাঙালিদের মতো মাছের ঝোলভাতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ হবেন না। তাই বাবুর্চি আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ইউসুফের থাকার জন্যও জায়গা দেখা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব বলেন, ‘‘সারা পৃথিবীতে পরিচিত ইউসুফ পাঠান। তাই তাঁর নতুন করে প্রচারের প্রয়োজন নেই। তবে ভাষাগত সমস্যা যাতে না হয়, সে জন্য আমাদের কর্মীরা থাকবেন। থাকার জন্য একটি ঘর দেখা হচ্ছে। তাঁর খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারেও আমাদের নজর রয়েছে।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুর্শিদাবাদ জেলার এক বিধায়কের কথায়, ‘‘আমরা তো ওঁর কথা সে ভাবে বুঝব না। সাধারণ মানুষের কাছেও তাঁর কথা পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজন। তাই দোভাষী দরকার। দোভাষীদের একটি দল গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’’

আগের লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর কেন্দ্র থেকে হেরে গিয়েছিল শাসকদলের প্রার্থী। জিতেছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী। অধীর বহরমপুরের পাঁচ বারের সাংসদ। রবিবার ইউসুফকে অধীর-গড় বহরমপুরে প্রার্থী করে চমক দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অধীরের ‘দুর্গ’ দখল করতে বাংলার শাসকদল তৃণমূল এমন এক জনকে প্রার্থী করল, ঘটনাচক্রে যিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতের বরোদার বাসিন্দা। ইউসুফের জেতা নিয়ে তৃণমূল আশাবাদী। তাই তাঁর প্রচার নিয়েও জোরকদমে পরিকল্পনা শুরু হয়েছে বলে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর। বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বহরমপুর, বেলডাঙা, নওদা, রেজিনগর, কান্দি, ভরতপুর ও বড়ঞা বিধানসভার আসন পড়ে। প্রতিটি বিধানসভাতেই তিনি প্রচার চালাবেন। তাই তাঁর মনের ভাব জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে কারণেই সে দিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement