TMC on Sandeshkhali

সন্দেশখালিতে যা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কি জানতেন? দিল্লিতে প্রশ্ন তৃণমূলের, প্রশ্ন কমিশনকেও

শনিবারই সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। সেই ভিডিয়ো নিয়েই রবিবার দিল্লিতে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৪ ১৬:৩৭
Share:

গ্রাফিক— সনৎ সিংহ

দিল্লির মাটিতে দাঁড়িতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলল তৃণমূল। সন্দেশখালির ভাইরাল ভিডিয়ো দেখিয়ে তারা জানতে চাইল প্রধানমন্ত্রী মোদী কি আগে থেকেই এ ব্যাপারে জানতেন? সে ক্ষেত্রে ভোটের প্রচারে বাংলায় এসে কি তিনি জেনেশুনে অসত্য ভাষণ করছেন? আর যদি তিনি না জেনে থাকেন, তবে এই ভিডিয়ো দেখার পর কী পদক্ষেপ করবেন তিনি?

Advertisement

শনিবারই সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে। ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। তবে ভিডিয়োয় সন্দেশখালি ২-এর বিজেপি মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালকে বলতে শোনা যায়, সন্দেশখালিতে কোনও ধর্ষণ হয়নি। আন্দোলনের গোটাটাই ‘সাজানো’। আর সেই ‘সাজানো আন্দোলন’ চালিয়ে যেতে তাঁদের সাহায্য করেছেন বাংলার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

যদিও পরে গঙ্গাধর আলাদা একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে দাবি করেন, ওই ভাইরাল ভিডিয়োয় তাঁকে দেখা গেলেও তাঁর স্বর উচ্চমানের প্রযুক্তি দিয়ে বিকৃতি করা হয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের বক্তব্য, তাই যদি হবে তবে এই বক্তব্য সঠিক নয় তা প্রমাণ করে দেখাক বিজেপি। শনিবার বিকেলেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ভিডিয়ো দেখিয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠকে আক্রমণ করেন বিজেপিকে। বলেন, ভোটে জেতার জন্য বাংলার মহিলাদের সম্মান নষ্ট করেছে বিজেপি। পদ্মের দিল্লির নেতাদের উচিত বাংলাকে কলুষিত করার জন্য ক্ষমা চাওয়া। অভিষেকের সেই বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খাস দিল্লিতে শাসক বিজেপির নেতাদের সততা এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলল তৃণমূল।

Advertisement

রবিবার রাজধানী দিল্লিতে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূলের মুখপাত্র তথা মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং তৃণমূলের দুই রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ এবং সাকেত গোখলে। সেখানেই তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি সন্দেশখালির ভিডিয়োকাণ্ডে দেশের নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। শশী বলেন, সন্দেশখালির ওই ভিডিয়োয় স্পষ্ট, মহিলাদের শেখানো হয়েছে ধর্ষণের অভিযোগ কী করে বলত হবে। কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁদের বিপথে চালিত করা হয়েছে। আর দিল্লি থেকে নেতারা এসে বাংলার বদনাম করেছেন। এই প্রসঙ্গেই সাগরিকা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমাদের মনে হচ্ছে এর সঙ্গে জাতীয় বিজেপি নেতারাও জড়িত। প্রধানমন্ত্রী নিজে গিয়ে সন্দেশখালি নিয়ে কথা বলেছেন। উনি কি জানতেন সন্দেশখালিতে আসলে কী হয়েছে? তা হলে কি প্রধানমন্ত্রী জেনেই মিথ্যা কথা বলেছেন?’’ আর যদি উনি না জেনে এই আক্রমণ করে থাকেন, তবে তৃণমূলের প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রে যাঁরা এই মিথ্যা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত, সেই বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে তিনি কী পদক্ষেপ করবেন?

তৃণমূল একই সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও। সাকেত প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘সন্দেশখালি নিয়ে গোটা দেশে ঢিঢি পড়ে গিয়েছিল। রোজ সেখানে কেন্দ্রীয় নানা কমিশন গিয়েছে। মানবাধিকার কমিশন থেকে শুরু করে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার কমিশন, জাতীয় মহিলা কমিশনও। ভোটের সময় বাংলার নানা ঘটনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনও সক্রিয়। অথচ এই ভিডিয়ো প্রকাশিত হওয়ার পরে ১৮ ঘণ্টা কেটে গেল, কমিশন কোনও পদক্ষেপ করেছে কি? না করলে কেন পদক্ষেপ করা হয়নি? সন্দেশখালির ঘটনা কি ভোটকে প্রভাবিত করেনি?’’

দিল্লির মাটি থেকে কেন্দ্রীয় শাসকদলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে তৃণমূল বলেছে, কর্নাটকে বিজেপির জোট সঙ্গী জনতা দল সেকুলারের সাংসদ প্রজ্বল রেভান্নার বিরুদ্ধে যৌননিগ্রহের অজস্র অভিযোগ সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। বিজেপির সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে মহিলাদের নিগ্রহের পাশাপাশি পকসো ধারাতেও মামলা রয়েছে। তার পরও তাঁরই পুত্রকে লোকসভার টিকিট দিয়েছে বিজেপি। বাংলায় রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী সে দিন গিয়ে তাঁর বাসভবনে থেকে এসেছেন, অথচ শ্লীলতাহানির ঘটনা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। অথচ সন্দেশখালি নিয়ে কথা বলে গিয়েছেন। এ তো দেখা যাচ্ছে সমস্ত নারীবিরোধী নারীদের নির্যাতনকারীরা একটিই পার্টির সদস্য— বিজেপি। আসলে বিজেপি মহিলাদের নিয়ে যত স্লোগান দেয়, সে সবই সারবত্তাহীন প্রতিশ্রুতি। কার্যক্ষেত্রে বিজেপি নারীবিরোধী। আর সে জন্যই যে বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের ক্ষমতায়নের কাজ করছেন, সেখানে সেই জোরের জায়গাটিতে আঘাত করতে চাইছে তারা।

তৃণমূলের বক্তব্য, ভোটের জন্য সব করতে পারে বিজেপি। তার জন্য ধর্ষণের আইনকেও পরিহাস বানিয়ে রেখে দিয়েছে তারা। এমন জায়গায় নিয়ে এসেছে যে, এর পরে কোনও মহিলা থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করতে এলে তাঁকে বিশ্বাসই করবেন না কর্তব্যরত থানার অফিসারেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement