—প্রতীকী ছবি।
নিজেরা দলবদলে এগিয়ে থেকেও তা ঠেকাতেই সংবিধান সংশোধন চায় তৃণমূল কংগ্রেস। লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রে ক্ষমতার শরিক হলে এই বদলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। এ নিয়ে অবশ্য তৃণমূলকেই পাল্টা কটাক্ষ করেছে সিপিএম ও বিজেপি।
এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর দলবদলে অগ্রবর্তী হয়ে ওঠে তৃণমূল। ২০১১ সাল থেকেই ক্ষমতাচ্যুত বাম, বিরোধী কংগ্রেস এবং বিজেপি ছেড়ে নেতাকর্মীদের মতো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বড় সংখ্যায়। গত ১২ বছরে সেই তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হয়ে চললেও এ বার লোকসভা নির্বাচনের আগে তা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে শাসকদল। দলের নির্বাচনী ইস্তাহার ‘দিদির শপথ’-এ বলা হয়েছে, ‘দলত্যাগ বিরোধী আইনের বিধানগুলি আরও সুস্পষ্ট এবং তাৎক্ষণিক ভাবে কাযর্কর করে তুলতে আমরা দশম তফসিল সংশোধন করব।’ তৃণমূল অবশ্য একাধিক রাজ্যে দলবদলের মধ্যে দিয়ে সরকার বদলের ঘটনার উল্লেখ করেই সংবিধান সংশোধনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
এ রাজ্যে অবশ্য সরকারে থেকেই অন্য দলের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়েছে তৃণমূল। সরকার বদলের পরিস্থিতি ছিল না, বা এখানে বিষয়টি এ ভাবে প্রাসঙ্গিক না হলেও বিরোধী শিবির ভাঙানো নিয়ে বারবার আঙুল উঠেছে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে। বিরোধীরা তো বটেই বিভিন্ন সময় শাসকদলের অন্দরেও এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিন বার যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গড়ার পরেও বিরোধী বিধায়কদের দলে নেওয়ার ঘটনাকে দলের তরফে অবশ্য ‘উন্নয়নের অনুপ্রেরণা’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বিধানসভায়ও আগেও পাঁচ বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে দলত্যাগের অভিযোগ ছিল। লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ায় বিজেপির তিন জন বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েছেন।
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, স্বাধীন ভারতের রাজনীতির সবচেয়ে বড় তামাশা তৃণমূলের এই বক্তব্য। দুর্নীতিতে অর্ধেক দলটা জেলে। আর এই আইন চালু হলে বাকি দলটাই তো থাকবে না। কারণ তৃণমূল তো দলছুটদের দল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিটি বক্তব্যে, প্রতিটি অবস্থানে এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে তৃণমূল দলটা বিলুপ্তির পথে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূল এ কথা বলছে শুনলে ঘোড়াও হাসবে। এ রাজ্যে পঞ্চায়েত থেকে সংসদ পর্যন্ত সর্বত্র লোভ আর ভয় দেখিয়ে দল ভাঙিয়েছে তৃণমূলই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমাদেরই এক বিধায়ক তৃণমূলের যাওয়ার পর ২৫ বার শুনানিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর সাজা হয়নি।’’
এ রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধেও দল ভাঙানোর এই অভিযোগ উঠেছে বারবার। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের সাংসদ, বিধায়কদের দলবদল রাজ্যের রাজনীতিতে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছিল। তাঁদের অনেকে পদত্যাগ করে দলবদল করে আইন বাঁচালেও নৈতিক প্রশ্নের মুখে পড়েছিল দেশের শাসকদলও। শুধু তাই নয়, এ রাজ্যের বাইরে দল ভাঙিয়ে সরকার গড়ার একাধিক অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।