বীরভূমের দুই কেন্দ্রে ‘চমক’ নেই তৃণমূলে
Lok Sabha Election 2024

‘পুরনো চালে’ ভরসা, প্রার্থী শতাব্দী-অসিতই

বিগ্রেডের জনগর্জন সভামঞ্চ থেকে যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৪২টি আসনের তৃণমূল প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারেন সেই জল্পনা ছিল।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪ ০৮:১৮
Share:

প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরই দেওয়াল লিখন শুরু। নিজস্ব চিত্র।

কোনও চমক নেই। যেন ‘নিরুত্তাপ’ ভোট বীরভূমে! রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে জেলার দুই আসনের প্রার্থীর নাম জানার পর এই কথাই ঘুরছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মুখে। তাঁরা বলছেন, ‘পুরনো চালে’ই আস্থা রাখলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

বস্তুত, কোনও চমক বা পরীক্ষা নিরীক্ষা নয়। প্রত্যাশা মতোই বীরভূম কেন্দ্রে টানা চতুর্থবারের জন্য শতাব্দী রায় এবং বোলপুর কেন্দ্রের জন্য দ্বিতীয়বারের জন্য অসিত মালকেই প্রার্থী করার কথা ঘোষণা করেন তৃণমূলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবারই শতাব্দী ও অসিতের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনার কথা প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকায়।

এ দিন বিগ্রেডের জনগর্জন সভামঞ্চ থেকে যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৪২টি আসনের তৃণমূল প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারেন সেই জল্পনা ছিল। তা সত্যি হওয়ার পর, বীরভূমের দুই আসনে প্রার্থী অপরিবর্তিত। তবে পরিবর্তন একটাই। গত বার লোকসভা নির্বাচনে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল উপস্থিত ও সক্রিয় ছিলেন। এ বার তিনি জেলবন্দি। যদিও অনুব্রত ছাড়া এক বার ভোট করানোয় তাঁরা পরীক্ষিত বলে জানাচ্ছেন শাসক দলের নেতারা।

Advertisement

গত বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে শাসক দল এই দুই কেন্দ্রেই এগিয়ে ছিল। তবে বিরোধীদের দাবি, লড়াই হবে এবং শাসক দলের বিপক্ষেই রায় দেবেন মানুষ। তবে জেলার দু’টি লোকসভা আসনে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল। আত্মবিশ্বাসী দুই প্রার্থীও। তাঁদের নাম ঘোষণার পরেই রবিবার থেকেই দেওয়াল লিখন শুরু হয়েছে জেলার নানা জায়গায়।

দলনেত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন দুই প্রার্থীই। শতাব্দী বলছেন, ‘‘জেলার মানুষ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থা রয়েছে। ভাল ফল হবে। বিরোধীরা ফ্যাক্টর নয়।’’ অসিত বলছেন, ‘‘লড়াইয়ের একটাই বিষয়— কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা বিরুদ্ধে ও উন্নয়নের পক্ষে। ফিরেই প্রচার শুরু করব।’’ তবে সোমবার বীরভূমে এলেও প্রচার তিনি ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরই শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন শতাব্দী।

বীরভূমের দু’টি লোকসভা আসনের মধ্যে বোলপুর কেন্দ্রে ইতিমধ্যেই পিয়া সাহাকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি। পিয়া প্রচারও শুরু করেছেন। তবে জেলার আরেকটি লোকসভা আসন, বীরভূমে বিজেপির তরফে কে প্রার্থী হবেন সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। বাম-কংগ্রেস জোটের ভবিষ্যৎ কী, তাও স্পষ্ট নয় অন্তত রবিবার পর্যন্ত। এই প্রেক্ষিতে পোড়খাওয়া দুই প্রার্থীর উপর শীর্ষ নেতৃত্ব আবার ভরসা রাখায় আত্মবিশ্বাসী জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এক নেতা বললেন, ‘‘কেষ্টদার (অনুব্রত) অবর্তমানে যাঁদের ওই কেন্দ্রগুলি থেকে জেতার অভিজ্ঞতা রয়েছে, জনভিত্তি রয়েছে, তাঁদের উপরে আস্থা রাখাই স্বাভাবিক ছিল।’’

ঘটনা হয়, ১৫ বছর আগে বীরভূমের লাল দূর্গে ‘বহিরাগত প্রার্থী’ হিসেবে ঘাসফুল ফুটিয়ে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন শতাব্দী রায়। তার পর থেকে প্রতি বার নিজের ব্যবধান বাড়িয়ে গিয়েছেন ওই তারকা তৃণমূল প্রার্থী। গতবার বিজেপির দুধকুমার মণ্ডলকে প্রায় ৮৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। এ বারের প্রেক্ষিত ভিন্ন। অনুব্রতহীন বীরভূমে শতাব্দী তারকা ইমেজ দূরে সরিয়ে শহরে ও গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসছিলেন শতাব্দী।

তৃণমূল সূত্রে দাবি, সংগঠনে খামতি দেখলে কড়া অবস্থানের কথাও জানিয়েছিলেন শতাব্দী। তখন স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও হয়েছিল। তৃণমূল সূত্রে দাবি, শহর ও ব্লকের নেতাদের একাংশ উপরতলায় আর্জি জানিয়েছিলেন, টানা তিন বার শতাব্দী থাকায় এ বার ওই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করায়। যদিও সেই আর্জি যে মান্যতা পায়নি তা রবিবারই স্পষ্ট হয়ে যায়।

অন্য দিকে, অসিত মাল গতবার বোলপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী রামপ্রসাদ দাসকে ১ লক্ষেরও বেশি ভোটে হারিয়ে জয় পেয়েছিলেন। তবে ওই কেন্দ্রে অন্য দু’জনকে প্রার্থী করার একটা চেষ্টা চলছিল বলে তৃণমূল সূত্রে দাবি। তাঁদের একজন বর্তমান বিধায়ক, অন্য জন প্রাক্তন বিধায়ক। তবে ভাবমূর্তি, দলের প্রতি অনুগত্যের নিরিখে যে অসিত এগিয়ে ছিলেন তাও মানছিলেন জেলা তৃণমূল নেতারা। সেটাই মান্যতা পেয়েছে বলে দলের কর্মীদের মত।

তৃণমূলের দুই প্রার্থীই একাধিক বার জিতলেও এ বারে তাঁরা দু’জনেই হারবেন বলে দাবি বিরোধীদের। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলছেন, ‘‘বীরভূম আসনে আমাদের প্রার্থী ঘোষণা হল বলে। বিজেপি জিতবে, তৃণমূল হারবে। কারণ শাসক দলের সাংসদের দেখা সারা বছর পাওয়া যায় না।’’ দলের বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলছেন, ‘‘আগে কী হয়েছে সেটা ভেবে লাভ নেই। এটা কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের ভোট। মোদী ও বিকশিত ভারতের স্বপ্ন সামনে রেখেই ভোট হচ্ছে। আমরা জিতব।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলছেন, ‘‘শতাব্দী রায় শেষ দিকে কিছু কাজ করেছেন। দু’মাস খাটছেন। তবে বোলপুর আসনটা মনে হচ্ছে কাউকে উপহার দেওয়া হচ্ছে। কারণ অসিত মাল কোনওদিন এলাকায় যাননি। আমার ধারণা তৃণমূলের ক্ষয় হবে। তবে সেটা কাদের পক্ষে যাবে, তার কতটা আমরা সাংগঠনিক ভাবে আনতে পারব তার উপর নির্ভর করছে।’’ বাম-কংগ্রেসের জোট হবে বলে জানিয়ে কংগ্রেস জেলা সভাপতি মিল্টন রশিদ বলেন, ‘‘আমাদের জোট হবে এবং তৃণমূল-বিজেপি ছেড়ে আমাদের পক্ষেই মত দেবেন মানুষ।’’

তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী অবশ্য জয় নিয়ে নিশ্চিত। তিনি বলছেন, ‘‘গত বারের থেকে কত বেশি ব্যবধান বাড়ানো যায় সেটাই ভাবছি। বিরোধী নিয়ে ভাবছি না। কারণ সারা বছর ওঁরা মানুষের পাশে থাকেন না। কেবল ভোটের সময় ভোট চাইতে গেলে ভোট পাওয়া যায়না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement